সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বাঙালির সরল সমীকরণ

বাঙালি ও মুসলিম-এ দু’টি পরিচয়ের মাঝে কি কোনো দ্বন্দ্ব আছে? প্রশ্নটির একাধিক জবাব থাকতে পারে। হ্যাঁ বা না, অথবা অন্য কিছু। সাধারণত বাংলাদেশের আলেম সমাজ কখনোই একে দ্বন্দ্ব বা বিতর্ক আকারে দেখেন না; বরং কুতর্ক মনে করেন। অন্যদিকে বুদ্ধিজীবী সমাজ এটাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক মনে করেন। তাঁদের কেউ কেউ মনে করেন, এটাই বাংলাদেশের প্রধান বিতর্কের বিষয় হওয়া উচিত। মোটা দাগে, প্রায় সব বুদ্ধিজীবীই মনে করেন, বাঙালি ও মুসলিম পরিচয়ের মাঝে একটি বিশাল দ্বন্দ্ব বিরাজমান।

এ ধরণের বিতর্কে আলেম সমাজ সময় অপচয় না করার কারণ হল, তাঁদেরকে ধর্মীয় বিধানাবলী বিশ্লেষণে ব্যস্ত থাকতে হয় এবং মানুষকে নৈতিক শিক্ষা দিতে হয়। কিন্তু বুদ্ধিজীবী-সমাজ তো আর এসবের ধার ধারে না, তাই তাঁদেরকে বাঙালি-মুসলিম বিতর্কে প্রাণ সঞ্চারণ করেই জীবন চালাতে হয়।image

ধরা যাক, বাঙালি ও মুসলিম পরিচয়ের মাঝে দ্বন্দ্ব আছে; তাহলে সে দ্বন্দ্বটা কি? কোত্থেকে তার উৎপত্তি? আর কে-ই বা করেছে এর বিস্তার? – এ সব বুঝতে হলে স্বভাবতই মুসলিম ও বাঙালি শব্দ দু’টির তাৎপর্যসহ বিশ্লেষণে নেমে পড়তে হবে।

মুসলিম শব্দটির সংজ্ঞা নিয়ে আলেম সমাজে তেমন কোনো মতপার্থক্য দেখা যায় না। কারণ, রাসূল (সা.) নিজেই মুসলিমের পরিচয় প্রদান করে গেছেন। কিন্তু বাঙালি শব্দের সংজ্ঞা নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের মাঝে হাজারো মতপার্থক্য বিদ্যমান। কেউ কখনো অন্য কারো সংজ্ঞা গ্রহণ করেননি। বিশেষ করে বাঙালি-বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ নিজেদের সম্পর্কে এমন সব অশালীন মন্তব্য করেছেন, যা মুখে আনা সভ্য সমাজের কাজ নয়।

বাঙালিদের সম্পর্কে যারা কিছুটা ভালো ধারণা পোষণ করেন, তাঁরা ‘বাঙালি’ শব্দের পরিচয় প্রদান করতে গিয়ে বোধয় খানিকটা বিপদেই পড়েন। কিসের ভিত্তিতে হবে বাঙালির পরিচয়? ভাষার ভিত্তিতে না সংস্কৃতি বিচারে? ভূখণ্ডের ভিত্তিতে নাকি পৈত্রিক সূত্রে?

