সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নারী নির্যাতন রুখতে বডিগার্ড

জাফর ইকবালের উপর ছোট্ট একটা হামলা হবার পর তাঁর জন্যে সরকার একাধিক বডিগার্ড নিয়োগ করেছে।

জাফর ইকবাল যেহেতু সরকারের দালালি করেন, তাই তাঁর জীবনের মূল্য আছে, ফলে তাঁর জন্যে বডিগার্ডেরও প্রয়োজন আছে। কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ জনগণের জীবনের কোনো মূল্য নেই, তাই আমাদের জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করে না সরকার। আর, এ কারণে আমাদের কোনো বডিগার্ডও নেই।

অথচ, যে কোনো সরকারের প্রধান কাজ হলো জনগণের সম্পদ, সম্মান ও জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করা। কিন্তু আমাদের ব্যর্থ ও স্বৈরাচারী সরকার জনগণের নিরাপত্তা না দিয়ে নিজেদের মন্ত্রী, এমপি এবং বিভিন্ন উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্যে বডিগার্ডের ব্যবস্থা করে রেখেছে।

যাই হোক, কোনো সরকার জনগণের সম্পদ, সম্মান ও জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারলো কি পারলো না, ইসলাম সে জন্যে বসে থাকে না। ইসলাম নিজেই মানুষের সম্পদ, সম্মান ও জীবনের নিরাপত্তা দেয়ার জন্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ইসলাম যেহেতু নারীদের অনেক বেশী সম্মান প্রদান করে, তাই ইসলাম নারীদের জন্যে বডিগার্ড নিয়োগ করে দিয়েছে। ইসলাম বলে, কোনো নারী যখন অনিরাপদ পথে বের হবে, তখন অবশ্যই একজন বিনা পারিশ্রমিক বডিগার্ড অর্থাৎ জীবনসঙ্গী, সন্তান, ভাই, অথবা, বাবাকে নিয়ে যেনো বের হয়।

এখানেই নারীবাদীদের সমস্যা শুরু হয়।

নারীবাদীরা বলেন – “নারীরা স্বাধীন। তারা যখন, যেভাবে, যেদিকে ইচ্ছে চলাফেরা করবে। কিন্তু পরিবার থেকে একজন পুরুষকে নিয়ে নারীদের বের হতে হবে কেন?”

এর উত্তর একেবারেই সহজ।

দেখুন, স্বৈরাচারী নারী প্রধানমন্ত্রীদের মাঝে আমাদের বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের বুকে অন্যতম স্থান দখল করে আছেন। তিনি যা ইচ্ছে তা করতে পারেন, সে স্বাধীনতা তার আছে। কিন্তু তাকেও একাধিক পুরুষ বডিগার্ড নিয়ে পথ চলতে হয়।

আমাদের করের টাকা দিয়ে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী চলেন, তাই তিনি তাঁর বডিগার্ডদের ভালো বেতন দিতে পারেন। কিন্তু, দেশের লক্ষ-কোটি নারীর নিরাপত্তার জন্যে এতো এতো বডিগার্ড পাবো কোথায়? তাদের বেতন দিবে কে?

যে মেয়েটির একজন বয়ফ্রেন্ড আছে, তার দায়িত্ব না হয় একজন অবৈধ বডিগার্ড নিয়ে নিলো, কিন্তু ছেলেবন্ধুহীন একজন তরুণী, শিশু, অথবা, মায়ের দায়িত্ব নিবে কে?

সরকার যেহেতু নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ, সুতরাং, পরিবারের পুরুষরাই কেবল বিনা বেতনে নারীদের বডিগার্ডের দায়িত্বের ভার নিতে পারে।

ইসলাম নারীদের স্বাধীনতা রোধ করার জন্যে নয়, বরং প্রধানমন্ত্রীর মতো প্রতিটি নারীর সম্মান ও নিরাপত্তার জন্যেই পারিবারিক বডিগার্ডের বিধান রেখেছে।

এখন প্রশ্ন হলো, যদি কোনো সরকার জনগণের সম্পদ, সম্মান ও জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারে, তাহলে নারীদের কি আর পারিবারিক বডিগার্ডের প্রয়োজন হবে?

