সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইসলামপন্থীরা নির্বাচনে হেরে গেলেও আমি কেন হতাশ নই?

তুরস্কের স্থানীয় নির্বাচনে আনকারা ও ইস্তানবুলে একে পার্টি হেরে গেছে। এতে শোকাহত হবার কিছু নেই। বরং এতেই প্রমাণিত হয় যে তুরস্কে খুব ভালোভাবে গণতন্ত্রের চর্চা হয়। এতোদিন যারা এরদোয়ানকে সন্দেহ করতেন, তিনি জোর করে ক্ষমতায় আসেন, এবার তাদের সেই ভুলটা ভাঙবে।

গণতন্ত্রের একটি ভালো দিক হলো এ পদ্ধতিতে কেউ বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারে না। এটা আল্লাহ তায়ালার একটি প্রাকৃতিক নিয়ম। তিনি কাউকে বেশি দিন ক্ষমতায় রাখতে চান না। এর কারণ হিসাবে কোর'আনে বলা হয়েছে -

وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْأَرْضُ

"আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে সারা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেতো।" [সূরা ২/বাকারা - ২৫১]

অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন -

وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوَاتٌ وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا

"আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তবে ধ্বংস হয়ে যেত (খ্রিষ্টানদের) গির্জা, (ইহুদীদের) সিনাগগ, উপাসনালয়, এবং মসজিদসমূহ, যে স্থানগুলাতে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয়।" [সূরা ২২/হজ্ব - ৪০]

খালিদ বিন ওয়ালিদ যখন সারা বিশ্ব জয় করা শুরু করলেন, তখন উমর (রা) তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিলেন। সাহাবীরা উমর (রা)-কে বললেন, "আপনি এমন একজন সেনাপতিকে অপসরণ করছেন, যিনি জীবনে কোনো যুদ্ধেই হারেননি।"

উমার (রা) বললেন, "এ কারণেই খালিদ বিন ওয়ালিদকে সরিয়ে দিচ্ছি। কারণ, সাধারণ মানুষ মনে করছে, আল্লাহর সাহায্যে নয়, বরং খালিদ বিন ওয়ালিদের দক্ষতার কারণেই মুসলিমরা বিশ্ব জয় করছে। মুসলিমদের মাঝে যাতে ব্যক্তিপূজা শুরু না হয়, তাই আমি খালিদকে সরিয়ে দিচ্ছি।"

তুরস্কের আনকারায় ও ইস্তানবুলে একে পার্টি ক্ষমতায় না আসাতে অন্যদের মতো আমি শোকাহত নই। ক্ষমতার পরিবর্তন হওয়াটা আল্লাহ তায়ালার-ই একটি নিয়ম। হয়তো এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালা মুসলিমদের ভালো কিছু চান।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

গণতন্ত্র সময়ের একটি চাহিদা

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি? ধরুন, ১৬১৭ সাল। উসমানী খেলাফতের অধীনে তখন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূমি। সেই এক-তৃতীয়াংশ ভূমির খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছেন সুলতান আহমদ। কেউ যদি তখন বলতো, আমরা সুলতান আহমদের পরিবর্তন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে তখন কিভাবে সে নির্বাচনটি হত? তখন তো আর ইন্টারনেট বা টেলিভিশন ছিল না, এমনকি প্লেনও ছিল না। নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচনী তফসিলটি বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রত্যেকের কাছে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করতে করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লেগে যেতো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল মানুষ যেহেতু খলীফা প্রার্থী হবার অধিকার রাখে, সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে তাঁদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে করতে সময় লাগতো আরো ২ বছর। নির্বাচন কমিশনার লক্ষ লক্ষ মনোনয়ন পত্র বাচাই করতে করতে লাগতো আরো ১ বছর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দিতে হতো কমপক্ষে আরো ১ বছর। কারণ প্রার্থীদেরকে বহুদূর থেকে এসে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতো। তারপর, প্রা...