সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাংলা ভাষা মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা

বাংলা ভাষা কি মুসলিমদের না ধর্ম-বিদ্বেষী সেক্যুলারদের?

পৃথিবীর সব ভাষাই আল্লাহ তায়ালার। কিন্তু একেক ভাষা একেক জাতীর অধিকারে থাকে। সে হিসাবে বাংলা ভাষা মুসলিমদের অধিকারভুক্ত একটি ভাষা, এখানে ধর্ম-বিদ্বেষী সেক্যুলারদের তেমন কোনো স্থান নেই।

‘স্থান নেই’ মানে হলো, বাংলা ভাষা ধর্ম-বিদ্বেষী সেক্যুলারদের অধিকারভুক্ত নয়।


একটু ব্যাখ্যা করে বলি।

সেক্যুলারদের জন্ম হলো ফ্রান্সে। সে হিসাবে ফরাসী ভাষা হলো ধর্ম-বিদ্বেষী সেক্যুলারদের প্রধান ভাষা। সেক্যুলারদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা হলো চীনা ভাষা।

অন্যদিকে, ইব্রাহীম (আ)-এর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ইসলাম ধর্মের উৎপত্তি হয় মক্কায়। সে হিসাবে আরবি ভাষা হলো মুসলিমদের প্রধান ভাষা। কিন্তু মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা হলো বাংলা ভাষা। তাই, বাংলা ভাষা হলো কেবল মুসলিমদের-ই অধিকারভুক্ত একটি ভাষা।

প্রশ্ন করতে পারেন, বাংলা ভাষা মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা হলো কিভাবে?

হিসাবটা একেবারে সহজ।

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মুসলিম বাস করে ইন্দোনেশিয়ায়। প্রায় ২০৫ মিলিয়ন মুসলিম। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ায় ৩০০ এর অধিক ভাষা রয়েছে। ফলে, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় ভাষায় কথা বলে মাত্র ৪৩ মিলিয়ন লোক।

এরপর সবচেয়ে বেশি মুসলিম আছে পাকিস্তানে। প্রায় ১৭৮ মিলিয়ন মুসলিম। কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা উর্দুতে কথা বলে মাত্র ৮% বা ১৫ মিলিয়ন মুসলিম। পাকিস্তানে পাঞ্জাবি ভাষায় কথা বলে ৭৮ মিলিয়ন মুসলিম, পশতু ভাষায় কথা বলে ২৭ মিলিয়ন মুসলিম এবং সিন্ধি ভাষায় কথা বলে ২২ মিলিয়ন মানুষ।

তারপর ভারত। সংখ্যার দিক থেকে এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ। প্রায় ১৭২ মিলিয়ন মুসলিম আছে সেখানে। অধিকাংশ মুসলিম কাশ্মীরে, পশ্চিমবঙ্গে ও আসামে বসবাস করে। কাশ্মীরের মুসলিমরা কাশ্মীরি ভাষায় কথা বলে। আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সকল মুসলমান বাংলা ভাষায় কথা বলে।

এবার আসুন বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশে। বাংলাদেশে অবাঙালি, অমুসলিম ও ধর্ম-বিদ্বেষী সেক্যুলারদের বাদ দিয়ে মুসলমানের সংখ্যা হলো ১৪৬ মিলিয়ন। আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী মুসলিমদের যুক্ত করলে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ১৮০ মিলিয়নের মত।

এবার আসুন দেখি, আরবি ভাষায় কতজন মুসলিম কথা বলে?

মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কিছু দেশ মিলে মোট ২৮ টি দেশের রাষ্ট্রীয় ভাষা আরবি। সকল দেশ মিলিয়ে মাত্র ২৯০ মিলিয়ন মানুষ আরবিতে কথা বলে। এদের মধ্যে মিশর ও সিরিয়ার অমুসলিমদেরকে বাদ দিলে ২৭৫ মিলিয়ন মুসলিমের ভাষা আরবি।

অর্থাৎ, মুসলিমদের মাতৃভাষার বিবেচনায় আরবি ভাষার পরেই বাংলা ভাষার স্থান। তাই, বাংলা ভাষাকে মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষা হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

এ কারণে বলেছিলাম, বাংলা ভাষা মুসলিমদের অধিকারভুক্ত ভাষা। এখানে ধর্ম বিদ্বেষী সেক্যুলারদের স্থান বাংলা ভাষায় নেই।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...