সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সমাজ পরিবর্তনের সঠিক নিয়ম

সোশ্যাল মিডিয়ায় বা বাস্তবে আমরা প্রায়ই বলি, “ভাই, এটা করুন, ওটা করবেন না” “এটা করা উচিত, ওটা করা উচিত না”, “এটা হালাল, ওটা হারাম”, ইত্যাদি, ইত্যাদি...। আসলে এতে সমাজের তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না।

তাহলে সমাজের পরিবর্তন হয় কিভাবে?

আমরা যখন ভালো কোনো কাজ করি, তখন আমাদের আশেপাশের মানুষেরা আমাদের ভালো কাজগুলো দেখে তারাও ভালো কাজ করার চেষ্টা করে, এবং এর ফলে সমাজ ভালো হতে শুরু করে। অন্যদিকে, আমরা মুখে যতই ভালো ভালো কথা বলি না কেন, অথবা, ফেইসবুকে যতই ভালো ভালো কথা লিখি না কেন, নিজেরা যদি ভালো কোনো কাজ না করি, তাহলে সমাজ কখনো ভালো হয় না।


এটাই পৃথিবীর নিয়ম।

ধরুন, আপনি যদি একজন বাবা অথবা মা হন, সন্তানকে আপনি যতই বলুন “এটা কর, ওটা করো না”, তারা আপনার কথা শুনবে না। আপনি যা করবেন, আপনার সন্তান তাই অনুসরণ করবে। আপনি যদি সত্য কথা বলেন, তাহলে আপনার সন্তানেরাও সত্য কথা বলবে। আর, আপনি যদি মিথ্যা কথা বলেন, তাহলে আপনার সন্তানকে যতই সত্য কথা বলার উপদেশ দিবেন, সে আপনার কথা শুনবে না। সেও মিথ্যা কথা বলবে।

একইভাবে, একজন ইমাম, স্কলার, পীর, ধর্মীয় নেতা বা ফেইসবুক লেখক হিসাবে আপনি যতই বলুন না কেন, “এটা করুন, ওটা করবেন না”, মানুষ আপনার কথা শুনবে না। মানুষ তাই করবে, যা তারা আপনাকে করতে দেখে।

রাসূল (স)-এর জীবনে ঠিক এমনি একটি ঘটনা ঘটেছিল। হাদিসটি হলো –

“মিসওয়ার ইবনে মাখরামা (রা:) বলেন, (হুদাইবিয়ার) সন্ধিপত্র লেখা শেষ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদেরকে বললেন, “তোমরা উঠ, কুরবানি কর, এবং মাথা কামিয়ে ফেল”। রাবী বলেন, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা তিনবার বলার পরও কেউ উঠলেন না।

সাহাবীদের কাউকে উঠতে না দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সালামা (রা:)-এর কাছে এসে লোকদের এ আচরণের কথা বললেন। উম্মে সালামা (রা:) বললেন, হে আল্লাহর নাবী! আপনি যদি এমনি পছন্দ করেন, তাহলে আপনি বাইরে যান এবং তাদের কারো সাথে কোনো কথা না বলে আপনি আপনার উটটি কুরবানি করুন এবং ক্ষুরকার ডেকে আপনার নিজের মাথা মুড়িয়ে নিন।

এরপর, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে গেলেন এবং কারো সাথে কোনো কথা না বলেই নিজের পশু নিজে কুরবানি দিলেন এবং একজন ক্ষুরকারকে ডেকে নিজের মাথা মুড়িয়ে নিলেন। তা দেখে সাহাবীগণ উঠে দাঁড়ালেন, সবাই নিজ নিজ পশু কুরবানি দিলেন এবং একে অপরের মাথা কামিয়ে দিলেন। অবস্থা এমন হল যে, ভিড়ের কারণে একে অপরের উপর পড়তে লাগলেন।”

[সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৭৩১]

দেখুন, তিনি আল্লাহর রাসূল হওয়া সত্ত্বেও এবং একটি কথা তিনবার বলার পরেও সাহাবীগণ তাঁর কথা শুনতে চাননি। কিন্তু পরে তিনি নিজেই যখন কাজটি করলেন, তখন সাহাবিদের আর কাউকে কিছু বলতে হয়নি, সবাই নিজ থেকেই কাজটি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

এটাই হলো সমাজ পরিবর্তনের পদ্ধতি। সকল কাজ আগে নিজেই শুরু করতে হয়।

এ কারণেই আল্লাহ তায়ালা সূরা ৬১. সাফ, ২ নং আয়াতে বলেন –

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ

“হে মুমিনগণ! তোমরা যা কর না, তা কেন বল?”

