সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

মার্চ, ২০১৮ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

নারী নির্যাতন রুখতে বডিগার্ড

জাফর ইকবালের উপর ছোট্ট একটা হামলা হবার পর তাঁর জন্যে সরকার একাধিক বডিগার্ড নিয়োগ করেছে। জাফর ইকবাল যেহেতু সরকারের দালালি করেন, তাই তাঁর জীবনের মূল্য আছে, ফলে তাঁর জন্যে বডিগার্ডেরও প্রয়োজন আছে। কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ জনগণের জীবনের কোনো মূল্য নেই, তাই আমাদের জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করে না সরকার। আর, এ কারণে আমাদের কোনো বডিগার্ডও নেই। অথচ, যে কোনো সরকারের প্রধান কাজ হলো জনগণের সম্পদ, সম্মান ও জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করা। কিন্তু আমাদের ব্যর্থ ও স্বৈরাচারী সরকার জনগণের নিরাপত্তা না দিয়ে নিজেদের মন্ত্রী, এমপি এবং বিভিন্ন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্যে বডিগার্ডের ব্যবস্থা করে রেখেছে। যাই হোক, কোনো সরকার জনগণের সম্পদ, সম্মান ও জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারলো কি পারলো না, ইসলাম সে জন্যে বসে থাকে না। ইসলাম নিজেই মানুষের সম্পদ, সম্মান ও জীবনের নিরাপত্তা দেয়ার জন্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইসলাম যেহেতু নারীদের অনেক বেশী সম্মান প্রদান করে, তাই ইসলাম নারীদের জন্যে বডিগার্ড নিয়োগ করে দিয়েছে। ইসলাম বলে, কোনো নারী যখন অনিরাপদ পথে বের হবে, তখন অবশ্যই একজন বিনা পারিশ্রমিক বডিগার্ড অর্থাৎ জীবনসঙ্গী, স

What is The Ruling Regarding a Women Going to Hajj Without a Mahram?

Answered by Dr. Yusuf al-Qaradawi | Translated by Sister Marwa The original rule stipulated in shari’a that a woman is not to travel alone.  Rather, she has to be accompanied by her husband or any other mahram of hers.  This rule is supported by narrations of Bukhari and others that Ibn-Abbas (ra) said, that the Prophet (pbuh) said, “A woman should not travel except with a mahram, and no man should visit her except in the presence of a mahram.” Abu-Hurairah related the following on behalf of the Prophet (pbuh), “It is not permissible for a woman who believes in Allah and the Last Day to travel for one day and night except with a mahram.” Abu-Sa’id reported that the Prophet (pbuh) said, “A woman should not travel for two days except she is accompanied by her husband or a mahram.”

উসমানী খেলাফতের বিচার ব্যবস্থা

[১] উসমানী খেলাফত হলো মুসলিমদের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের খেলাফত। পৃথিবীর বিশাল একটি অঞ্চল প্রায় ৬২৫ বছর তাদের অধীনে ছিলো। এর অন্যতম একটি কারণ হলো, উসমানী খেলাফতের আইন, কানুন ও বিচার ব্যবস্থা ছিলো তৎকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত। ব্রিটেন ও ফ্রান্স সহ তৎকালীন ইউরোপের অনেক দেশ উসমানী খেলাফতের আইন-কানুন ও বিচার ব্যবস্থা শেখার জন্যে ইস্তাম্বুলে আসতো, এবং নিজেদের দেশে গিয়ে সেসব আইন-কানুন প্রয়োগ করতো। [২] উসমানী খেলাফতের অধীনে ইহুদি ও খ্রিষ্টান সহ সকল ধর্মাবলম্বীদের পূর্ণ স্বাধীনতা ছিলো। অমুসলিমদেরকে আল্লাহর আমানত হিসাবে বিবেচনা করা হতো। এবং মুসলিম ও অমুসলিমদেরকে সমান অধিকার প্রদান করা হতো। [৩] সুলতান মেহমেত ইস্তাম্বুল বিজয় করার পর খ্রিষ্টানদের সাথে একটি চুক্তি করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, ইস্তাম্বুল বিজয়ের আগে যেভাবে খ্রিষ্টানদের ইবাদাত ও সংস্কৃতি পালন করার স্বাধীনতা ছিলো, ইস্তাম্বুল বিজয়ের পরেও ঠিক একইভাবে খ্রিষ্টানদেরকে পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করা হবে। কেউ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। [৪] ‘সুলতান সুলাইমান’ সিরিয়াল থেকে এখানে একটি ছোট্ট ভিডিও সংযুক্ত করে

