সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নারী কি পুরুষের পাঁজরের হাড়?

“নারীদেরকে পুরুষের পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে” – এ কথাটি আমরা প্রায়ই শুনি। ইসলামকে বিতর্কিত করার জন্যে অনেকেই এ কথাটি বলে থাকেন।

কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, ইসলাম ধর্মের কোথাও এ কথাটি নেই। এটি হলো খ্রিস্টান ধর্মের একটি কথা।

বাইবেলে বলা হয়েছে –

Then the LORD God made a woman from the rib he had taken out of the man, and he brought her to the man.
[Bible, New International Version, Genesis,Chapter 2, Verse 22]

“স্রষ্টা পুরুষের পাঁজর থেকে একটি হাড় নিয়ে তা দিয়ে একজন নারীকে সৃষ্টি করেছেন। এবং তিনি নারীটিকে পুরুষের সামনে উপস্থিত করলেন।“

বাইবেলের এই লাইনটির ব্যাখ্যায় খ্রিস্টানগণ বলেন, আল্লাহ তায়ালা প্রথম আদম (আ)-কে সৃষ্টি করেছেন। এরপর আদমের পাঁজর থেকে একটি হাড় সংগ্রহ করেন। তারপর তা থেকে হাওয়া (আ)-কে সৃষ্টি করেন।

খ্রিস্টানদের এ কথাটি এখন মুসলিম সমাজে খুবই পরিচিত। কিন্তু এর কারণ কি? মূলত, রাসূল (স) –এর একটি হাদিসকে কোর’আনের সাহায্যে ব্যাখ্যা না করে, বাইবেলের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলেই এ সমস্যাটি সৃষ্টি হয়েছে।

হাদিসটিতে রাসূল (স) বলেছেন –

وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا، فَإِنَّهُنَّ خُلِقْنَ مِنْ ضِلَعٍ، وَإِنَّ أَعْوَجَ شَيْءٍ فِي الضِّلَعِ أَعْلاَهُ، فَإِنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهُ كَسَرْتَهُ، وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَزَلْ أَعْوَجَ، فَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا

“তোমাদের আদেশ করা হচ্ছে, তোমরা নারীদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। কেননা, তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে বুকের হাড় থেকে। সবচেয়ে প্যাঁচানো বা বাঁকানো হচ্ছে বুকের ওপরের হাড়টি। যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে ভেঙ্গে যাবে। আর যদি ছেড়ে দাও তাহলে সে আর বেশি বাঁকা হবে না। অতএব, তোমাদের আদেশ করা হচ্ছে, তোমরা নারীদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে”।
[সহীহ বুখারি, হাদিস নং – ৫১৮৬, খণ্ড – ৭, পৃষ্ঠা – ২৬]

কিছু কিছু অজ্ঞ-ধার্মিক এ হাদিসটি উল্লেখ করে বলেন – “নারীরা খুবই খারাপ। কারণ তারা হলো বাঁকা হাড়”। আবার, কিছু কিছু নারীবাদী এই হাদিসটিকে উল্লেখ করে বলেন – “ইসলাম নারীদেরকে অপমান করেছে”।

আসলে, এই দুই পক্ষের কেউই হাদিসটিকে কোর’আনের সাহায্যে বুঝতে পারেননি।

প্রথমত দেখুন, হাদিসটির প্রথম ও শেষ বাক্যে বলা হয়েছে – “নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার করার জন্যে তোমাদেরকে আদেশ দেয়া হচ্ছে।” এখানে এ বাক্যটি একবার বললেই হত। কিন্তু রাসূল (স) নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার করার গুরুত্ব বুঝানোর জন্যে একই হাদিসের শুরুতে এবং শেষে একই কথা দুইবার বলেছেন। সুতরাং, এ হাদিসের উদ্দেশ্য হলো নারীদেরকে সম্মান করা, তাঁদেরকে অপমান করা নয়।

অনেকে এ হাদিসটির উদ্দেশ্য না বুঝার কারণে হাদিসটির অনেক অপব্যবহার করেন। এবং হাদিসটিকে বাইবেলের সাথে মিলিয়ে ফেলেন।

এবার আসি, যা নিয়ে বিতর্ক, সে আলাপে।

নারীদের স্বভাবকে মেনে নিয়েই তাঁদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। এটা রাসূল (স) এর আদেশ। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি (স) বলেছেন – নারীদেরকে বুকের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এবং বুকের ওপরের হাড়টি হচ্ছে সবচেয়ে পাতলা, জটিল ও বাঁকানো। তা যদি কেউ সোজা করতে চায়, তাহলে তা ভেঙ্গে যাবে। তাই, হাড়টিকে সোজা করতে চাওয়া উচিত না।