যদি ভাষার বিচারে বাঙালি তার পরিচয় গ্রহণ করে, তখন ইংলিশ মিডিয়ামের হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে যারা এ দেশে বাস করে কিন্তু মোটেও বাংলা বলতে পারেন না, তাদের পরিচয় হবে কী? যদি সংস্কৃতির ভিত্তিতে বাঙালি তার পরিচয় ধারণ করতে চায়, তখন এক বিরাট প্রশ্ন দেখা দেবে- বাঙালি সংস্কৃতি আসলে কী? ইতিহাসের চোখ দিয়ে তাকালে দেখা যায়, এখানের মানুষেরা প্রথমে অনার্য ছিল (যদিও এ নিয়ে বিতর্ক আছে), এরপর এখানে আর্যরা এলো; তারপর বৌদ্ধ, মুসলিম এবং সর্বশেষ খ্রিস্টানরা এলো। প্রত্যেকেই কিছু না কিছু তাদের সংস্কৃতির আমদানি ঘটিয়েছেন। তাহলে কোন সংস্কৃতিকে এখন বাঙালি সংস্কৃতি বলা হবে? হিন্দু, বৌদ্ধ না খ্রিস্টান সংস্কৃতিকে? যদি মনে করি, আদি অনার্যদের সংস্কৃতিই হবে বাঙালিদের সংস্কৃতি, তখন পহেলা বৈশাখ জাতীয় সব অনুষ্ঠান আর আচার-আচরণই অবৈধ হয়ে যাবে। কারণ এগুলো তো আর আদি অনার্যদের সময়ে ছিল না। আর যদি মনে করি, বাঙালি সংস্কৃতি নদীর মতোই বহমান, তাহলে মুসলিমদের সংস্কৃতিকে বাঙালি সংস্কৃতি হিসেবে গ্রহণ করতে আপত্তি কোথায়?

যদি বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ভিত্তিতে বাঙালিদের পরিচয় নির্ধারণ করা হয়, তখন কলকাতা সহ অন্য দেশের বাঙালিরা যাবে কোথায়? কী হবে তাদের পরিচয়? অথচ তারা তো নিজেদের বলে আসল বাঙালি, আর আমাদের বলে নকল বাঙালি। তারপর আসা যাক পৈত্রিক সূত্রের কথা। যে সব বিদেশী নাগরিক বাংলাদেশে বিয়ে করে বাংলাদেশেই বসবাস করছে, তাদের ছেলে-মেয়েরা কি বাঙালি নন?

সুতরাং দেখা যায়, ‘বাঙালি’ শব্দের সংজ্ঞা প্রদান করতে গেলে হরেক রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাহলে কি আমরা বলতে পারি, বাঙালিরা পরিচয় হীন? –এ প্রশ্নের জবাব দেয়া কঠিন। আমরা সে দিকে যেতে চাই না। আমরা শুধু বুঝতে চাই- কেন বাঙালিরা তাদের পরিচয় নিয়ে এত হীনমন্যতায় ভোগে? কেন শাহবাগে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলতে হয়- 'আমি কে, তুমি কে? বাঙালি, বাঙালি'-ধীরে ধীরে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে আমাদের বের করতে হবে।

ধরে নিলাম, এ অঞ্চলে মুসলিম আছে, বাঙালি আছে, তাদের পরিচয়ের মাঝে দ্বন্দ্ব আছে এবং সে দ্বন্দ্ব নিরসনেরও প্রয়োজন আছে। কিন্তু তারও আগে আমাদের জানা প্রয়োজন, সমাজে বা রাষ্ট্রে এ দ্বন্দ্ব আসলে কতটা বিস্তৃত? গ্রাম, উপজেলা কিংবা জেলা শহরের মানুষকে যদি প্রশ্ন করা হয়- আপনার পরিচয় কী? তিনি নিজের নাম ও বাবার নাম বলার পরপরই বলবেন, ‘ভাই, আমি মুসলমান’। অথবা বলবেন- ‘আমি হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান’। কখনই তিনি স্বাভাবিকভাবে বলবেন না যে- ‘আমি বাঙালি’।

তাহলে এখন একটি প্রশ্ন এসে হাজির হয়- বাঙালি আসলে কারা? কারা এ পরিচয় বহন করেন? সম্ভবত দু’ধরণের মানুষ এ পরিচয়ের কথা জোর গলায় বলতে ভালোবাসেন। এক হচ্ছে পাহাড়ের দখলদার, দুই হচ্ছে চেতনার দখলদার। এদের মাঝে একটি চমৎকার মিল আছে। পাহাড়ে যারা বাঙালি, তারা পাহাড়ের অধিবাসীদের উচ্ছেদ করে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চান। আর চেতনায় যারা বাঙালি, তারা এ দেশের সকল ধর্মীয় ও নৈতিক চেতনার উচ্ছেদ ঘটিয়ে সেক্যুলার চেতনার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চান।