ইসলামী রাজনীতির উদ্দেশ্য

ইসলামী রাজনীতির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো রাষ্ট্রে আদালত প্রতিষ্ঠা করা। এখানে আদালত প্রতিষ্ঠা করা মানে, আদালত নামের একটি দালান তৈরি করা নয়, বরং রাষ্ট্রের সকল জনগণকে তার ন্যায্য অধিকার দেওয়া। এ কারণে, আবু বকর (রা) খলিফা হবার পর অল্প কয়েকটি বাক্যে ইসলামী রাষ্ট্রের মূলনীতিগুলো বলে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন – والضعيف فيكم قوي عندي حتى أريح عليه حقه إن شاء الله، والقوى فيكم ضعيف حتى آخذ الحق منه إن شاء الله، “তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তি আমার কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তাঁর অধিকার ফিরিয়ে দিতে না পারি। এবং তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি আমার কাছে সবচেয়ে দুর্বল ব্যক্তি, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তার থেকে অন্যের অধিকার না নিতে পারি।” অর্থাৎ, আবু বকর (রা)-এর সূত্র হলো, শক্তি বা ক্ষমতার কারণে কেউ অতিরিক্ত অধিকার বা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে না। কিন্তু, বর্তমানে আমাদের সমাজে তাকালে দেখবো, যাদের শক্তি ও ক্ষমতা বেশী, তাদের অধিকারও বেশী। যেমন, ১) সাধারণ ছাত্রদের তুলনায় অবৈধ কোটার অধিকার বেশী। ২) গরীব মানুষের তুলনায় ধনী লোকদের অধিকার বেশী। ৩) উপজাতি বা আদিবাসীদের তুলনায় বাঙ্গালীদের অধিক

নবী ও রাসূলের মাঝে পার্থক্য কি?

অনেকে মনে করেন, যাদের উপর কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে, তাঁরা হলেন রাসূল; এবং যাদের উপর কিতাব অবতীর্ণ হয়নি, তাঁরা হলেন নবী। আসলে এ কথাটি সম্পূর্ণ ঠিক নয়। কারণ, যাদের উপর কিতাব অবতীর্ণ হয়নি, কোর’আনে তাদেরকেও রাসূল বলা হয়েছে। যেমন, ইসমাঈল (আ) সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন – وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِسْمَاعِيلَ ۚ إِنَّهُ كَانَ صَادِقَ الْوَعْدِ وَكَانَ رَسُولًا نَّبِيًّا “এই কিতাবে ইসমাঈলের কথা বর্ণনা করুন। তিনি ছিলেন প্রতিশ্রুতি পালনে সত্যাশ্রয়ী এবং তিনি ছিলেন রসূল ও নবী।” [সূরা ১৯/ মারইয়াম – ৫৪] আল্লাহ তায়ালা নবী ও রাসূল উভয়ের নিকট ওহী প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু পার্থক্য হলো, ওহীপ্রাপ্ত কোনো মানুষের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে যখন আল্লাহ কিছু বলেন, তখন তাঁকে নবী হিসাবে সম্বোধন করেন। আর যখন ওহীপ্রাপ্ত কোনো মানুষের দায়িত্ব নিয়ে আল্লাহ তায়ালা কোনো কথা বলেন, তখন তাঁকে রাসূল হিসাবে সম্বোধন করেন। যেমন, মুহাম্মদ (স) একজন নবী ও রাসূল। নবী মুহাম্মদ (স) ও রাসূল মুহাম্মদ (স) এর মাঝে পার্থক্য রয়েছে। ‘নবী’ মুহাম্মদ (স)-এর অনুসরণ করতে আমাদেরকে বলা হয়নি, বরং ‘রাসূল’ মুহাম্মদ (স)-এর অনুসরণ করার জন্যে আমাদেরকে বলা হয়েছে। এম

