সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

তিউনিসিয়ার 'আন নাহদা' সামগ্রিক ইসলাম ছেড়ে দিয়ে কেবল রাজনৈতিক দল হয়ে গেল কেন? - রশিদ ঘানুশি

বিবিসি: উস্তাদ রাশেদ, আপনি বলেছেন, "চল্লিশ বছর পর আন নাহদা একটি রাজনৈতিক দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে"। এভাবে কলমের দাগ টনার মতই একটি রাজনৈতিক দল হয়ে গেল। তিউনিসিয়ার জনগণ ও দর্শকদের জন্যে এটা কি একটু ব্যাখ্যা করবেন? এই পদক্ষেপটা কি আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনার কারণে নেয়া হয়েছে? নাকি, ঘরে-বাইরে, প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে দলটিকে সমালোচনার চাপে এই পদক্ষেপটা নিতে হয়েছে?

[youtube https://www.youtube.com/watch?v=5F3fHkxsXHM&w=854&h=480]



রশিদ ঘানুশি: আপনার প্রশ্নের জবাবে আমি বলব - রাজনীতি সামগ্রিক ইসলামের-ই একটি অংশ। আন নাহদা সামগ্রিক ইসলাম থেকে একটি পৃথক রাজনৈতিক দল হয়ে যাবার এই ঘোষণাটি দিয়েছে জনগণের সেবা করার জন্যে। জনগণের চাকরির ব্যবস্থা করা, তাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়ন করা, দেশের পরিবেশ ঠিক রাখা, এবং তিউনিসিয়ার জনগণ ও দেশের সম্মান বৃদ্ধি করার জন্যেই 'আন নাহদা' পৃথক হয়েছে। আন নাহদার এই পরিবর্তনটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

আমরা তো চাক্ষুষ দেখেছি, তিউনিসিয়ায় একটা বিপ্লব হয়েছে। এই বিপ্লবের অর্থ হলো বিরাট পরিবর্তন হওয়া, মূলের পরিবর্তন এবং সব কিছুর পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের-ই একটি অংশ হিসাবে তিউনিসিয়ায় এখন প্রকাশ্যে রাজনীতি করা যায়, অথচ আগে এখানে রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। আগে ক্ষমতাচ্যুত শাসকের সময়ে তিউনিসিয়ায় রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। তিউনিসিয়ায় তখন রাজনীতি করা যেত না। সেখানে ছিল কপটতা, অন্যায় শাসন, এক ব্যক্তির ক্ষমতা ও সিদ্ধান্ত, এবং একদলীয় বাকশাল। তাই, রাজনীতি তখন বিভিন্ন কার্যক্রমের মুখোশে পরিচালিত হত। বিভিন্ন সংস্থা, আদালত, বা মসজিদ ভিত্তিক কার্যক্রমের আবরণে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হত।

সেসময় যারা রাজনীতি করতে চাইতো, তাদেরকে মসজিদে, আদালতে বা কোনো সংস্থায় গিয়ে ভিন্ন পরিচয়ে কাজ করতে হত। কিন্তু এখন বিপ্লবের পর, অর্থাৎ, স্বাধীন সময়ে, সব ধরণের কার্যক্রম-ই করা যায়। এখন যে রাজনীতি করতে চায়, সে তার আসল চেহারায় রাজনীতি করতে পারে, এবং দলও গঠন করতে পারে। কেউ চাইলে উন্নয়নমূলক কোনো সংস্থা বা সংগঠনও গড়তে পারে। অথবা, কেউ চাইলে মসজিদে ইমামতিও করতে পারে। সমস্যা নেই।

বাধাহীন স্বাধীন এই সময়ে এখন আর সামগ্রিক ধর্মীয় কোনো দল থাকার প্রয়োজন নেই। এবং রাজনীতিকে এখন ভিন্ন পরিচয় নিয়ে আসারও প্রয়োজন নেই।

এ কারণে, আমরা এখন একটি রাজনৈতিক দল। 'আন নাহদা' পরিচয়ে আমরা স্বেচ্ছাসেবামূলক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করব। কেউ ইচ্ছা করলে আমাদের সাথে রাজনৈতিক দলে থাকবে। অথবা, যাদের ইচ্ছা মসজিদে কাজ করতে, তারা মসজিদে চলে যাবে। কিংবা, যাদের ইচ্ছা ভালো কোনো কাজ করার, তারা ভালো সংগঠন গড়ে তুলবে।

এটাই আন-নাহদার সামগ্রিক ইসলাম থেকে পৃথক হবার মুল কারণ।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?

এক ভাইয়া প্রশ্ন করেছেন – “তাকদীর বা ভাগ্য কি পূর্ব নির্ধারিত না পরিবর্তনশীল?” এ প্রশ্নটিকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় ও দার্শনিক দিক থেকে পৃথিবীতে প্রচুর আলোচনা হয়েছে, এবং এখনো চলছে। কিন্তু ভাইয়া আমাকে বলেছেন খুব সহজ ভাষায় লেখার জন্যে। অবশ্য, আমি সবকিছু সহজ-সরল করেই লেখার চেষ্টা করি। কারণ, আমি ছোট মানুষ, কঠিন ও প্যাঁচালো লেখা যথাসম্ভব কম পড়ি ও লিখি। যাই হোক, তাকদীরের বিষয়টা আমার কাছে খুবই সহজ একটি বিষয় মনে হয়। এ বিষয়ে আমাদের মনে সাধারণত দু’টি প্রশ্ন জাগে। ১। ‘তাকদীর’ বা ভাগ্য যদি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগেই নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে আমরা আর ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ কি? অথবা, ২। আমরাই যদি নিজেরাই নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারি, তাহলে আল্লাহ দ্বারা নির্ধারিত ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে হবে কেন? এ প্রশ্নগুলোর জবাব জানার আগে কিছু উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আমরা প্রাথমিকভাবে বোঝার চেষ্টা করব।

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...