সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কোর'আনের সূত্র




কেউ কেউ বলেন, রাসূল (স) নাকি এক ইহুদির দ্বারা জাদুগ্রস্ত হয়েছিলেন। এ কথাটি কোর'আনের সাথে সরাসরি বিরুদ্ধে। কোর'আন অনুযায়ী, যারা বলেন যে, রাসূল (স) জাদুগ্রস্ত হয়েছিলেন, তারা জালিম ও সীমালঙ্ঘনকারী।

[আল কোর'আনের সূত্র - ১৭:৪৭; ২৫:৮; ৫:৬৭]
**************

আমরা মুসলিমরা এখন এমন একটি জাতিতে পরিণত হয়েছি, যারা চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই কোর'আন পড়ে। অথচ, কোর'আন নাযিল হয়েছিলো মানুষকে চিন্তা-ভাবনা করা এবং যুক্তি-বুদ্ধির ব্যবহার শেখানোর জন্যে।

[কোর'আনের সূত্র: সূরা ১২/ ইউসুফ, আয়াত - ২]
**************

সফলতার প্রথম সূত্র ঘুমকে নিয়ন্ত্রণ করা। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা রাসূল (স)-কে তাঁর ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্যে প্রথমে জ্ঞান অর্জন করতে বললেন, এবং এরপর ঘুমকে নিয়ন্ত্রণ করতে বললেন।

[কোর'আনের সূত্র: সূরা ৭৩ / মুযযাম্মিল – ১ থেকে ৪]
**************

অজু ছাড়া কি কোর'আন ধরা যাবে?

দুই ধরণের কোর'আন আছে। একটি হলো অর্থসহ কোর'আন এবং অন্যটি হলো অর্থ ছাড়া কোর'আন। সকল আলেমের মতে, অর্থসহ কোর'আন অজু ছাড়া ধরা যাবে। কিন্তু কেবল আরবি কোর'আন অজু ছাড়া ধরা যাবে না বলে কেউ কেউ মত দিয়েছেন। যদিও নাসির উদ্দিন আলবানী সহ অনেক আলেম বলেছেন, আরবি কোর'আনও অজু ছাড়া ধরা যাবে।
[সূত্র: ড মঞ্জুর এলাহী]

**************

মায়ের গর্ভেই মানুষের গঠন পূর্ণ হয়ে যায় না। মানুষের শারীরিক গঠন মায়ের পেটে হলেও, মানসিক গঠন পুরোটাই পৃথিবীতে হয়।

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পৃথিবীতে পাঠান তাদের মানসিক গঠন পূর্ণ করার জন্যে। শারীরিক গঠন আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী করেন, কিন্তু মানসিক গঠনের দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা মানুষের হাতে দিয়ে দিয়েছেন।

মানুষ তাঁর মানসিক গঠনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ মানুষ বা ইনসানে কামিল হতে পারে।


ইনসানে কামিল হবার জন্যে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তিনটি জিনিস দান করেছেন।

১) জ্ঞান ও বুদ্ধি।
২) বুদ্ধির সাহায্যে ভালো বা মন্দ গ্রহণের স্বাধীনতা।
৩) ভালো বা মন্দ পছন্দ করার পর তার ফলাফল সুখ বা দুঃখ ভোগ।

সুখ বা দুঃখের অভিজ্ঞতা লাভ করার পর তা আবার জ্ঞানে পরিণত হয়।

এই যে তিনটি কাজের মাধ্যমে মানুষ তার পূর্ণতা লাভ করে, এর নাম জিহাদ বা জীবন সংগ্রাম। আদম (আ) থেকে শুরু করে পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ এই তিনটি কাজের চক্রে ঘুরতে ঘুরতে এক সময়ে পূর্ণাঙ্গ মানুষে পরিণত হন।

[কোর'আনের সূত্র: সূরা ২/বাকারা- ৩১ থেকে ৩৭ আয়াত]









Image may contain: text






 

ইসলামী রাষ্ট্রে যারা শিরক করে, তাদেরকে তাওহীদের উপদেশ দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু মুশরিকদেরকে শিরক করতে বাধা দেয়া যাবে না, এবং তাদের প্রভুদেরকে গালাগালিও করা যাবে না।

