সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বস্তুবাদী বিজ্ঞানের চারটি মিথ

বিজ্ঞানের মোড়কে যেসব বস্তুবাদী চিন্তা সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাকে বলা হয় বস্তুবাদী বিজ্ঞান। গত শতাব্দীতে বস্তুবাদী বিজ্ঞান যেসব অন্ধ বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে ছিল, তা এখন একে একে সব ভেঙ্গে পড়ছে। উদাহরণ স্বরূপ বস্তুবাদী বিজ্ঞানের কিছু মিথ উল্লেখ করছি এখানে।
________

মিথ – ১ । “মহাবিশ্বের সবকিছু বস্তু দ্বারা সৃষ্টি। যা কিছু বস্তু দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব, তা হলো বিজ্ঞান; আর যা কিছু বস্তু দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়, তা বিজ্ঞান নয়।”

বস্তুবাদী বিজ্ঞানের উপরোক্ত তত্ত্বটি এখন ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। ডার্ক এনার্জি ও ডার্ক মেটার আবিষ্কার হওয়ার পর বস্তুবাদী বিজ্ঞানের এই অন্ধ বিশ্বাসকে অস্বীকার করা ছাড়া কোয়ান্টাম বিজ্ঞানের আর কোনো ভিন্ন উপায় নেই।
________



মিথ – ২ । “আবেগ, অনুভূতি, দয়া ও ভালোবাসা এগুলো মানুষের মস্তিষ্কে উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ, মানুষ হলো একটি বায়োলজিক্যাল রোবট।”
...
কিন্তু সম্প্রতি চিকিৎসা বিজ্ঞানে ‘out of body experience’ বা ‘near death experience’ আবিষ্কার হওয়ার পর বিজ্ঞানকে আজ বিশ্বাস করতে হচ্ছে যে, মানুষের মস্তিষ্ক-ই সব না। মানুষ আসলে তার শরীর ও মস্তিষ্কের বাইরেও অবস্থান করতে পারে।________

মিথ – ৩ । “ধর্ম ও বিজ্ঞানের মাঝে একটি ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব রয়েছে।”
...
অথচ, ইসলামের সাথে কখনো বিজ্ঞানের কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। পৃথিবীর কোনো ইতিহাসবিদ-ই বলতে পারে নি যে, ইসলামের সাথে কখনো বিজ্ঞানের দ্বন্দ্ব হয়েছিল। ইবনে সিনা, জাবির ইবনে হাঈয়ান, আল কিনদি, আল হাইসাম এবং আল ফারাবী মত হাজার হাজার বিজ্ঞানী সবাই ছিলেন ধার্মিক। এছাড়া, খ্রিষ্টান জগতে ফ্রান্সিস বেকন, কোপারনিকাস, গ্যালিলিও, কেপলার, রবার্ট বয়েল এবং নিউটনের মত বড় বড় বিজ্ঞানীরা সবাই ছিলেন ধার্মিক।

খ্রিষ্টান ধর্মের যাজকদের সাথে ধার্মিক বিজ্ঞানীর কিছু দ্বন্দ্ব থাকলেও, ইসলাম ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের ঐতিহাসিক কোনো দ্বন্দ্ব কখনোই ছিল না।
________

মিথ – ৪ । “চিকিৎসা বিজ্ঞান ও ধর্মের মাঝে দ্বন্দ্ব রয়েছে।”
...
আমরা সবাই জানি, পৃথিবীর প্রথম হাসপাতাল তৈরি করেছিলেন মুসলিম ডাক্তারগণ। এর আগে হাসপাতাল নামক কোনো কিছুর অস্তিত্ব পৃথিবীতে ছিল না।

ধর্ম ও চিকিৎসা বিজ্ঞান সবসময় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উদাহরণ স্বরূপ সম্প্রতি বাজারে আসা “Handbook of religion and health” শীর্ষক বইটির কথা উল্লেখ করা যায়। এখানে ৩ হাজার ৩০০ টি বৈজ্ঞানিক গবেষণা উপস্থাপন করে দেখানো হয়েছে যে, ধর্ম ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
________

বস্তুবাদী বিজ্ঞান নিজেকে বিজ্ঞানের একমাত্র সহীহ মাজহাব মনে করে। কিন্তু বিজ্ঞানের অনেকগুলো মাজহাব আছে। সহীহ মাজহাবটি আমাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে।


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মুসলিম চিন্তাবিদ ও মনীষীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা

বিংশ শতাব্দীর মুসলিম চিন্তাবিদদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা ১. আয়াতুল্লাহ খমিনী – (ইরান, ১৯০২ - ১৯৮৯) ২. আল্লামা তাবাতাবাঈ – (ইরান, ১৯০৩ - ১৯৮১) ৩. আবুল আ’লা মওদুদী – (পাকিস্তান, ১৯০৩ - ১৯৭৯) ৪. মালিক বিন নাবী – (আলজেরিয়া, ১৯০৫ - ১৯৭৩) ৫. হাসান আল বান্না – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৪৯) ৬. সাইয়েদ কুতুব – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৬৬) ৭. নুর উদ্দিন তোপচু – (তুরস্ক, ১৯০৯ – ১৯৭৫ ৮. ফজলুর রহমান – (পাকিস্তান, ১৯১৯- ১৯৮৮) ৯. মুর্তাজা মোতাহারী – (ইরান, ১৯২০ - ১৯৭৯) ১০. ইসমাইল রাজি আল ফারুকি - (ফিলিস্তিন, ১৯২১ - ১৯৮৬ ) ১১. আলী আইজাত বেগোভিচ – (বসনিয়া, ১৯২৫ - ২০০৩) ১২. নাজিমুদ্দিন এরবাকান – (তুরস্ক, ১৯২৬ - ২০১১) ১৩. শহীদ মোহাম্মদ বেহেশতী – (ইরান, ১৯২৮ - ১৯৮১) ১৪. নাকিব আল-আত্তাস – (ইন্দোনেশিয়া, ১৯৩১ - ) ১৫. হাসান আত-তুরাবী, (সুদান, ১৯৩২ - ২০১৬) ১৬. আলী শরিয়তি – (ইরান, ১৯৩৩ - ১৯৭৭) ১৭. সেজাই কারাকোচ - (তুরস্ক, ১৯৩৩ - ) ১৮. সাইয়্যেদ হোসাইন নাসর – (ইরান, ১৯৩৩ - ) ১৯. হাসান হানাফি – (মিশর, ১৯৩৫ - ) ২০. আবেদ আল জাবেরি – (মরক্কো, ১৯৩৬ - ২০১০) ২১. রশিদ ঘানুশী – (তিউনিসিয়া, ১৯৪১ - ) ২২. নাসের আবু জায়েদ – (মিশর, ১৯৪৩ - ২০

স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত দুই বিজ্ঞানীর দ্বন্দ্ব

স্টিফেন হকিং এবং মিচিও কাকু দু’জনই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী। বাংলাদেশে স্টিফেন হকিং-এর নামটি অনেক পরিচিত হলেও বিজ্ঞানের জগতে স্টিফেন হকিং-এর চেয়ে মিচিও কাকু-র অবদান অনেক বেশি। মিচিও কাকু হলেন ‘স্ট্রিং তত্ত্বের’ কো-ফাউন্ডার। এ তত্ত্বটি অতীতের বিগ ব্যাং তত্ত্বকে পিছনে ফেলে বর্তমানে বিজ্ঞানে বিপ্লব নিয়ে এসেছে। তাই বিশ্বের কাছে স্টিফেন হকিং এর চেয়ে মিচিও কাকু’র জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় সাধারণত বিজ্ঞানের কোনো বই পাওয়া না গেলেও সেখানে মিচিও কাকু-র বিজ্ঞান বিষয়ক তিনটি বই বেস্টসেলার হয়েছে। অবশ্য, সেই তালিকায় স্টিফেন হকিং-এর একটি বইও নেই। দু’জনেই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী হলেও স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে দু’জনের অবস্থান দুই প্রান্তে।   ১ - ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে তাঁদের বিতর্ক।   স্টিফেন হকিং তাঁর ‘The Grand Design’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে বলেছেন, ‘দর্শন মরে গেছে এবং ধর্ম অকার্যকর হয়ে গেছে, এখন কেবল বিজ্ঞানের যুগ’। তাঁর মতে, সত্য মানেই বিজ্ঞান। ধর্ম ও দর্শনের যাবতীয় সমস্যা বিজ্ঞান দিয়ে সমাধান করা সম্ভব। তাই, ধর্ম ও দর্শন এখন অপ্রয়

সকল জ্ঞান-ই ইসলামের সম্পদ

কোর'আন একটি জ্ঞান, হাদিস একটি জ্ঞান, ফিকাহ একটি জ্ঞান, দর্শন একটি জ্ঞান, এবং বিজ্ঞান একটি জ্ঞান। এদের মাঝে স্তরবিন্যাসে পার্থক্য থাকলেও একটি জ্ঞান কখনো অন্য জ্ঞানের বিরোধী হয় না। আদম (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা প্রথম যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন, তা পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যেই রয়েছে। যে কেউ যে নামেই জ্ঞান চর্চা করুক না কেন, তা আল্লাহর সত্য জ্ঞানের সাথে কখনো বিরোধী হওয়া সম্ভব না। অজ্ঞতার কারণে অনেকেই মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। এবং দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের বৈপরীত্য রয়েছে। নাস্তিকরা মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলুল কোর'আন মনে করেন, কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলে হাদিস মনে করেন, হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। কিছু কিছু ধার্মিক মনে করেন, ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। আধুনিক বস্তুবাদী বিজ্ঞানী মনে করেন, বিজ্ঞানের সাথে ধর্ম ও দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। কিন্তু, আসলে সব জ্ঞান-ই আল্লাহর পক্