তবে এই দু'ধরণের বাঙালির মাঝে একটি পার্থক্যও আছে। পাহাড়ের বাঙালিদের সাথে মুসলিম পরিচয়ের দ্বন্দ্ব নেই; দ্বন্দ্ব পাহাড়িদের সাথে এবং এ দ্বন্দ্ব সংকীর্ণ ও সুস্পষ্ট। কিন্তু চেতনায় বাঙালিদের দ্বন্দ্ব সরাসরি মুসলিম পরিচয়ের সাথে এবং এ দ্বন্দ্ব জটিল ও অস্পষ্ট।

এবার তাহলে ধরে নিলাম, যারা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী তারা কেবল বাঙালি, আর যারা ধর্মীয় চেতনায় বিশ্বাসী তারা মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান। তাহলে প্রশ্ন হল- বাঙালি ও মুসলিম পরিচয়ের মাঝে যেমন দ্বন্দ্ব আছে, বাঙালি ও হিন্দু পরিচয়ের মাঝেও কি ঠিক তেমন দ্বন্দ্ব আছে? সম্ভবত উত্তর হবে, ‘না’। কেননা শরৎচন্দ্র যখন তার ‘শ্রীকান্তে’ উপন্যাসে বলেন, ‘আজ বাঙালি ও মুসলমান ছেলেদের মাঝে ফুটবল খেলা চলিতেছে’; তখন সু-স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বাঙালি ও হিন্দুদের মাঝে আসলে কোনো পার্থক্য নেই বরং তারা উভয়ে এক। বিশেষ করে ঈশ্বরচন্দ্র বা বঙ্কিম পড়লে যে কারোই মনে হবে- "বাঙালি মানেই হিন্দু, আর হিন্দু মানেই বাঙালি; কোনো মুসলিম বাঙালি হতে পারে না।" ফলে আমাদের বুদ্ধিজীবী অঙ্গনে বাঙালি-মুসলিম না মুসলিম-বাঙালি এসব নিয়ে তুমুল বিতর্কে থাকলেও বাঙালি-হিন্দু, বাঙালি-বৌদ্ধ কিংবা বাঙালি-খ্রিস্টান বলে কোনো বিতর্ক নেই।

তাহলে এবার ধরে নিচ্ছি- বাঙালি পরিচয়ের সাথে কেবল মুসলিম পরিচয়েরই দ্বন্দ্ব; হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান পরিচয়ের সাথে বাঙালির কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমরা যদি এ অনুসিদ্ধান্তে চলে আসি, তাহলে আমাদের এও মেনে নিতে হবে যে, বাঙালি ও মুসলিম পরিচয়-গত দ্বন্দ্বের আড়ালে আসলে হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্বই চালু আছে। আমাদের বুদ্ধিজীবীরা আগের সূত্রটি ডামাডোল পিটিয়ে প্রচার করলেও পরের অনুসিদ্ধান্তটি চরমভাবে অস্বীকার করেন। তাঁদের এ হেন বুদ্ধির স্থূলতা প্রকাশ করা আমাদের কাজ নয়।