[কোর'আনের সূত্র : ৬/১০৭, ১০৮]
******************

সাদাকাত ও সুদ একে অপরের ব্যস্তানুপাতিক। সাদাকাতের প্রচলন বাড়লে সুদের কারবার কমে যায়, এবং সাদাকাতের প্রচলন কমে গেলে সুদের কারবার বেড়ে যায়।

[কোর'আনের সূত্র: ২/২৭৬]
******************

যখন লিখা-পড়া জানা মানুষের খুবই অভাব ছিলো, কোথাও কোনো কাগজ-কলম পাওয়া যেতো না, মানুষ পশুর চামড়ার উপর লিখতো, সে সময়ে আল্লাহ তায়ালা মানুষদেরকে বললেন যে, কেউ তোমার থেকে ঋণ নিতে চাইলে তা কাগজে লিখে রাখবে এবং দুইজন সাক্ষী রাখবে। অল্প টাকা হোক বা বেশি টাকা হোক, ঋণের টাকাটা কখন ফিরত দিবে, তাও লিখে রাখবে। তুমি যদি না লিখতে পারো তাহলে বিশ্বস্ত অন্য একজনকে দিয়ে লিখিয়ে নিবে। কোনো ভাবেই যদি লিখতে না পারো তাহলে ঋণের বিনিময়ে কোনো কিছু বন্ধক রাখবে।

অর্থাৎ, অল্প হোক বা বেশি হোক, ঋণ দেয়ার সময়ে এমন একটি শক্তিশালী প্রমাণ রাখবে, যাতে ঋণটা সহজেই উদ্ধার করা যায়।

আমরা আমাদের পরিচিত, আত্মীয়-স্বজন অথবা বন্ধুবান্ধবদেরকে ঋণ দেয়ার সময়ে কোনো ধরণের প্রমাণ রাখি না। পরে যখন কেউ ঋণের টাকা দিতে দেরি করে, অথবা দিতে চায় না, তখন বন্ধুত্বের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। তখন আমরা বলতে থাকি, "মানুষকে ঋণ দেয়া উচিত না"।

আসলে কাউকে ঋণ দেয়াটা সমস্যা না, বরং সমস্যা হলো আমরা যে পদ্ধতিতে মানুষকে ঋণ দেই সেখানে। অল্প টাকা হোক বা বেশি টাকা হোক, আপন কোনো বন্ধু হোক বা আত্মীয় হোক, কাউকে সরল মনে বিশ্বাস করে লিখিত দলিল ছাড়া এবং সাক্ষী ছাড়া ঋণ দেয়া ঠিক নয়।

সুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে মানুষকে ঋণ দেয়া উচিত, কিন্তু ঋণ দেয়ার সময় অবশ্যই কোর'আনের পদ্ধতিতে দেয়া প্রয়োজন।

[কোর'আনের সূত্র: ২/২৮২]
******************

ক্ষমতা সর্বদা পরিবর্তনীয়। এখন যদি A ক্ষমতায় থাকে, এবং B জেলে থাকে; কিছুদিন পর B ক্ষমতায় থাকবে এবং A জেলে থাকবে। এটাই আল্লাহর নিয়ম।

[কোর'আনের সূত্র: ৩/১৪০]
******************

ইসলামী সভ্যতার রূপরেখা

ইসলামী সভ্যতা গড়ে ওঠে শহরকে কেন্দ্র করে, শহর গড়ে ওঠে মসজিদকে কেন্দ্র করে, এবং মসজিদ গড়ে ওঠে আল্লাহর একত্ববাদকে কেন্দ্র করে।

পাশ্চাত্য সভ্যতার রূপরেখা

পাশ্চাত্য সভ্যতা গড়ে ওঠে শহরকে কেন্দ্র করে, শহর গড়ে ওঠে মার্কেটকে কেন্দ্র করে, মার্কেট গড়ে ওঠে সুদ ও ব্যাংককে কেন্দ্র করে, এবং ব্যাংক গড়ে ওঠে পুঁজিবাদকে কেন্দ্র করে।

