সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কোর’আনে কি মস্তিষ্কের বিষয়ে কোনো কথা আছে?

ব্রেইন বা মস্তিষ্ক মানুষের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। কিন্তু কোর’আনে কি মানুষের মস্তিষ্কের বিষয়ে কোনো কথা আছে?

উত্তর – জ্বি, আছে।

কোর’আনের অন্তত ১৬ টি স্থানে মানুষের মস্তিষ্কের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু কোর’আনের অধিকাংশ অনুবাদে ‘মস্তিষ্ক’ শব্দটিকে ‘হৃদয়’, ‘অন্তর’ বা ‘মন’ শব্দগুলো দ্বারা অনুবাদ করা হয়েছে।


‘হৃদয়’ শব্দটির জন্যে কোর’আনে ব্যবহার করা হয়েছে ‘কালব’ (قلب) শব্দটি এবং ‘মস্তিষ্ক’ শব্দটির জন্যে কোর’আনে ব্যবহার করা হয়েছে ‘ফুয়াদ’ (فؤاد ) শব্দটি। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে ‘কলব’ ও ‘ফুয়াদ’ শব্দ দুটির অনুবাদ করা হয় ‘হৃদয়’ শব্দটি দ্বারা। অথচ, ফুয়াদ শব্দটির প্রকৃত অর্থ হবে 'মস্তিষ্ক'।

হৃদয় দিয়ে আমরা চিন্তা করি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। আর, মস্তিষ্ক দিয়ে আমরা আমাদের চিন্তা ও সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়ন করি।

কালব ও ফুয়াদের পার্থক্য জানার জন্যে নিম্নের আয়াতটি আমরা দেখতে পারি। আল্লাহ তায়ালা বলছেন –

وَأَصْبَحَ فُؤَادُ أُمِّ مُوسَىٰ فَارِغًا ۖ إِن كَادَتْ لَتُبْدِي بِهِ لَوْلَا أَن رَّبَطْنَا عَلَىٰ قَلْبِهَا لِتَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ

“মূসা জননীর ‘ফুয়াদ’ ( বা মস্তিষ্ক) অস্থির হয়ে পড়ল। যদি আমি তাঁর ‘কলব’ (বা হৃদয়কে) দৃঢ় করে না দিতাম, তবে তিনি মূসাজনিত অস্থিরতা প্রকাশ করেই দিতেন। দৃঢ় করলাম, যাতে তিনি বিশ্বাসীগণের মধ্যে থাকেন।” [সূরা ২৮/ কাসাস - ১০]

উপরোক্ত আয়াতে 'ফুয়াদ' ও 'কলব' দুটি শব্দ-ই ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু অনুবাদ করার সময়ে দুটি শব্দের অর্থই ‘অন্তর’ করা হয়েছে। যদি দুটি শব্দ দ্বারা আল্লাহ তায়ালা একই জিনিস বুঝাতেন, তাহলে অতিরিক্ত একটি শব্দ আল্লাহ তায়ালা ব্যবহার করতেন না।

মস্তিষ্কের কাজ হলো কান দিয়ে শুনা, চোখ দিয়ে দেখা, মুখ দিয়ে চিন্তার প্রকাশ ঘটানো এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলোর নড়াচড়া করানো। কিন্তু হৃদয়ের কাজ হলো চিন্তা করা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। হৃদয় থেকে মস্তিষ্কে যখন কোনো সিদ্ধান্ত আসে না, তখন মানুষ অস্থির হয়ে পড়ে এবং কি করবে বুঝতে পারে না। মুসা (আ)-কে যখন তাঁর জননী নদীতে ভাসিয়ে দিলেন, তখন তিনি কি করবেন তা বুঝতে পারছিলেন না। ফলে তাঁর মস্তিষ্ক অস্থির হয়ে পড়লো। এরপর, আল্লাহ তায়ালা মুসা-জননীর হৃদয়ে সিদ্ধান্ত পাঠিয়ে দিলেন, এবং তাঁর মধ্যে স্থিরতা আসলো।

ফুয়াদ অর্থ যে মস্তিষ্ক তা বুঝার জন্যে আমরা আরেকটি আয়াত দেখতে পারি। আল্লাহ তায়ালা বলছেন –

مُهْطِعِينَ مُقْنِعِي رُءُوسِهِمْ لَا يَرْتَدُّ إِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْ ۖ وَأَفْئِدَتُهُمْ هَوَاءٌ

“তারা তাদের মস্তক উপরে তুলে ভীত-বিহ্বল চিত্তে দৌড়াতে থাকবে। নিজেদের প্রতি তাদের দৃষ্টি ফিরে আসবে না এবং তাদের ‘ফুয়াদ’ (বা মস্তিষ্ক) উড়ে যাবে”। [সূরা ১৪/ ইবরাহীম - ৪৩]

এ আয়াতে দেখুন, ফুয়াদের অর্থ যদি ‘হৃদয়’ করা হয় তাহলে অর্থটি মিলবে না, কিন্তু এখানে ফুয়াদের অর্থ যদি ‘মস্তিষ্ক’ করা হয়, তাহলে আয়াতের প্রথমে উল্লেখিত ‘মস্তক’ শব্দের সাথে ‘মস্তিষ্ক’ অর্থটি মিলে যাবে।

কলব ও ফুয়াদের পার্থক্য বিস্তারিত জানার জন্যে অনেকগুলো লেখার লিংক কমেন্টে দিয়েছি।

কিন্তু, আপাতত আমরা এটা জানলাম যে, কোর’আনে মানুষের মস্তিষ্ক বা ব্রেইন সম্পর্কে কমপক্ষে ১৬ টি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত রয়েছে। এবং আয়াতগুলো হলো - ৬/১১০; ৬/১১৩; ১১/১২০; ১৪/৩৭; ১৪/১৩; ১৬/৭৮; ১৭/৩৬; ২৩/৭৮; ২৫/৩২; ২৮/১০; ৩২/৯; ৪৬/২৬; ৫৩/১১; ৬৭/২৩; ১০৪/৭

সবগুলো আয়াত পড়লে আমরা সহজেই বুঝতে পারবো যে, ফুয়াদ অর্থ অন্তর বা হৃদয় নয়, বরং ফুয়াদের অর্থ মস্তিষ্ক।


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

গণতন্ত্র সময়ের একটি চাহিদা

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি? ধরুন, ১৬১৭ সাল। উসমানী খেলাফতের অধীনে তখন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূমি। সেই এক-তৃতীয়াংশ ভূমির খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছেন সুলতান আহমদ। কেউ যদি তখন বলতো, আমরা সুলতান আহমদের পরিবর্তন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে তখন কিভাবে সে নির্বাচনটি হত? তখন তো আর ইন্টারনেট বা টেলিভিশন ছিল না, এমনকি প্লেনও ছিল না। নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচনী তফসিলটি বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রত্যেকের কাছে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করতে করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লেগে যেতো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল মানুষ যেহেতু খলীফা প্রার্থী হবার অধিকার রাখে, সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে তাঁদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে করতে সময় লাগতো আরো ২ বছর। নির্বাচন কমিশনার লক্ষ লক্ষ মনোনয়ন পত্র বাচাই করতে করতে লাগতো আরো ১ বছর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দিতে হতো কমপক্ষে আরো ১ বছর। কারণ প্রার্থীদেরকে বহুদূর থেকে এসে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতো। তারপর, প্রা...