সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জিন-ভূতের বিশ্বাস!

– তুই কি জিন-ভূত বিশ্বাস করিস?

: না

– কি বলিস? জিনের কথা তো কোর'আনেও আছে। ভূতকে বিশ্বাস না করলেও চলবে, কিন্তু জিনকে তো বিশ্বাস করতে হবে।

: হুম। কোর'আনে তো ইবলিস, ফিরাউন ও আবু লাহাব সহ অনেকের কথাই আছে। তাই বলে কি আপনি তাদেরকে বিশ্বাস করবেন?

– না। কিন্তু...

: এখানে কোনো কিন্তু নেই। বিষয়টি একেবারে স্পষ্ট। কোনো কিছুকে বিশ্বাস করা মানে কেবল তাঁর অস্তিত্বে বিশ্বাস করা নয়।

ইসলামে সাতটি বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করতে বলা হয়েছে। আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর গ্রন্থসমূহ, তাঁর রসূলগণ, আখিরাত, আল্লাহর নির্ধারিত ভাগ্য, এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থান। এগুলোকে একত্রে বলা হয় অদৃশ্যে বিশ্বাস।

ইসলামের কোথাও জিনকে বিশ্বাস করতে বলা হয়নি। কিন্তু, জিন আছে বলে কোর’আনে বর্ণনা করা হয়েছে।

তাই, কোনো কিছুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকা এক জিনিস নয়।

যেমন কেউ যদি বলে, “পিন্টুকে আমি বিশ্বাস করি না”। এর মানে এই নয় যে, “পিন্টুর অস্তিত্বকে আমি স্বীকার করি না”। এর মানে হলো, “পিন্টুর কথাকে আমি বিশ্বাস করি না”।

তেমনি কেউ যদি বলে, “আমি আল্লাহকে বিশ্বাস করি”। তার মানে এই নয় যে, “আল্লাহর অস্তিত্বকে আমি বিশ্বাস করি”। এর মানে হলো “আল্লাহর সমস্ত কথাকে আমি শতভাগ বিশ্বাস করি”।

যারা আস্তিক-নাস্তিক বিতর্কে অংশ গ্রহণ করেন, তাঁরা আসলে আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে বিতর্কে করেন। এর সাথে আল্লাহকে বিশ্বাস করা বা না করার কোনো সম্পর্ক নেই।
___________
যাই হোক, মূল প্রসঙ্গে আসি।

জিনকে বিশ্বাস করার মানে হলো জিনের কথাকে সত্য বলে বিশ্বাস করা। এবং জিনেরা ইচ্ছা করলে মানুষের ভালো-মন্দ করতে পারে, এমন বিশ্বাস করা। তাই অনেক মানুষ নিজেদের বিভিন্ন কাজে জিনদের থেকে সাহায্য কামনা করে। অনেকে আবার জিনদের ইবাদাতও করে থাকে।

ভারত ও বাংলাদেশের অনেকগুলো চ্যানেলে প্রচুর ভূতের ছবি সম্প্রচারিত হয়। সেখানে দেখানো হয় যে, ভূত মানুষের ভালো-মন্দ, বা উপকার ও ক্ষতি করতে পারে।

আমাদের দেশের শিশুরা এসব দেখে ভূতকে বিশ্বাস করতে শুরু করে। এবং এভাবে শিশুদের মনে মারাত্মকভাবে শিরক প্রবেশ করতে শুরু করে।

শুধু তাই না,

মুসলিমদের মাঝে কিছু ভণ্ড মানুষও জিনের ব্যবসা করেন, এবং তাবিজ-তুমার বিক্রি করেন। এগুলো সবকিছুই প্রকাশ্য শিরক।

এ প্রসঙ্গে কোর’আনের কয়েকটি আয়াত দেখুন।

وَأَنَّهُ كَانَ رِجَالٌ مِّنَ الْإِنسِ يَعُوذُونَ بِرِجَالٍ مِّنَ الْجِنِّ فَزَادُوهُمْ رَهَقًا

“কিছু মানুষ জিনের আশ্রয় গ্রহণ করত, ফলে তারা জিনদের আত্মম্ভরিতা বাড়িয়ে দিত”। [সূরা ৭২/জিন – ৬]

قَالُوا سُبْحَانَكَ أَنتَ وَلِيُّنَا مِن دُونِهِم بَلْ كَانُوا يَعْبُدُونَ الْجِنَّ أَكْثَرُهُم بِهِم مُّؤْمِنُونَ

“ফেরেশতারা বলবে, আপনি পবিত্র, আপনি আমাদের অভিভাবক। কিন্তু তারা আমাদের অভিভাবক নয়, যারা জিনদের পূজা করে। তাদের অধিকাংশই জিনে বিশ্বাসী”। [সূরা ৩৪/সাবা – ৪১]

وَجَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَاءَ الْجِنَّ وَخَلَقَهُمْ وَخَرَقُوا لَهُ بَنِينَ وَبَنَاتٍ بِغَيْرِ عِلْمٍ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ عَمَّا يَصِفُونَ

“তারা জিনদেরকে আল্লাহ সাথে অংশীদার স্থির করে। অথচ তিনিই জিনদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তারা অজ্ঞতাবশত: আল্লাহর জন্যে পুত্র ও কন্যা সাব্যস্ত করে নিয়েছে। তারা যা বলে তা থেকে তিনি পবিত্র ও সমুন্নত”। [সূরা ৬/আন’আম – ১০০]

وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ قَدِ اسْتَكْثَرْتُم مِّنَ الْإِنسِ وَقَالَ أَوْلِيَاؤُهُم مِّنَ الْإِنسِ رَبَّنَا اسْتَمْتَعَ بَعْضُنَا بِبَعْضٍ وَبَلَغْنَا أَجَلَنَا الَّذِي أَجَّلْتَ لَنَا قَالَ النَّارُ مَثْوَاكُمْ خَالِدِينَ فِيهَا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ إِنَّ رَبَّكَ حَكِيمٌ عَلِيمٌ

“যেদিন আল্লাহ সবাইকে একত্রিত করবেন এবং বলবেন, হে জিন সম্প্রদায়, তোমরা তো অনেক মানুষকে তোমাদের অনুগামী করে নিয়েছ। তাদের মানব বন্ধুরা বলবে, “হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা পরস্পরে পরস্পরের মাধ্যমে লাভবান হয়েছি। আপনি আমাদের জন্যে যে সময় নির্ধারণ করেছিলেন, আমরা তাতে উপনীত হয়েছি”। আল্লাহ বলবেন, “আগুন হল তোমাদের বাসস্থান। তথায় তোমরা চিরকাল অবস্থান করবে”। যদি না আল্লাহ অন্য রকম ইচ্ছা করেন। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী। [সূরা ৬/আন’আম – ১২৮]
___________

উপরোক্ত আয়াতগুলোর আলোকে বলা যায়, যারা জিনকে বিশ্বাস করে, জিনদের থেকে সাহায্য কামনা করে, এবং যারা মনে করে, জিনেরা ভালোমন্দ করার ক্ষমতা রাখে, তারা আসলে শিরকে জড়িয়ে পড়ে।

জিন হুজুরদের থেকে এবং ভারতীয় ভূতের ছবিগুলো থেকে আমাদের দূরে থাকা উচিত। ভারতীয় চ্যানেলে ভূতের ছবিগুলো দেখলে একে তো আল্লাহর সাথে শিরক হবে, দ্বিতীয়ত মানসিক অসুস্থ হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ কারণে, আমি জিন বা ভূতে বিশ্বাস করি না।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...