আচ্ছা বিতর্কের খাতিরে ধরে নিলাম- বাঙালি মানে হিন্দু সম্প্রদায় নয় বরং সাধারণ বাংলা ভাষাভাষী মানুষ। তাহলে প্রশ্ন জাগে, পৃথিবীর তো আরও নানা ভাষাভাষী মানুষ আছে, তারাও তো ইসলাম গ্রহণ করেছে; তাদের মাঝে কি ধর্ম ও ভাষার পরিচয় নিয়ে আমাদের মত কোনো দ্বন্দ্ব আছে? মনে হয় না। তারাও কি দেশের সকল সমস্যার সমাধান হিসাবে আমাদের মত আত্ম-পরিচয় অনুসন্ধান করেন? সম্ভবত না। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া কিংবা ইরানের মত রাষ্ট্রের দিকে নজর দিলে বিষয়গুলো সহজেই সুস্পষ্ট হয়ে উঠে।

তাহলে বাঙালি ও মুসলিম পরিচয়ের দ্বন্দ্বটা আসলে কোথায়? সবদিক থেকে বিচার-বিশ্লেষণ করার পরেও কোনো দ্বন্দ্ব খুঁজে না পাওয়ার পিছনে দু’টি কারণ থাকতে পারে।

এক. হতে পারে, আমাদের বুদ্ধিজীবীরা বাঙালি ও মুসলিম পরিচয়ের আসল দ্বন্দ্ব এখনো আবিষ্কার করেতে পারেননি কিংবা পারলেও বলার সাহস করেন না।

দুই. হতে পারে, বাঙালি ও মুসলিম পরিচয়ের মাঝে কখনো কোনো দ্বন্দ্ব-ই ছিল না; বুদ্ধিজীবীরা নিজেদের স্বার্থে এ বিতর্ক চালু রাখছে। আল্লাহ-ই ভালো জানেন আসল ঘটনা কি।

বুদ্ধিজীবীদের আলাপ আপাতত বাদ দিয়ে এ প্রশ্ন নিয়ে আমরা আলেম সমাজের কাছে যাই। তাঁরা কেনো বাঙালি ও মুসলিম পরিচয়ের মাঝে কোনো দ্বন্দ্ব নেই বলে মনে করেন? জবাব হতে পারে, তাঁরা দেশ বা মাটিকে নিজের মনে করেন না; শুধু মুসলমানিত্বের মাঝেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেতে চান। এ উত্তরটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়। কেননা, আমাদের সমাজে যে-সকল আলেম আছেন, তাঁদের নাম বা উপাধির প্রতি লক্ষ্য করলেই বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে যায়। অনেক আলেম-ই তাঁদের নিজেদের নামের সাথে সাথে জন্মভূমির নামও জুড়ে দেন। কখনো কখনো দেখা যায়, তাঁদের আসল নাম-ই বাদ পড়ে যায়; তাঁরা পরিচিত হন জন্মভূমির নামে। যেমন, বাংলাদেশের বিখ্যাত কিছু আলেমের নাম উল্লেখ করা যায়- কেরামত আলী জৈনপুরী, মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, আব্দুল হাই পাহাড়পুরী, জুনায়েদ বাবুনগরী, নুরুল ইসলাম ওলীপুরি, তাফাজ্জল হক হবিগঞ্জি এবং আরও অনেক। এঁরা প্রত্যেকে জন্মভূমির নামে-ই অধিক পরিচিত; তাঁরা এ নাম-ই ভালোবাসেন।

তাহলে এবার ধরা যাক, আলেম সমাজের সাথে এ দেশের গণ-মানুষের কোনো যোগাযোগ নেই বলেই তাঁরা বাঙালি ও মুসলিম পরিচয়ের দ্বন্দ্বটা অনুধাবন করেতে পারছেন না; -এই অনুসিদ্ধান্তে আসারও কোনো সুযোগ নেই। কেননা, আলেম সমাজ এ দেশের গণ-মানুষের ভাষা যতটা বোঝেন, ততটা বোঝেন না বুদ্ধিজীবীগণ। ফলে, আলেমদের সমাবেশে যত মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়, তার শত ভাগের এক ভাগও দেখা যায় না বুদ্ধিজীবীদের সমাবেশে। আলেম সমাজকেই মানুষ বেশি ভালোবাসেন; তাঁদের কাছেই জীবন-জিজ্ঞাসার সমাধান খোঁজেন।