রাসূল (স) তাঁর কোনো হাদিসেই বলেননি যে, নারীদেরকে পুরুষের বুকের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি কখনো “পুরুষ” শব্দটি উল্লেখ করেননি, তিনি কেবল বলেছেন ‘বুকের হাড়’ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এখানে নারীর বুকের হাড় থেকে, নাকি, পুরুষের বুকের হাড় থেকে, তা কোনো হাদিসেই উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু, বাইবেলে উল্লেখ করা হয়েছে যে, “নারীদেরকে পুরুষের বুকের হাড় থেকে সৃষ্টি করার পর তাকে পুরুষের সামনে হাজির করা হয়েছে”।

এখন, আমরা যদি কোর’আন দিয়ে এই হাদিসটি বোঝার চেষ্টা করি, তাহলে সম্পূর্ণ বিপরীত একটি চিত্র দেখতে পাব।

কোর’আনে বলা হয়েছে –

سُبْحَـٰنَ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلْأَزْوَ‌ٰجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنۢبِتُ ٱلْأَرْضُ وَمِنْ أَنفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُونَ

“পবিত্র তিনি যিনি পৃথিবী থেকে উৎপন্ন সকল উদ্ভিদকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। মানুষদের নিজেদেরকেও তিনি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। এবং তারা যা জানে না, তাদেরকেও জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন”। [সূরা ৩৬ / ইয়াসিন - ৩৬]

এ আয়াতে স্পষ্ট যে, আল্লাহ তায়ালা নারী ও পুরুষ উভয়কে একসাথে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। আগে পুরুষকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর পুরুষের পাঁজরের হাড় থেকে নারীকে সৃষ্টি করেছেন, এটা কোর’আনে কোথাও বলা হয়নি।

যেমন, আরেকটি আয়াত দেখুন। আল্লাহ তায়ালা বলছেন –

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَـٰكُم مِّن ذَكَرٍۢ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَـٰكُمْ شُعُوبًۭا وَقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوٓا۟ ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ ٱللَّهِ أَتْقَىٰكُمْ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌۭ

“হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হতে পার”। [সূরা ৪৯ /হুজরাত - ১৩]

দেখুন, এই আয়াতেও বলা হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা সমস্ত মানব জাতীকে নারী ও পুরুষ উভয় থেকে সৃষ্টি করেছেন। যদি আমরা বিশ্বাস করি, “নারীদেরকে পুরুষদের পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে”; তাহলে এই আয়াতের সাথে বৈপরীত্য তৈরি হয়।

এখন অনেকে হয়তো বলবেন, সকল নারীকে পুরুষদের পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা না হলেও, হাওয়া (আ) –কে আদম (আ)-এর পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

এ কথাটিও ভুল প্রমাণিত হয়, যখন আমারা কোর’আনের নিচের আয়াতটি দেখব। আল্লাহ তায়ালা বলছেন –

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُوا۟ رَبَّكُمُ ٱلَّذِى خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍۢ وَ‌ٰحِدَةٍۢ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًۭا كَثِيرًۭا وَنِسَآءًۭ ۚ وَٱتَّقُوا۟ ٱللَّهَ ٱلَّذِى تَسَآءَلُونَ بِهِۦ وَٱلْأَرْحَامَ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًۭا

“হে মানবমণ্ডলী! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। তিনি তোমাদেরকে একটি ‘নফস’ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীকে সৃষ্টি করেছেন। আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট সাহায্য চেয়ে থাক। এবং আত্মীয়দের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন”।

এ আয়াতে বলা হচ্ছে যে, আল্লাহ তায়ালা নারী ও পুরুষ সৃষ্টি করার আগে একটি নফস বা সত্তা সৃষ্টি করেন। ঐ সত্তাটি নারীও নয়, পুরুষও নয়। তারপর, ঐ সত্তা থেকে তার সঙ্গীকে সৃষ্টি করেন। এরপর এ দুটি সত্তা থেকে আল্লাহ তায়ালা পুরুষ ও নারী উভয়কে একসাথে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি শুরু করেন।

এ আয়াতে ‘নফস’ শব্দটি একটি নারী-বাচক শব্দ। প্রথম নফস থেকে দ্বিতীয় যে নফসটি সৃষ্টি করা হয়েছে তা একটি পুরুষ-বাচক শব্দ। কেননা, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন – [وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا] অর্থাৎ, He created her husband.