[সূত্রঃ সূরা ২/বাকারা - ২৭৮]
******************

ছোটবেলায় পাঠ্যবইয়ে একটা ভাবসম্প্রসারণ ছিল—'অর্থই অনর্থের মূল'। অর্থাৎ, টাকা-পয়সা ও ধন-সম্পদ হলো সকল হলো সকল অন্যায়ের মূল।

কিন্তু আমরা যদি কোর'আন দিয়ে উপরোক্ত কথাটি যাচাই করি, তাহলে দেখবো যে কথাটি ভুল। কারণ, টাকা-পয়সা ছাড়া ইসলামের মৌলিক দুটি কাজ যথা যাকাত দেয়া ও হজ্জ করা সম্ভব হয় না। কোর'আনের সকল অন্যায়ের মূল হিসাবে অহংকারকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

সুতরাং, টাকাপয়সা নয়, বরং অহংকার-ই সকল অন্যায় ও অবাধ্যতার মূল।

[কোর'আনের সূত্র : ২/বাকারা - ৩৪]
******************

ঈমানের পূর্বশর্ত জ্ঞান, জ্ঞানের পূর্বশর্ত চিন্তা, এবং চিন্তার পূর্বশর্ত সন্দেহ।

অন্যভাবে বললে,

কোনো কিছুর উপর সন্দেহ হলে মানুষ চিন্তা করতে শুরু করে। যতবেশী চিন্তা করে, ততবেশী জ্ঞান অর্জন করতে পারে। যতবেশী জ্ঞান অর্জন করে ততবেশী আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে পারে।

[কোর'আনের সূত্র: ৯৬/সূরা আলাক, ১-৫]
******************

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...

মুসলিম চিন্তাবিদ ও মনীষীদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা

বিংশ শতাব্দীর মুসলিম চিন্তাবিদদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা ১. আয়াতুল্লাহ খমিনী – (ইরান, ১৯০২ - ১৯৮৯) ২. আল্লামা তাবাতাবাঈ – (ইরান, ১৯০৩ - ১৯৮১) ৩. আবুল আ’লা মওদুদী – (পাকিস্তান, ১৯০৩ - ১৯৭৯) ৪. মালিক বিন নাবী – (আলজেরিয়া, ১৯০৫ - ১৯৭৩) ৫. হাসান আল বান্না – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৪৯) ৬. সাইয়েদ কুতুব – (মিশর, ১৯০৬ - ১৯৬৬) ৭. নুর উদ্দিন তোপচু – (তুরস্ক, ১৯০৯ – ১৯৭৫ ৮. ফজলুর রহমান – (পাকিস্তান, ১৯১৯- ১৯৮৮) ৯. মুর্তাজা মোতাহারী – (ইরান, ১৯২০ - ১৯৭৯) ১০. ইসমাইল রাজি আল ফারুকি - (ফিলিস্তিন, ১৯২১ - ১৯৮৬ ) ১১. আলী আইজাত বেগোভিচ – (বসনিয়া, ১৯২৫ - ২০০৩) ১২. নাজিমুদ্দিন এরবাকান – (তুরস্ক, ১৯২৬ - ২০১১) ১৩. শহীদ মোহাম্মদ বেহেশতী – (ইরান, ১৯২৮ - ১৯৮১) ১৪. নাকিব আল-আত্তাস – (ইন্দোনেশিয়া, ১৯৩১ - ) ১৫. হাসান আত-তুরাবী, (সুদান, ১৯৩২ - ২০১৬) ১৬. আলী শরিয়তি – (ইরান, ১৯৩৩ - ১৯৭৭) ১৭. সেজাই কারাকোচ - (তুরস্ক, ১৯৩৩ - ) ১৮. সাইয়্যেদ হোসাইন নাসর – (ইরান, ১৯৩৩ - ) ১৯. হাসান হানাফি – (মিশর, ১৯৩৫ - ) ২০. আবেদ আল জাবেরি – (মরক্কো, ১৯৩৬ - ২০১০) ২১. রশিদ ঘানুশী – (তিউনিসিয়া, ১৯৪১ - ) ২২. নাসের আবু জায়েদ – (মিশর, ১৯৪৩ - ২০...