সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

উসমানী খেলাফতের বিচার ব্যবস্থা

[১]


উসমানী খেলাফত হলো মুসলিমদের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের খেলাফত। পৃথিবীর বিশাল একটি অঞ্চল প্রায় ৬২৫ বছর তাদের অধীনে ছিলো। এর অন্যতম একটি কারণ হলো, উসমানী খেলাফতের আইন, কানুন ও বিচার ব্যবস্থা ছিলো তৎকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত।

ব্রিটেন ও ফ্রান্স সহ তৎকালীন ইউরোপের অনেক দেশ উসমানী খেলাফতের আইন-কানুন ও বিচার ব্যবস্থা শেখার জন্যে ইস্তাম্বুলে আসতো, এবং নিজেদের দেশে গিয়ে সেসব আইন-কানুন প্রয়োগ করতো।

[২]

উসমানী খেলাফতের অধীনে ইহুদি ও খ্রিষ্টান সহ সকল ধর্মাবলম্বীদের পূর্ণ স্বাধীনতা ছিলো। অমুসলিমদেরকে আল্লাহর আমানত হিসাবে বিবেচনা করা হতো। এবং মুসলিম ও অমুসলিমদেরকে সমান অধিকার প্রদান করা হতো।

[৩]

সুলতান মেহমেত ইস্তাম্বুল বিজয় করার পর খ্রিষ্টানদের সাথে একটি চুক্তি করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, ইস্তাম্বুল বিজয়ের আগে যেভাবে খ্রিষ্টানদের ইবাদাত ও সংস্কৃতি পালন করার স্বাধীনতা ছিলো, ইস্তাম্বুল বিজয়ের পরেও ঠিক একইভাবে খ্রিষ্টানদেরকে পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করা হবে।

কেউ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

[৪]

‘সুলতান সুলাইমান’ সিরিয়াল থেকে এখানে একটি ছোট্ট ভিডিও সংযুক্ত করে দিয়েছি। তখন প্রধান বিচারক ছিলেন আবু সুদ এফেন্দি। একটি মামলা কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তা এখানে দেখানো হয়েছে।

একজন খ্রিষ্টানের দোকানে গিয়ে একজন মুসলিম যুবক ঈসা (আ)-এর প্রতিকৃতি নষ্ট করে দেয়, এবং ঐ খ্রিষ্টানকে মারধর করে। এর শাস্তি হিসাবে আবু সুদ এফেন্দি ঐ মুসলিম যুবককে ১০০টি বেত্রাঘাত করার হুকুম দান করেন।

https://www.youtube.com/watch?v=RCCAfsAl0sY&feature=youtu.be

এটি ইতিহাস নির্ভর একটি ভিডিও চিত্র।

[৫]

বর্তমান ‘আই এস আই’ এর মতো অমুসলিমদের গলা কাটার নামে তথা কথিত “শরিয়া” আইন উসমানী খেলাফতের সময়ে ছিলো না। একইভাবে ধর্ম-বিদ্বেষী সেক্যুলার আইনও উসমানী খেলাফতের সময়ে ছিলো না। বরং এই দুই চরমপন্থিদের মধ্যবর্তী ছিলো উসমানী খেলাফতের আইন-কানুন ও বিচার ব্যবস্থা। এ কারণেই উসমানী খেলাফত এতো দীর্ঘ সময়ে বিশাল ভূখণ্ডে খিলাফতের দায়িত্বে ছিলো।


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

গণতন্ত্র সময়ের একটি চাহিদা

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি? ধরুন, ১৬১৭ সাল। উসমানী খেলাফতের অধীনে তখন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূমি। সেই এক-তৃতীয়াংশ ভূমির খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছেন সুলতান আহমদ। কেউ যদি তখন বলতো, আমরা সুলতান আহমদের পরিবর্তন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে তখন কিভাবে সে নির্বাচনটি হত? তখন তো আর ইন্টারনেট বা টেলিভিশন ছিল না, এমনকি প্লেনও ছিল না। নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচনী তফসিলটি বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রত্যেকের কাছে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করতে করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লেগে যেতো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল মানুষ যেহেতু খলীফা প্রার্থী হবার অধিকার রাখে, সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে তাঁদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে করতে সময় লাগতো আরো ২ বছর। নির্বাচন কমিশনার লক্ষ লক্ষ মনোনয়ন পত্র বাচাই করতে করতে লাগতো আরো ১ বছর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দিতে হতো কমপক্ষে আরো ১ বছর। কারণ প্রার্থীদেরকে বহুদূর থেকে এসে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতো। তারপর, প্রা...