দারুল ইসলাম ও দারুল হরব - শায়েখ আবদুল্লাহ বিন বাইয়াহ

"সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ইসলামী রাষ্ট্রের ধারণা ও আইনের পরিবর্তন হয়। যেমন, রাসূল (স) এর হাদিসে এসেছে যে, ঘোড়ার উপর যাকাত নেই। কিন্তু যখন মানুষ ঘোড়া ক্রয়-বিক্রয় করতে শুরু করলো, তখন উমর (রা) ঘোড়ার উপর যাকাত নির্ধারণ করে দিলেন। একইভাবে জমির ফসলের উপর নির্ধারিত ভূমিকর বা খারাজের নিয়মেও উমর (রা) পরিবর্তন এনেছেন। চোরের হাত কাটার নিয়মও তিনি পরিবর্তন করেছেন। তিনি বলেছেন, দুর্ভিক্ষের সময়ে চোরের উপর কোনো শাস্তি প্রদান করা যাবে না। ইসলামের ইতিহাসে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, যা থেকে আমরা  জানতে পারি, সময়ের পরিবর্তনের সাথে ইসলামী আইনের পরিবর্তন হয়েছিলো। আগের যুগে ইসলামি ফিকহে 'দারুল ইসলাম' ও 'দারুল হরব' নামে দুটি ভাগ ছিলো, কিন্তু এখন আর তা নেই। এখন সমগ্র বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো একে অপরের সাথে এতটাই জড়িত যে, নতুন একটি রাষ্ট্রের ধারণা জন্ম নিয়েছে। তাই, 'দারুল ইসলাম' ও 'দারুল হরব' নামে এমন কোনো রাষ্ট্রের ধারনা এখন আর অবশিষ্ট নেই।" - শায়েখ আবদুল্লাহ বিন বাইয়াহ। সূত্র:  https://www.youtube.com/watch?v=rgBwGmfXi5E [৫৪ মিনিট থেকে। আরবি বক্তব্যের ইংরেজি অনুবাদ করেছেন শা

হিজামাহ বা 'শিঙ্গা লাগানো' কি রাসূল (স)-এর সুন্নত?

রাসূল (স)-এর অনেক আগেই চীন, মিসর, ইরান ও আরবের কিছু এলাকায় চিকিৎসার জন্যে হিজামাহ বা 'শিঙ্গা লাগানো'র রীতি চালু ছিলো। কিন্তু রাসূল (স) নিজে শিঙ্গা লাগানোর কোনো পদ্ধতি নতুন করে সাহাবীদেরকে শেখাননি, কিংবা, শিঙ্গা লাগানোর জন্যে রাসূল (স)-এর নিকট কোনো ওহী নাযিল হয়নি। বর্তমানে কোনো ব্যক্তির অসুখ হলে যেমন ডাক্তার তাঁকে ঔষধ লিখে দেন, তেমনি আগের যুগের মানুষ অসুস্থ হলে ডাক্তার তাদের কাউকে হয়তো শিঙ্গা লাগাতে বলতেন। কিন্তু অসুখ না হলে শিঙ্গা লাগানোর কোনো প্রয়োজন ছিলো না। অর্থাৎ, শিঙ্গা লাগানোটা ধর্মীয় কোনো বিষয় ছিলো না, বরং এটি একটি ডাক্তারি পদ্ধতি ছিলো। অধিকাংশ আলিম ও ফকিহ মনে করেন, শিঙ্গা লাগানোটা মেডিক্যালের একটি ব্যাপার, এবং এটি একটি মুস্তাহাব বিষয়। কেউ ইচ্ছে করলে ডাক্তারি কারণে শিঙ্গা লাগাবে, অথবা কেউ ইচ্ছে করলে শিঙ্গা লাগাবে না, এখানে বাধ্যবাধকতার কিছু নেই। কারণ, শিঙ্গা লাগানো সুন্নাত নয়। ইমাম আল আদায়ী, আল মাজিরী, ইবনে কায়্যিম, আল বাহুতি, ইবনে হাজার, এবং ইমাম নববী সহ অধিকাংশ ইমান মনে করেন, শিঙ্গা লাগানো সুন্নাত নয়। যে হাদিস দ্বারা শিঙ্গা লাগানোকে সুন্নত সাব্যস্ত করা হয়, তা আসলে দুর্

আল্লাহর উপর তাওয়াককুল মানে কি?

