সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ডিভাইন সিক্রেট বা সত্য লাভ করার উপায়।

গৌতম ছিলেন বিশাল ধন-সম্পদ ও অট্টালিকার মালিক। কিন্তু, তিনি তার সম্পদ দিয়ে সত্য খুঁজে পাননি। তাই চলে গেলেন বাগানে, ‘বোধি’ গাছের নিছে। সত্য পেয়ে ফিরে আসলেন ‘গৌতম বুদ্ধ’ হয়ে। আর, ঐ বোধি গাছটির নাম হয়ে গেল – ‘জ্ঞানের গাছ’।

নিউটন ছিলেন বিশাল লাইব্রেরী ও জ্ঞানের মালিক। কিন্তু, তিনি তার জ্ঞান দিয়ে সত্য খুঁজে পাননি। তাই চলে গেলেন বাগানে, ‘আপেল’ গাছের নিছে। সত্য পেয়ে ফিরে আসলেন ‘বিজ্ঞানী নিউটন’ হয়ে। আর, ঐ আপেল গাছটি হয়ে গেল – ‘বিজ্ঞানের প্রতীক’।

বোধি গাছ বা আপেল গাছ, সবি আল্লাহর নিদর্শন। সত্য পেতে হলে আল্লাহ তায়ালার এসব নিদর্শনের কাছাকাছি যেতে হয়, এবং তাকে ভালোভাবে বুঝতে হয়। কেবল অর্থ-সম্পদ ও জ্ঞানের উপর ভর করে সত্য পাওয়া যায় না।


প্রশ্ন হলো, আমরা কিভাবে আল্লাহর নিদর্শনগুলো বুঝতে পারব?

দুই ভাবে।

এক – সরাসরি কোর’আন থেকে আল্লাহর নিদর্শনাবলী গবেষণা করার মাধ্যমে। যেমন আল্লাহ বলেছেন -

المر تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ وَالَّذِي أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ الْحَقُّ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يُؤْمِنُونَ

"আলিফ-লাম-মীম-রা। এগুলো কোর’আনের আয়াত বা নিদর্শন। তোমার পালনকর্তার পক্ষ থেকে যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, তা সত্য। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এতে বিশ্বাস করে না।" [সূরা ১৩/রাদ – ১]

দুই – এই পৃথিবীতে ও মহাবিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শনাবলী সরাসরি গবেষণা করার মাধ্যমে।

وَفِي الْأَرْضِ آيَاتٌ لِّلْمُوقِنِينَ

“বিশ্বাসকারীদের জন্যে পৃথিবীতে নিদর্শনাবলী রয়েছে।” [সূরা ৫১/যারিয়াত – ২০]

তবে, শর্ত হলো বিশ্বাস থাকতে হবে। অবিশ্বাসীরা আল্লাহর কোর’আন পড়লেও যেমন মহাসত্য উপলব্ধি করতে পারে না, ঠিক একইভাবে তারা এ মহাবিশ্বের নিদর্শনাবলী থেকেও কোনো ধরণের ‘ডিভাইন সিক্রেট’ আবিষ্কার করতে পারে না।

গৌতম ও নিউটন উভয়ে মহাবিশ্বকে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করে আল্লাহর ‘ডিভাইন সিক্রেট’ বা সত্য লাভ করতে পেরেছিলেন। কারণ, তারা উভয়ে ছিলেন বিশ্বাসী।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...