সুতরাং, প্রথম নফসকে যদি নারী বা পুরুষ কিছু বলতেই হয়, তাহলে বলতে হবে প্রথম নফস ছিল নারী। এবং দ্বিতীয় নফস ছিল পুরুষ। কিন্তু, আসলে প্রথম ‘নফস’ নারী বা পুরুষ কিছুই ছিল না।

আরবি ভাষায় 'নফস' মানে হুবহু একই বস্তু। যে কোনো দুটি বস্তু হুবহু একই রকম বুঝাতে আরবি ভাষায় বলা হয় 'নফসু সাই' [نفس الشيء]। তাই, কোর'আনের যেসব আয়াতে প্রথম নফস থেকে দ্বিতীয় নফস সৃষ্টি করার কথা বলা হয়েছে, সেখানে নারী বা পুরুষ কাউকে পৃথক করা সম্ভব হয় না।

এখন একটি প্রশ্ন হতে পার, এখানে উল্লেখিত 'নফস' বা 'একই বস্তু'টা আসলে কি, যা থেকে আল্লাহ তায়ালা নারী ও পুরুষ উভয়কে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন?

এর উত্তর কোর'আনে রয়েছে। আল্লাহ বলছেন -

وَأَنَّهُۥ خَلَقَ ٱلزَّوْجَيْنِ ٱلذَّكَرَ وَٱلْأُنثَىٰ مِن نُّطْفَةٍ إِذَا تُمْنَىٰ

"তিনিই পুরুষ ও নারী উভয়কে জোড়ায় জোড়ায় একটি শুক্রবিন্দু থেকে সৃষ্টি করেন, যখন তা স্খলিত হয়"। [সূরা ৫৩/নাজম - ৪৫, ৪৬]

অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালা পুরুষ ও নারীদেরকে যে একই বস্তু থেকে সৃষ্টি করেছেন, তা হল 'নুতফাহ' বা শুক্রবিন্দু।

এই আয়াতের আরো বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় সূরা কিয়ামা'র শেষের আয়াতগুলোতে। আল্লাহ তায়ালা বলছেন -

أَلَمْ يَكُ نُطْفَةًۭ مِّن مَّنِىٍّۢ يُمْنَىٰ - ثُمَّ كَانَ عَلَقَةًۭ فَخَلَقَ فَسَوَّىٰ - فَجَعَلَ مِنْهُ ٱلزَّوْجَيْنِ ٱلذَّكَرَ وَٱلْأُنثَىٰٓ

মানুষ কি স্খলিত শুক্রবিন্দু ছিল না? অতঃপর সে রক্তপিণ্ডে পরিণত হয়। তারপর আল্লাহ তাকে আকৃতি দান করেন এবং সুঠাম করেন। অতঃপর তিনি তা থেকে পুরুষ ও নারী যুগল সৃষ্টি করেন। [সূরা কিয়ামা - ৩৭ থেকে ৩৯]

সুতরাং, কোর’আন থেকে স্পষ্ট যে, নারীকে পুরুষের পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়নি। বরং, নারী ও পুরুষ উভয়কে একই শুক্রবিন্দু থেকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা হয়েছে। এ কারণে, রাসূল (স) তাঁর কোনো হাদিসেই পুরুষ শব্দটি উল্লেখ না করে কেবল বলেছেন, নারীদেরকে বুকের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

_____

এখন আসি মূল প্রশ্নে। কেন রাসূল (স) বলেছেন, নারীদেরকে বুকের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে?

এর উত্তর মিলিবে অন্য একটি হাদিসে। রাসূল (স) বলেন –

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «المَرْأَةُ كَالضِّلَعِ، إِنْ أَقَمْتَهَا كَسَرْتَهَا، وَإِنِ اسْتَمْتَعْتَ بِهَا اسْتَمْتَعْتَ بِهَا وَفِيهَا عِوَجٌ»

“নারীরা হলো বুকের হাড়ের মত। যদি তুমি তাঁকে সোজা করতে চাও, তাহলে ভেঙ্গে যাবে। তুমি যদি তাঁর থেকে লাভবান হতে চাও, তাহলে তাকে তাঁর মত বাঁকা বা জটিল অবস্থাতে রেখেই তোমাকে লাভবান হতে হবে”।
[সহীহ বুখারি, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৫১৮৪, খণ্ড – ৭, পৃষ্ঠা - ২৭]