অনেকে মনে করেন, তাওয়াককুল মানে কোনো ধরণের মাধ্যম বা উপায় ছাড়াই আল্লাহর উপর ভরসা করা। যেমন, টাকা-পয়সা উপার্জন করা ছাড়াই রিজিকের জন্যে আল্লাহর উপর ভরসা করা। আসলে এটি তাওয়াককুলের পূর্ণ অর্থ নয়। ইবনে আতা-উল্লাহ তাঁর হিকমা গ্রন্থের ২য় লাইনে বলেন - তাওয়াককুল হলো সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা। সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্যে যদি কোনো মাধ্যম বা উপায় হাতের কাছে পাওয়া যায়, তাহলে তা গ্রহণ করা যেমন তাওয়াককুলের অন্তর্ভুক্ত। তেমনি, সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্যে যদি কোনো মাধ্যম বা উপায় হাতের কাছে না পাওয়া যায়, তাহলে ভিন্ন অসৎ কোন উপায় অবলম্বন না করাটাও তাওয়াককুলের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, রিজিকের জন্যে যদি সৎ উপার্জনের কোনো সুযোগ থাকে, তাহলে তা গ্রহণ করা মানেই আল্লাহর উপর তাওয়াককুল করা। কিন্তু, রিজিকের জন্যে যদি কোনো সৎ উপার্জনের সুযোগ না থাকে, তাহলে অসৎ উপার্জনের দিকে না গিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে ধৈর্য ধারণ করাটাও তাওয়াককুল। তাওয়াককুল মানে কোনো উপায় বা মাধ্যম ব্যতীত আল্লাহর উপর ভরসা করা নয়।

ইসলামী শরিয়াহ ও রাজনীতি - শায়েখ হামজা ইউসুফ

"আধুনিক যুগের মুসলিমরা মনে করেন যে, ইসলাম হলো একটি রাজনৈতিক দর্শন। আসলে এটি জায়োনিস্টদের একটি দাবী। জায়োনিস্টরা ইসরাইল রাষ্ট্র গঠন করার জন্যে ইহুদি ধর্মকে একটি রাজনৈতিক দর্শনে পরিবর্তন করে ফেলে। আধুনিক মুসলিমরা ইহুদি জায়োনিস্টদের অনুসরণ করছে। জায়োনিস্টরা যেমন ইহুদি রাষ্ট্র কায়েম করতে চেয়েছিলো, আধুনিক মুসলিমরাও তেমনি ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়। অথচ, রাসূল (স) কেয়ামতের একটি আলামত হিসাবে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন যে, "মুসলিমরা তখন বনি ইসরাইল অনুসরণ করবে।" অনেকের ধারণা এমন যে, ইসলামী রাষ্ট্রে মানুষকে জোর করে ভালো মুসলিম বানানো যায়। আসলে এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ইসলামে কখনো এমন কোনো ধারণার অস্তিত্ব ছিলো না, এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না। যদি কেউ মনে করে যে, রাষ্ট্র ও সরকারের মাধ্যমে ইসলামী শরিয়াহকে বাস্তবায়ন করতে হবে, তাহলে তিনি ভুল চিন্তা করছেন। কারণ আল্লাহ তায়ালা কোর'আনে বলছেন – وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَآمَنَ مَن فِي الْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيعًا ۚ أَفَأَنتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتَّىٰ يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ তোমার প্রভু ইচ্ছা করলে পৃথিবীর সকল মানুষ ঈমান গ্রহণ করতো। কিন্তু তুমি মানুষকে

এনলাইটেনমেন্ট বা বুদ্ধির বিকাশে 'হাঈ ইবনে ইয়াকজান'

ইউরোপের এনলাইটেনমেন্ট বা বুদ্ধির বিকাশ ঘটানোর জন্যে মুসলিমদের প্রচুর অবদান রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ আমরা মুসলিম দার্শনিক ইবনে তোফায়েল ও তাঁর ছাত্র ইবনে রুশদের কথা বলতে পারি। বুদ্ধির সাহায্যে কিভাবে স্রষ্টার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়, তা নিয়ে ইবনে তোফায়েল একটি উপন্যাস লিখেছিলেন, যার নাম হলো হাঈ ইবনে ইয়াকজান। এই উপন্যাসে তিনি দেখিয়েছেন যে, কোনো মানুষ যদি বনে-জঙ্গলে বাস করে, এবং তার কাছে যদি কোর’আন-হাদিস বা কোনো ধর্মের বাণী না পৌঁছায়, তবুও সে তার যুক্তি-বুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহকে চিনতে পারবে। ইবনে তোফায়েলের এ দার্শনিক উপন্যাসটি ইউরোপে এতো বেশী জনপ্রিয়তা লাভ করে যে, এ গ্রন্থকে তাঁরা একটি তত্ত্ব আকারে হাজির করেছেন। তত্ত্বটির নাম হলো - ‘ফিলোসফাস অটোডিডাকটাস’। ইউরোপের বিখ্যাত সব দার্শনিক এবং বিজ্ঞানীদের চিন্তা ভাবনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে হাঈ ইবনে ইয়াকজান। যেমন, থমাস হবস (১৫৮৮-১৬৭৯), জন ওয়ালিস (১৬১৬-১৭০৩), জন লক (১৬৩২-১৭০৪), আইজ্যাক নিউটন (১৬৪৩-১৭২৭), গটফ্রিড লাইবনিজ (১৬৪৬-১৭১৬), জর্জ বার্কলি (১৬৮৫-১৭৫৩), ডেভিড হিউম (১৭১১-১৭৭৬), ইমানুয়েল কান্ট (১৭২৪-১৮০৪), শোপেনহাওয়ার (১৭৮৮-১৮৬০) সহ আরো অ

