সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রমজানে চাই রোবট ইমাম!

রমজানের দু’এক মাস আগ থেকেই তারাবীহ নামাজের জন্যে মসজিদে মসজিদে ইমাম নিয়োগ করা শুরু হয়। কিছু কিছু মসজিদে ইমামের পরীক্ষা নেয়া হয় যে, তিনি কত দ্রুত নামাজ পড়াতে পারেন।

যারা খুবই দ্রুত নামাজ পড়তে ও পড়াতে চান, তাদের জন্যে দরকারি একটা পরামর্শ।

কষ্ট করে বিদেশ থেকে একটা রোবট বানিয়ে নিয়ে আসুন। খুব বেশি টাকা লাগবে না, আগামী পাঁচ বছর ইমামের জন্যে যে টাকা ব্যয় করবেন, সে টাকা দিয়ে সারা জীবনের জন্যে একজন রোবট ইমাম পেয়ে যাবেন।


রোবট ইমামের মধ্যে সবকিছু প্রোগ্রামিং করা থাকবে। সে সূরা ফাতিহা থেকে শুরু করে রুকু-সেজদা সব করতে পারবে। ফলে, খুবই দ্রুত এবং ভালোভাবে খতম তারাবীহ পড়াতে পারবে। কত মিনিটে কত রাকাত নামাজ পড়াতে হবে, তা রোবটের গায়ে ক্লিক করে দিলেই হবে, রোবট এক সেকেন্ডও বেশি সময় নিবে না।

আপনি যদি চান যে, এক পারা কোর’আন দিয়ে ৫ মিনিটে ২০ রাকাত নামাজ পড়াতে হবে, এটা রোবট ইমামের জন্যে কোনো ব্যাপার-ই হবে না। আপনি চাইলে, সে প্রতিদিন-ই একবার করে সম্পূর্ণ কোর’আন খতম করতে পারবে। চাইলে, একটি রোবট ইমামকে দিয়ে আশেপাশের পাঁচ-দশটি মসজিদে নামাজ পড়াতে পারবেন। অর্থাৎ, আপনি যেভাবে চান, ঠিক সে ভাবেই রোবট ইমাম আপনাকে নামাজ পড়াতে পারবে।

আপনার সুবিধা হলো, প্রতি বছর-ই ইমাম পরিবর্তন করতে হবে না। এক ইমাম দিয়ে আপনার সারা জীবন চলে যাবে। কারণ রোবটের ইনস্যুরেন্স ও গ্যারান্টি করা থাকবে। নষ্ট হয়ে গেলে কোম্পানি আপনাকে নতুন একটা ইমাম পাঠিয়ে দিবে, টাকা লাগবে না।

রমজানে দ্রুত তারাবীর নামাজ পড়তে ইচ্ছুক মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিরা এই বিষয়টি ভেবে দেখবেন।

আর, রোবট ইমামদেরকে কি বলব? তাঁরা তো রোবট, মানুষ না। সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করার ইচ্ছা তাদের নেই, তাদের ইচ্ছা মসজিদের সভাপতি সাহেবের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক কায়েম করা।

তাদের জন্যে একটি আয়াত স্মরণ করছি। আল্লাহ বলছেন –

ٱشْتَرَوْا۟ بِـَٔايَـٰتِ ٱللَّهِ ثَمَنًۭا قَلِيلًۭا فَصَدُّوا۟ عَن سَبِيلِهِۦٓ ۚ إِنَّهُمْ سَآءَ مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ

অর্থাৎ, “তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ বা কোর’আনকে অল্প কিছু টাকার জন্যে বিক্রি করে দেয়। এবং মানুষকে আল্লাহর সঠিক পথ থেকে বিরত রাখে। তারা যা করে চলছে, তা অতি নিকৃষ্ট”। [সূরা ৯/তাওবা – ৯]

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...