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মুসলিম চিন্তাবিদ ও মনীষীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা

বিংশ শতাব্দীর মুসলিম চিন্তাবিদদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা ১. আয়াতুল্লাহ খমিনী – (ইরান, ১৯০২ - ১৯৮৯) ২. আল্লামা তাবাতাবাঈ – (ইরান, ১৯০৩ - ১৯৮১) ৩. আবুল আ’লা মওদুদী – (পাকিস্তান, ১৯০৩ - ১৯৭৯) ৪. মালিক বিন নাবী – (আলজেরিয়া, ১৯০৫ - ১৯৭৩) ৫. হাসান আল বান্না – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৪৯) ৬. সাইয়েদ কুতুব – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৬৬) ৭. নুর উদ্দিন তোপচু – (তুরস্ক, ১৯০৯ – ১৯৭৫ ৮. ফজলুর রহমান – (পাকিস্তান, ১৯১৯- ১৯৮৮) ৯. মুর্তাজা মোতাহারী – (ইরান, ১৯২০ - ১৯৭৯) ১০. ইসমাইল রাজি আল ফারুকি - (ফিলিস্তিন, ১৯২১ - ১৯৮৬ ) ১১. আলী আইজাত বেগোভিচ – (বসনিয়া, ১৯২৫ - ২০০৩) ১২. নাজিমুদ্দিন এরবাকান – (তুরস্ক, ১৯২৬ - ২০১১) ১৩. শহীদ মোহাম্মদ বেহেশতী – (ইরান, ১৯২৮ - ১৯৮১) ১৪. নাকিব আল-আত্তাস – (ইন্দোনেশিয়া, ১৯৩১ - ) ১৫. হাসান আত-তুরাবী, (সুদান, ১৯৩২ - ২০১৬) ১৬. আলী শরিয়তি – (ইরান, ১৯৩৩ - ১৯৭৭) ১৭. সেজাই কারাকোচ - (তুরস্ক, ১৯৩৩ - ) ১৮. সাইয়্যেদ হোসাইন নাসর – (ইরান, ১৯৩৩ - ) ১৯. হাসান হানাফি – (মিশর, ১৯৩৫ - ) ২০. আবেদ আল জাবেরি – (মরক্কো, ১৯৩৬ - ২০১০) ২১. রশিদ ঘানুশী – (তিউনিসিয়া, ১৯৪১ - ) ২২. নাসের আবু জায়েদ – (মিশর, ১৯৪৩ - ২০

স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত দুই বিজ্ঞানীর দ্বন্দ্ব

স্টিফেন হকিং এবং মিচিও কাকু দু’জনই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী। বাংলাদেশে স্টিফেন হকিং-এর নামটি অনেক পরিচিত হলেও বিজ্ঞানের জগতে স্টিফেন হকিং-এর চেয়ে মিচিও কাকু-র অবদান অনেক বেশি। মিচিও কাকু হলেন ‘স্ট্রিং তত্ত্বের’ কো-ফাউন্ডার। এ তত্ত্বটি অতীতের বিগ ব্যাং তত্ত্বকে পিছনে ফেলে বর্তমানে বিজ্ঞানে বিপ্লব নিয়ে এসেছে। তাই বিশ্বের কাছে স্টিফেন হকিং এর চেয়ে মিচিও কাকু’র জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় সাধারণত বিজ্ঞানের কোনো বই পাওয়া না গেলেও সেখানে মিচিও কাকু-র বিজ্ঞান বিষয়ক তিনটি বই বেস্টসেলার হয়েছে। অবশ্য, সেই তালিকায় স্টিফেন হকিং-এর একটি বইও নেই। দু’জনেই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী হলেও স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে দু’জনের অবস্থান দুই প্রান্তে।   ১ - ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে তাঁদের বিতর্ক।   স্টিফেন হকিং তাঁর ‘The Grand Design’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে বলেছেন, ‘দর্শন মরে গেছে এবং ধর্ম অকার্যকর হয়ে গেছে, এখন কেবল বিজ্ঞানের যুগ’। তাঁর মতে, সত্য মানেই বিজ্ঞান। ধর্ম ও দর্শনের যাবতীয় সমস্যা বিজ্ঞান দিয়ে সমাধান করা সম্ভব। তাই, ধর্ম ও দর্শন এখন অপ্রয়

সকল জ্ঞান-ই ইসলামের সম্পদ

কোর'আন একটি জ্ঞান, হাদিস একটি জ্ঞান, ফিকাহ একটি জ্ঞান, দর্শন একটি জ্ঞান, এবং বিজ্ঞান একটি জ্ঞান। এদের মাঝে স্তরবিন্যাসে পার্থক্য থাকলেও একটি জ্ঞান কখনো অন্য জ্ঞানের বিরোধী হয় না। আদম (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা প্রথম যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন, তা পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যেই রয়েছে। যে কেউ যে নামেই জ্ঞান চর্চা করুক না কেন, তা আল্লাহর সত্য জ্ঞানের সাথে কখনো বিরোধী হওয়া সম্ভব না। অজ্ঞতার কারণে অনেকেই মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। এবং দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের বৈপরীত্য রয়েছে। নাস্তিকরা মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলুল কোর'আন মনে করেন, কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলে হাদিস মনে করেন, হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। কিছু কিছু ধার্মিক মনে করেন, ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। আধুনিক বস্তুবাদী বিজ্ঞানী মনে করেন, বিজ্ঞানের সাথে ধর্ম ও দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। কিন্তু, আসলে সব জ্ঞান-ই আল্লাহর পক্