দার্শনিক জন লকের তত্ত্ব

দার্শনিক জন লকের (১৬৩২ - ১৭০৪) যাবতীয় তত্ত্ব বেড়ে উঠেছে এই ধারণার উপরে - "মানুষ জন্মের সময়ে কোনো জ্ঞান নিয়ে পৃথিবীতে আসে না। জন্মের পর বিভিন্ন অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে আস্তে আস্তে জ্ঞানী হতে শুরু করে।" এই ধারণাটি প্রথম মুসলিম দার্শনিক ইবনে তোফায়েল (১১০৫ - ১১৮৫) তাঁর 'হাঈ ইবনে ইয়াকজান' উপন্যাসে খুব ভালোভাবে চিত্রায়িত করে গিয়েছিলেন। তারও আগে, কোর'আনে এ বিষটি নিয়ে স্পষ্ট অনেকগুলো আয়াত এসেছে। আল্লাহ তায়ালা বলছেন - وَاللَّهُ أَخْرَجَكُم مِّن بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُونَ شَيْئًا وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ ۙ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ "আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের গর্ভ থেকে যখন বের করেছেন, তখন তোমরা কিছুই জানতে না। এরপর, তিনি তোমাদেরকে শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি ও মস্তিষ্ক দিয়েছেন, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।" [সূরা ১৬/নাহল - ৭৮] দার্শনিক জন লকের চিন্তায় প্রভাবিত হয়ে বাঙালি সেক্যুলার সমাজ যতই রাষ্ট্র থেকে ইসলাম ধর্মকে আলাদা করতে চান না কেনো, তারা স্বয়ং জন লকের চিন্তাকেই ইসলাম-মুক্ত করতে পারবেন না।

কোর’আনে কি মস্তিষ্কের বিষয়ে কোনো কথা আছে?

ব্রেইন বা মস্তিষ্ক মানুষের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কিন্তু কোর’আনে কি মানুষের মস্তিষ্কের বিষয়ে কোনো কথা আছে? উত্তর – জ্বি, আছে। কোর’আনের অন্তত ১৬ টি স্থানে মানুষের মস্তিষ্কের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু কোর’আনের অধিকাংশ অনুবাদে ‘মস্তিষ্ক’ শব্দটিকে ‘হৃদয়’, ‘অন্তর’ বা ‘মন’ শব্দগুলো দ্বারা অনুবাদ করা হয়েছে। ‘হৃদয়’ শব্দটির জন্যে কোর’আনে ব্যবহার করা হয়েছে ‘কালব’ (قلب) শব্দটি এবং ‘মস্তিষ্ক’ শব্দটির জন্যে কোর’আনে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ফুয়াদ’ (فؤاد ) শব্দটি। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে ‘কলব’ ও ‘ফুয়াদ’ শব্দ দুটির অনুবাদ করা হয় ‘হৃদয়’ শব্দটি দ্বারা। অথচ, ফুয়াদ শব্দটির প্রকৃত অর্থ হবে 'মস্তিষ্ক'। হৃদয় দিয়ে আমরা চিন্তা করি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। আর, মস্তিষ্ক দিয়ে আমরা আমাদের চিন্তা ও সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়ন করি। কালব ও ফুয়াদের পার্থক্য জানার জন্যে নিম্নের আয়াতটি আমরা দেখতে পারি। আল্লাহ তায়ালা বলছেন – وَأَصْبَحَ فُؤَادُ أُمِّ مُوسَىٰ فَارِغًا ۖ إِن كَادَتْ لَتُبْدِي بِهِ لَوْلَا أَن رَّبَطْنَا عَلَىٰ قَلْبِهَا لِتَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ “মূসা জননীর ‘ফুয়াদ’ ( বা মস্তিষ্ক) অস্থির হয়ে পড়ল। যদি আম

