সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করেছে?

অবিশ্বাসীগন বলেন, “স্রষ্টা মানুষকে সৃষ্টি করেনি, বরং মানুষ-ই স্রষ্টাকে সৃষ্টি করেছে।”

হুম। তাদের কথা ঠিক। মানুষ অসংখ্য ঈশ্বরকে সৃষ্টি করেছে।

যেমন, কেউ কৃষ্ণকে ঈশ্বর বানিয়ে পূজা করে। কেউ গৌতম বুদ্ধকে মহাজাগতিক স্রষ্টা ভেবে পূজা করে। কেউ ঈসা (আ)-কে আল্লাহর পুত্র বলে পূজা করে। কেউ আধুনিক বিজ্ঞানের পূজা করে। কেউ সম্পদের পূজা করে। কেউ জ্ঞানের পূজা করে। কেউ ভাস্কর্যের পূজা করে। কেউ শহীদদের স্তম্বকে পূজা করে।


মানুষ এভাবে ইতিহাসে অসংখ্য স্রষ্টাকে সৃষ্টি করেছে এবং তার পূজা করছে। তাই, অবিশ্বাসীদের কথা কিছুটা ঠিক।

তবে, মানুষ যে-সকল স্রষ্টাকে সৃষ্টি করতে পারে, আমরা তাদের ইবাদাত করি না। আবার, আমরা যে স্রষ্টার ইবাদত করি, মানুষ তাঁকে সৃষ্টি করতে পারে না।

পার্থক্যটি এখানে সুস্পষ্ট।

আল্লাহ তায়ালা রাসূল (স)-কে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, অবিশ্বাসীদের আপনি বলে দিন -

لَآ أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ وَلَآ أَنتُمْ عَـٰبِدُونَ مَآ أَعْبُدُ

“তোমরা যার ইবাদাত কর, আমি তাদের ইবাদাত করি না। আমি যার ইবাদাত করি, তোমরা তার ইবাদাত কর না”। [সূরা ১০৯/কাফিরুন- ২,৩]

সুতরাং, অবিশ্বাসীরা রাতদিন যে স্রষ্টা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করে আমরা সেই স্রষ্টাকে বিশ্বাস করি না এবং তার ইবাদাতও করি না।

এ কথাটি অবিশ্বাসীদের সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া দরকার।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...