তাহলে এবার আরেকটি বিষয়ে আমরা অনুমান করি। জাতি-ভাষা-গোত্র ভিত্তিক মানুষের যে বিভিন্ন পরিচয় রয়েছে, তা সম্পর্কে আলেম সমাজ সচেতন নন। এ কথাটিও অবান্তর হয়ে যায়, যখন দেখি আলেম সমাজ জাতি-ভাষা-গোত্রের বৈচিত্র্য নিরূপণে চমৎকার চমৎকার ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন। তাঁরা বলেন, পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- “হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি; এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার” [সূরা হুজরাত: ১৩]। এ কারণে আলেম সমাজ জাতি-ভাষা-গোত্র বিষয়ে সদা সচেতন, এবং সর্বদা ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন; কেননা, এটি আল্লাহর আদেশ।

এভাবে একের পর এক বিশ্লেষণ করতে করতে এক সময় মনে হলো, আসলে এভাবে সময়ের অপচয় হচ্ছে। তারচেয়ে কোনো আলেম বা বুদ্ধিজীবীকেই জিজ্ঞেস করি। যেহেতু বুদ্ধিজীবীরা এ অধমের নাগালের বাইরে, তাই একজন আলেমকে এ প্রশ্নটি জিজ্ঞেস করলাম। তিনি একটি চমৎকার কথা বলে আপাতত আমায় সমাধান দিলেন; বললেন- “মুসলিমরা বাঙালি, অ-বাঙালি, ইরানি, তুরানি, ইংরেজ সবাইকে ধারণ করতে পারে; কিন্তু বাঙালি পরিচয় দেয়া মানুষেরা বড়ই প্রতিক্রিয়াশীল, তারা মুসলিমদের একটুও সহ্য করতে পারেন না।”

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মুসলিম চিন্তাবিদ ও মনীষীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা

বিংশ শতাব্দীর মুসলিম চিন্তাবিদদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা ১. আয়াতুল্লাহ খমিনী – (ইরান, ১৯০২ - ১৯৮৯) ২. আল্লামা তাবাতাবাঈ – (ইরান, ১৯০৩ - ১৯৮১) ৩. আবুল আ’লা মওদুদী – (পাকিস্তান, ১৯০৩ - ১৯৭৯) ৪. মালিক বিন নাবী – (আলজেরিয়া, ১৯০৫ - ১৯৭৩) ৫. হাসান আল বান্না – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৪৯) ৬. সাইয়েদ কুতুব – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৬৬) ৭. নুর উদ্দিন তোপচু – (তুরস্ক, ১৯০৯ – ১৯৭৫ ৮. ফজলুর রহমান – (পাকিস্তান, ১৯১৯- ১৯৮৮) ৯. মুর্তাজা মোতাহারী – (ইরান, ১৯২০ - ১৯৭৯) ১০. ইসমাইল রাজি আল ফারুকি - (ফিলিস্তিন, ১৯২১ - ১৯৮৬ ) ১১. আলী আইজাত বেগোভিচ – (বসনিয়া, ১৯২৫ - ২০০৩) ১২. নাজিমুদ্দিন এরবাকান – (তুরস্ক, ১৯২৬ - ২০১১) ১৩. শহীদ মোহাম্মদ বেহেশতী – (ইরান, ১৯২৮ - ১৯৮১) ১৪. নাকিব আল-আত্তাস – (ইন্দোনেশিয়া, ১৯৩১ - ) ১৫. হাসান আত-তুরাবী, (সুদান, ১৯৩২ - ২০১৬) ১৬. আলী শরিয়তি – (ইরান, ১৯৩৩ - ১৯৭৭) ১৭. সেজাই কারাকোচ - (তুরস্ক, ১৯৩৩ - ) ১৮. সাইয়্যেদ হোসাইন নাসর – (ইরান, ১৯৩৩ - ) ১৯. হাসান হানাফি – (মিশর, ১৯৩৫ - ) ২০. আবেদ আল জাবেরি – (মরক্কো, ১৯৩৬ - ২০১০) ২১. রশিদ ঘানুশী – (তিউনিসিয়া, ১৯৪১ - ) ২২. নাসের আবু জায়েদ – (মিশর, ১৯৪৩ - ২০