আত্মশুদ্ধি, আত্মউন্নয়ন ও সফলতার ছয়টি উপায়।

‘আত্মশুদ্ধি’ বা ‘তাজকিয়াতুন নাফস’ শব্দগুলো শুনলেই আমরা মনে করি এগুলো পীরপন্থীদের কথা। অথচ কোর’আনে আত্মশুদ্ধি ও আত্মউন্নয়নের অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে, এবং এর উপায়গুলোও শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। আত্মশুদ্ধির গুরুত্ব সম্পর্ক আল্লাহ তায়ালা বলেন – وَنَفْسٍ وَمَا سَوَّاهَا - فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا - قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا - وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا “শপথ নফসের এবং যিনি এটিকে সুবিন্যস্ত করেছেন। তিনি নফসকে অসৎকর্ম এবং সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। যে ব্যক্তি তার নফসকে পবিত্র করবে, সে সফলকাম হবে। এবং যে ব্যক্তি তার নফসকে কলুষিত করবে, সে ব্যর্থ হবে”। [সূরা ৯১/ শামস – ৭,৮,৯,১০] আত্মশুদ্ধি হলো দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করার উপায়। যিনি নিজের নফসের উন্নয়ন করতে পারবেন না, তিনি দুনিয়া ও আখিরাতের সকল কাজেই ব্যর্থ হবেন। এবার, কোর’আনের আলোকে আত্মশুদ্ধি ও আত্মউন্নয়নের উপায়গুলো দেখে নেয়া যাক। ১। প্রতি মুহূর্তে আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করার মাধ্যমে আত্মসচেতন ও জাগ্রত হওয়া। আল্লাহ তায়ালা বলছেন – وَاذْكُر رَّبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْآصَا

ইবলিশ না থাকলে কি মানুষ খারাপ কাজ করতো?

ইবলিশের যদি সৃষ্টি না হতো, তাহলে কি মানুষ খারাপ কাজ করতো? উত্তর – হাঁ। মানুষ কেবল শয়তানের কারণেই শয়তানি করে না, বরং নিজের নফসের কারণেও খারাপ কাজ করে। কোর’আন থেকে কয়েকটি উদাহরণ দেখুন। ১। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম মানুষ হত্যার যে ঘটনাটি ঘটেছিলো, অর্থাৎ, কাবিল যে হাবিলকে হত্যা করেছিলো, তা ইবলিশের কারণে করেনি। বরং নিজের নফসের কারণেই সে ভ্রাতৃহত্যায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলো। কোর’আনে এসেছে – فَطَوَّعَتْ لَهُ نَفْسُهُ قَتْلَ أَخِيهِ فَقَتَلَهُ فَأَصْبَحَ مِنَ الْخَاسِرِينَ “অতঃপর তার নফস তাকে ভ্রাতৃহত্যায় উদ্বুদ্ধ করল। ফলে সে তাকে হত্যা করল। তাই সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।”[সূরা ৫/মায়িদা - ৩০] অর্থাৎ, কাবিল ইবলিশের কারণে নয়, বরং তার নিজের নফসের কারণেই হাবালকে হত্যা করেছিলো।

পাপ ও পূণ্যের পরিচয়

রাসূল (স) বলেন - وَعَنْ وَابِصَةَ بْنِ مَعْبَدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: أَتَيْت رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم فَقَالَ: "جِئْتَ تَسْأَلُ عَنْ الْبِرِّ؟ قُلْت: نَعَمْ. فقَالَ: استفت قلبك، الْبِرُّ مَا اطْمَأَنَّتْ إلَيْهِ النَّفْسُ، وَاطْمَأَنَّ إلَيْهِ الْقَلْبُ، وَالْإِثْمُ مَا حَاكَ فِي النَّفْسِ وَتَرَدَّدَ فِي الصَّدْرِ، وَإِنْ أَفْتَاك النَّاسُ وَأَفْتَوْك "ওয়াবেসা ইবনু মা'বাদ (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি একবার রাসূল (স)-এর নিকট আসলে তিনি আমাকে বললেন: "তুমি কি পূণ্য বা সৎকাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে এসেছ?" আমি বললাম: জ্বি, হাঁ। তিনি বললেন: "তোমার নিজের হৃদয়কে জিজ্ঞাসা কর। যা তোমার আত্মাকে সন্তুষ্ট রাখে এবং হৃদয়কে আশ্বস্ত রাখে, তা হচ্ছে পুণ্য। আর, যা তোমার আত্মাকে অস্বস্তিতে রাখে এবং মনে সংশয় সৃষ্টি করে, তা হচ্ছে পাপ; যদিও মানুষ তোমাকে ভিন্ন ফতোয়া দিক।" [হাসিদ নং - ২৭, ইমাম নববীর ৪০ হাদিস থেকে]