উত্তর – না।

কারণ, রাসূল (স)-এর মৃত্যুর পর যখন মক্কা ও মদিনায় নারীদের পূর্ণ নিরাপত্তা ছিলো, তখন রাসূল (স)-এর স্ত্রী উম্মুল মু’মিনিন আয়েশা (রা) পারিবারিক কোনো পুরুষের সাহায্য ছাড়া একা একাই মদিনা থেকে মক্কায় হজ্জ করতে চলে যেতেন।

কিন্তু, যখন মদিনা বা মক্কায় নারীদের পূর্ণ নিরাপত্তা ছিলো না, তখন রাসূল (স) নারীদের বলেছেন, কোন নারী যদি দীর্ঘ যাত্রাপথে বের হয়, তাহলে যেনো জীবনসঙ্গী, সন্তান, ভাই, অথবা, বাবাকে সাথে নিয়ে বের হয়।

এখন প্রশ্ন হলো, নারীরা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হয়, বাজার করতে হয়, শিশুর খাবার কিনতে হয়, সব সময় তো পারিবারিক বডিগার্ড পাওয়া যায় না, তখন কি করতে হবে?

এ প্রশ্নের উত্তরও রাসূল (স) দিয়ে গিয়েছেন। তিনি কোনো কোনো হাদিসে বলেছেন, নারীরা যখন তিন দিনের সফরে বের হবে, তখন পারিবারিক বডিগার্ড প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ, তিনি দিনের কম হলে পারিবারিক বডিগার্ড লাগবে না। যেমন,

لاَ تُسَافِرِ المَرْأَةُ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ إِلَّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ

“নারীরা মাহরাম (জীবনসঙ্গী, সন্তান, ভাই, অথবা, বাবাকে) ব্যতীত তিন দিনের সফরে বের হয়ো না।” [বুখারী - ১০৭৬, মাকতাবায়ে শামেলা]

এরপর, রাসূল (স) কিছু কিছু হাদিসে বলেছেন, নারীরা যখন দুই দিনের সফরে বের হবে, তখন পারিবারিক বডিগার্ড প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ, দুই দিনের কম হলে লাগবে না। যেমন,

لاَ تُسَافِرِ المَرْأَةُ يَوْمَيْنِ إِلَّا مَعَهَا زَوْجُهَا أَوْ ذُو مَحْرَمٍ

“বিশ্বাসী নারীরা জীবনসঙ্গী বা মাহরাম ব্যতীত দুই দিনের সফরে বের হয়ো না। [বুখারী - ১১৯৭, মাকতাবায়ে শামেলা]

অন্য কিছু হাদিসে রাসূল (স) বলেছেন, নারীরা দিনে বা রাতে যখনি সফরে বের হবে, তখন একজন পারিবারিক বডিগার্ড প্রয়োজন হবে। যেমন,

لَا تُسَافِرُ المَرْأَةُ مَسِيرَةَ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ إِلَّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ

“নারীরা একদিন অথবা একরাত্রির জন্যে মাহরাম ব্যতীত বের হয়ো না” [তিরমিজি - ১১৭০, মাকতাবায়ে শামেলা]

অর্থাৎ, নারীরা কখন পারিবারিক বডিগার্ড সাথে নিয়ে বের হওয়া প্রয়োজন, এবং কখন প্রয়োজন না, তা সময়ের উপর নির্ভর করে না, বরং নির্ভর করে নিরাপত্তার উপর। যদি নিরাপত্তা না থাকে, তাহলে বাড়ির পাশের স্কুলে যাবার সময়েও কোনো নারী হামলার সম্মুখীন হয়ে যেতে পারে। আবার, যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে, তাহলে ঢাকা থেকে মক্কায় কোনো নারী একা একা যেতে চাইলেও সমস্যা নেই।

রাসূল (স) এমন একটি ভবিষ্যৎ বাণীও করেছিলেন –

وَاللَّهِ لَيَتِمَّنَّ هَذَا الأَمْرُ، حَتَّى يَسِيرَ الرَّاكِبُ مِنْ صَنْعَاءَ إِلَى حَضْرَمَوْتَ، لاَ يَخَافُ إِلَّا اللَّهَ، وَالذِّئْبَ عَلَى غَنَمِهِ

“আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আল্লাহ ইসলামকে এমন সুসম্পন্ন করবেন যে, একজন আরোহী সান‘আ’ থেকে হাযরামাউত একাই সফর করবে; কিন্তু সে রাস্তায় আল্লাহ এবং নিজ ছাগলের উপর নেকড়ের আক্রমণ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করবে না।” [বুখারী – ৬৯৪৩, মাকতাবায়ে শামেলা]
__________

উপরোক্ত সবগুলো কথার সারমর্ম হলো –

১। সরকার জনগণের সম্পদ, সম্মান ও জীবনের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই নারী ধর্ষণের হার বেড়ে গেছে।

২। ইসলাম নারী স্বাধীনতা হরণ করার জন্যে নয়, বরং প্রতিটি নারীকে প্রধানমন্ত্রীর মতো সম্মান ও নিরাপত্তা দেয়ার জন্যে একজন পারিবারিক বডিগার্ডের ব্যবস্থা করেছে।

৩। ইসলাম নারীদেরকে বাইরে যাবার স্বাধীনতা দিয়েছে বলেই উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা) একা একা মক্কায় গিয়ে হজ্জ করতে পেরেছেন।

৪। বাংলাদেশের রাস্তা ঘাটে, যানবাহনে, স্কুল-কলেজে বা জনসমাবেশে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ জন্যে প্রথমত দায়ী সরকার, দ্বিতীয়ত দায়ী নারীদের পারিবারিক পুরুষ বডিগার্ড।

৫। কেবল নারীদের পোশাক, অথবা, কেবল সুযোগ সন্ধানী বখাটে পুরুষের কারণে নয়, বরং সামগ্রিকভাবে পারিবারিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবেই নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...

মুসলিম চিন্তাবিদ ও মনীষীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা

বিংশ শতাব্দীর মুসলিম চিন্তাবিদদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা ১. আয়াতুল্লাহ খমিনী – (ইরান, ১৯০২ - ১৯৮৯) ২. আল্লামা তাবাতাবাঈ – (ইরান, ১৯০৩ - ১৯৮১) ৩. আবুল আ’লা মওদুদী – (পাকিস্তান, ১৯০৩ - ১৯৭৯) ৪. মালিক বিন নাবী – (আলজেরিয়া, ১৯০৫ - ১৯৭৩) ৫. হাসান আল বান্না – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৪৯) ৬. সাইয়েদ কুতুব – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৬৬) ৭. নুর উদ্দিন তোপচু – (তুরস্ক, ১৯০৯ – ১৯৭৫ ৮. ফজলুর রহমান – (পাকিস্তান, ১৯১৯- ১৯৮৮) ৯. মুর্তাজা মোতাহারী – (ইরান, ১৯২০ - ১৯৭৯) ১০. ইসমাইল রাজি আল ফারুকি - (ফিলিস্তিন, ১৯২১ - ১৯৮৬ ) ১১. আলী আইজাত বেগোভিচ – (বসনিয়া, ১৯২৫ - ২০০৩) ১২. নাজিমুদ্দিন এরবাকান – (তুরস্ক, ১৯২৬ - ২০১১) ১৩. শহীদ মোহাম্মদ বেহেশতী – (ইরান, ১৯২৮ - ১৯৮১) ১৪. নাকিব আল-আত্তাস – (ইন্দোনেশিয়া, ১৯৩১ - ) ১৫. হাসান আত-তুরাবী, (সুদান, ১৯৩২ - ২০১৬) ১৬. আলী শরিয়তি – (ইরান, ১৯৩৩ - ১৯৭৭) ১৭. সেজাই কারাকোচ - (তুরস্ক, ১৯৩৩ - ) ১৮. সাইয়্যেদ হোসাইন নাসর – (ইরান, ১৯৩৩ - ) ১৯. হাসান হানাফি – (মিশর, ১৯৩৫ - ) ২০. আবেদ আল জাবেরি – (মরক্কো, ১৯৩৬ - ২০১০) ২১. রশিদ ঘানুশী – (তিউনিসিয়া, ১৯৪১ - ) ২২. নাসের আবু জায়েদ – (মিশর, ১৯৪৩ - ২০...