স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত দুই বিজ্ঞানীর দ্বন্দ্ব

স্টিফেন হকিং এবং মিচিও কাকু দু’জনই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী। বাংলাদেশে স্টিফেন হকিং-এর নামটি অনেক পরিচিত হলেও বিজ্ঞানের জগতে স্টিফেন হকিং-এর চেয়ে মিচিও কাকু-র অবদান অনেক বেশি। মিচিও কাকু হলেন ‘স্ট্রিং তত্ত্বের’ কো-ফাউন্ডার। এ তত্ত্বটি অতীতের বিগ ব্যাং তত্ত্বকে পিছনে ফেলে বর্তমানে বিজ্ঞানে বিপ্লব নিয়ে এসেছে। তাই বিশ্বের কাছে স্টিফেন হকিং এর চেয়ে মিচিও কাকু’র জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় সাধারণত বিজ্ঞানের কোনো বই পাওয়া না গেলেও সেখানে মিচিও কাকু-র বিজ্ঞান বিষয়ক তিনটি বই বেস্টসেলার হয়েছে। অবশ্য, সেই তালিকায় স্টিফেন হকিং-এর একটি বইও নেই। দু’জনেই সমসাময়িক বিশ্ববিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী হলেও স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে দু’জনের অবস্থান দুই প্রান্তে।   ১ - ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক নিয়ে তাঁদের বিতর্ক।   স্টিফেন হকিং তাঁর ‘The Grand Design’ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে বলেছেন, ‘দর্শন মরে গেছে এবং ধর্ম অকার্যকর হয়ে গেছে, এখন কেবল বিজ্ঞানের যুগ’। তাঁর মতে, সত্য মানেই বিজ্ঞান। ধর্ম ও দর্শনের যাবতীয় সমস্যা বিজ্ঞান দিয়ে সমাধান করা সম্ভব। তাই, ধর্ম ও দর্শন এখন অপ্রয়

সকল জ্ঞান-ই ইসলামের সম্পদ

কোর'আন একটি জ্ঞান, হাদিস একটি জ্ঞান, ফিকাহ একটি জ্ঞান, দর্শন একটি জ্ঞান, এবং বিজ্ঞান একটি জ্ঞান। এদের মাঝে স্তরবিন্যাসে পার্থক্য থাকলেও একটি জ্ঞান কখনো অন্য জ্ঞানের বিরোধী হয় না। আদম (আ)-কে আল্লাহ তায়ালা প্রথম যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন, তা পৃথিবীর সকল মানুষের মধ্যেই রয়েছে। যে কেউ যে নামেই জ্ঞান চর্চা করুক না কেন, তা আল্লাহর সত্য জ্ঞানের সাথে কখনো বিরোধী হওয়া সম্ভব না। অজ্ঞতার কারণে অনেকেই মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। এবং দর্শনের সাথে বিজ্ঞানের বৈপরীত্য রয়েছে। নাস্তিকরা মনে করেন, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলুল কোর'আন মনে করেন, কোর'আনের সাথে হাদিসের বৈপরীত্য রয়েছে। আহলে হাদিস মনে করেন, হাদিসের সাথে ফিকহের বৈপরীত্য রয়েছে। কিছু কিছু ধার্মিক মনে করেন, ধর্মের সাথে দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। আধুনিক বস্তুবাদী বিজ্ঞানী মনে করেন, বিজ্ঞানের সাথে ধর্ম ও দর্শনের বৈপরীত্য রয়েছে। কিন্তু, আসলে সব জ্ঞান-ই আল্লাহর পক্