মুসলিমরা অত্যাচারিত হবার কারণ কি?

সিরিয়া ও মিয়ানমার সহ সারাবিশ্বের মুসলিমদেরকে আঘাত করছে অমুসলিমরা। এর কারণ হলো মুসলিমদের বিভক্তি। যদি প্রশ্ন করা হয়, মুসলিমদের বিভক্তির কারণ কি? উত্তর - অজ্ঞতা। রাসূল (স)-এর আগমনের পূর্বে, অর্থাৎ অজ্ঞতার যুগে আরবের গোত্রে গোত্রে কেবল যুদ্ধ হতো। রাসূল (স) এসে সেই অজ্ঞ জাতিকে বললেন - "পড়"। মানুষ যখন পড়তে শুরু করলো, তখন তাঁদের মধ্যে শান্তির সু-বাতাস বইতে লাগলো। এবং এই শান্তির সু-বাতাস ছড়িয়ে পড়লো সারাবিশ্বে। এরপর, মুসলিমরা আবার যখন জ্ঞান থেকে দূরে সরে গেলো, তখনি মুসলিমদের মধ্যে বি ভক্তি শুরু হলো, এবং ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ শুরু হলো। অজ্ঞতাই হলো নিজেরা নিজেরা যুদ্ধের কারণ। এবং অজ্ঞতাই হলো শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে না পারার কারণ। খুব সাধারণ একটি সূত্র দেখুন, বাসে বা ট্রেনে আপনার পাশে বসা অপরিচিত একজন মানুষ। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি তার সাথে কথা বলে তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে না পারবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার মনে এক ধরণের ভয় বা সংশয় কাজ করবে। কিন্তু যখন আপনি তার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন, তখনি তাকে বন্ধুর মতো মনে হবে। বর্তমানে মুসলিমরা একে অপরকে শত্রু মনে করছে। এর কারণ, মুসলিমরা

রাজনীতির সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক - শায়খ ড. জাসের আওদা

[‘ইসলাম ও রাজনীতি’ প্রসঙ্গে কেউ মনে করেন, প্রচলিত ব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলে ‘আদর্শ ইসলামী ব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠা করাই হলো একমাত্র করণীয়। আবার কেউ মনে করেন, রাজনীতির মধ্যে ইসলামকে টেনে আনা মোটেও ঠিক নয়। কিন্তু স্বয়ং ইসলাম ব্যাপারটিকে কীভাবে দেখে, তা নিয়ে সমাজে স্বচ্ছ ধারণার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। গত ২০ মে ২০১৬ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ADAMS সেন্টারের জুমার খুতবায় শায়খ ড. জাসের আওদা রাজনীতির সাথে মুসলমানদের সম্পর্ক নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। সিএসসিএস -এর পাঠকদের জন্য বক্তব্যটি অনুবাদ করেছেন জোবায়ের আল মাহমুদ।]   গণসম্পৃক্ততা ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে নেতৃবৃন্দ, ইমাম ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্যে আমরা একটি নির্দেশনা তৈরি করেছি। আজকের বক্তব্যটি সেই প্রশিক্ষণেরই অংশ। বিশেষত, আমাদের নেতৃবৃন্দ, ইমাম ও শিক্ষকদের মধ্যে যারা এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছেন এ বক্তব্য তাদের জন্যে। একটি অনুষ্ঠানে আজকের  এই বক্তব্যের ঘোষণাটি দেয়ার পর বেশ কয়েকজন ভাইবোনের কাছ থেকে আমি কিছু প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। একজন বলেছেন, ‘ইসলাম ও রাজনীতি’ প্রসঙ্গটি নিয়ে মসজিদে আলোচনা করা উচিত নয়। এই ভাইয়ের যুক্ত