নারীরা বুকের হাড় থেকে সৃষ্টি হয়েছে, এর মানে এই নয় যে, নারীরা আসলেই বুকের হাড় থেকে সৃষ্টি হয়েছে। এর মানে হলো, নারীরা বুকের হাড়ের মত। রাসূল (স)-এর এ হাদিসটি থেকে তাই প্রমাণিত হয়।
_____

এবার, দ্বিতীয় প্রশ্নে আসি। কেন রাসূল (স) নারীদেরকে বুকের হাড়ের সাথে তুলনা করেছেন?

এক।

বুকের হাড়গুলো আমদের হৃদয়ের খুব কাছাকাছি থাকে। এগুলো বাঁকা হয়ে আমাদের হৃদয়কে জড়িয়ে ধরে, এবং আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করে। আমরা যদি বুকের হাড়গুলোকে সোজা করতে চাই, তাহলে আমাদের হৃদয় রক্তক্ষরণ হবে। নারীরা পুরুষদেরকে ভালোবেসে জড়িয়ে রাখে। হৃদয়ের জন্যে বুকের বাঁকা হাড়গুলো যেমন গুরুত্বপূর্ণ, পুরুষদের জন্যেও নারীরা তেমন গুরুত্বপূর্ণ।

দুই।

অনেক পুরুষ বলেন, নারীকে আমার মত হতে হবে। আবার, অনেক নারী বলেন, পুরুষকে আমার মত হতে হবে। এখানে কে কাকে ছাড় দিবে? এটি একটি গুরুতর ও জটিল প্রশ্ন। রাসূল (স) এ প্রশ্নের সমাধান দিয়ে দিয়েছেন এ হাদিসটি দ্বারা। তিনি পুরুষদেরকে আদেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা নারীদেরকে তোমাদের মত করতে চাইবে না। তাদেরকে তাঁদের মত থাকতে দিবে। এবং তাঁদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে।

অর্থাৎ, পুরুষদের উচিত নারীদের স্বভাবের সাথে নিজেদেরকে মানিয়ে নেয়া।

নারীদের আচরণ পুরুষদের আচরণ থেকে ভিন্ন হবার কারণে কোনো পুরুষ যাতে নারীদের সাথে খারাপ আচরণ না করে। সে জন্যেই রাসূল (স) বলেছেন –

“তোমাদের আদেশ করা হচ্ছে, তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। কেননা, তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে বুকের হাড় থেকে। সবচেয়ে প্যাঁচানো বা বাঁকানো হচ্ছে বুকের ওপরের হাড়টি। যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে ভেঙ্গে যাবে। আর যদি ছেড়ে দাও তাহলে সে আর বেশি বাঁকা হবে না। অতএব, তোমাদের আদেশ করা হচ্ছে, তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে”।

[নারী ও পুরুষের আচরণের পার্থক্য জানার জন্যে এবং উপরোক্ত হাদিসটি আরো ভালোভাবে বোঝার জন্যে আগের একটি লেখা কমেন্টে দিলাম]

তিন।

রাসূল (স)-এর এই হাদিসটি দ্বারা নারীদেরকে অপমান করা হয়নি, বরং নারীদেরকে অনেক বেশি সম্মানিত করা হয়েছে।

একটি প্রিয় সম্পর্ক ও একটি সুখী সংসার গড়ার মূলমন্ত্র হলো এই হাদিসটি। কিন্তু অনেকেই হাদিসটিকে অপব্যবহার করেন।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

What is The Ruling Regarding a Women Going to Hajj Without a Mahram?

Answered by Dr. Yusuf al-Qaradawi | Translated by Sister Marwa The original rule stipulated in shari’a that a woman is not to travel alone.  Rather, she has to be accompanied by her husband or any other mahram of hers.  This rule is supported by narrations of Bukhari and others that Ibn-Abbas (ra) said, that the Prophet (pbuh) said, “A woman should not travel except with a mahram, and no man should visit her except in the presence of a mahram.” Abu-Hurairah related the following on behalf of the Prophet (pbuh), “It is not permissible for a woman who believes in Allah and the Last Day to travel for one day and night except with a mahram.” Abu-Sa’id reported that the Prophet (pbuh) said, “A woman should not travel for two days except she is accompanied by her husband or a mahram.”