সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হানাফি ও আহলে হাদিসের মৌলিক দ্বন্দ্ব।

হানাফিদের মতে, কোর’আন হলো ইসলামের প্রধান উৎস, এবং হাদিস হলো ইসলামের দ্বিতীয় উৎস। তাই, কোনো হাদিস যদি কোর’আনের বিপরীতে যায়, তাহলে হাদিসটি বাদ দিয়ে কোর’আনের উপর আমল করতে হবে।

হানাফিরা তাদের দলীল হিসাবে একটি হাদিস উপস্থাপন করেন। রাসূল (স) বলেন –

مَا جَاءَكُمْ عَنِّي فَاعْرِضُوُه عَلَى كِتَابِ اللهِ، فَمَا وَافَقَهُ فَأَنَا قُلْتُهُ، وَمَا خَالَفَهُ فَلَمْ أَقُلْهُ
[الرسالة للشافعي 1/ 224]

“আমার পক্ষ থেকে কোনো হাদিস তোমাদের নিকট আসলে সেটাকে আল্লাহর কিতাবের সাথে মিলাও। যদি সে হাদিস কোর’আনের সাথে মিলে, তাহলে সেটা আমার কথা। আর যদি সে হাদিস কোর’আনের সাথে না মিলে, তাহলে সেটা আমার কথা নয়।”

উপরোক্ত হাদিসের ভিত্তিতে হানাফিদের সামনে যে কোনো হাদিস আসলে তারা সেটাকে কোর'আনের মানদণ্ডে যাচাই করে নেয়। কোর'আনের সাথে মিললে হাদিসটি গ্রহণ করে, না মিললে বাদ দেয়। হানাফিদের কাছে যে কোনো হাদিসের বর্ণনাকারীদের সনদের চেয়েও মূল হাদিসটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যদিকে, ইমাম শাফেয়ী কিংবা আহলে হাদিসের মতে, কোর’আন ও হাদিস উভয়টি রাসূল (স) থেকে আমরা পেয়েছি। সুতরাং কোর’আন ও হাদিস উভয়টির মর্যাদা সমান। তাই, কোর’আন দিয়ে কোনো হাদিসকে বাতিল করা যাবে না।

আহলে হাদিসগণ তাদের দলীল হিসাবে একটি হাদিস উল্লেখ করেন। রাসূল (স) বলেন –

لاَأُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ مُتَّكِئًا عَلَى أَرِيكَتِهِ يَأْتِيهِ الأَمْرُ مِنْ أَمْرِي مِمَّا أَمَرْتُ بِهِ أَوْ نَهَيْتُ عَنْهُ، فَيَقُولَ: لاَ أَدْرِي، مَا وَجَدْنَا فِي كِتَابِ اللهِ اتَّبَعْنَاهُ
[الرسالة للشافعي 1/ 226]

“আমি তার সাথে কখনো দেখা করতে চাই না, যার কাছে আমার পক্ষ থেকে কোনো আদেশ বা নিষেধ আসার পর, সে চেয়ারে বসে থেকে বলে, ‘এসব হাদিস আমরা জানি না, আমরা আল্লাহর কিতাবে যা পেয়েছি, কেবল তা অনুসরণ করি।’

উপরোক্ত হাদিসের ভিত্তিতে আসলে হাদিসের আলেমগণ কোর’আন ও হাদিসকে সম পর্যায়ের মনে করেন। এবং কোর’আন দিয়ে হাদিসকে বাতিল করার বিরোধিতা করেন। ইমাম শায়েফী ও আহলে হাদিসদের কাছে হাদিসের মূল টেক্সট বা মতনের চেয়েও বর্ণনাকারীদের সনদ বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ইমাম আবু হানিফা ও আহলে হাদিসের মাঝে পার্থক্যটা মেথডলজিকাল পার্থক্য। সাধারণ মানুষ যে কোনো একটা মেথডলজি ফলো করলেই হয়। এগুলো নিয়ে বিতর্ক করাটা স্কলারদের কাজ, সাধারণ মানুষের কাজ নয়।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...

হাতমোজা সমাচার

আমার আপু ইনবক্সে আমাকে একটা লেখা পাঠিয়েছেন। হাতমোজা নিয়ে অন্য একজনের লেখা । লেখার নিচে মন্তব্যগুলো পড়ে আমার মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছে। ১। মুসলিমদের মহাসম্মেলনে অর্থাৎ হজ্জের সময়ে লাখো লাখো পুরুষের সামনে নারীরা হাতমোজা ও নিকাব পরেন না কেন? ২। নারীরা হাতমোজা ও নিকাব পরে যদি একেবারে ১০০% ঢেকে ফেলেন, তাহলে সূরা নূরের ৩০ নং আয়াতে পুরুষদেরকে দৃষ্টি নত করতে বলা হয়েছে কেন? ৩। সূরা নূরের ৩১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “নারীদের যা প্রকাশ্য থাকার তা ব্যতীত” তাদের বক্ষদেশ আভরণ করার জন্যে। কিন্তু হাতমোজা দিয়ে ১০০% ঢেকে ফেললে নারীদের আর প্রকাশ্য থাকে কি? ৪। রাসূল (স) সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বলেছেন, “সহজ কর, কঠিন করো না”। কোনো নারী যদি হাতমোজা না পরতে চান, তাহলে তার জন্যে কঠিন কঠিন নিময় করার জন্যে কি রাসূল (স) বলেছেন? ৫। ঈমান ও তাকওয়া কি মানুষের হৃদয়ে থাকে না হাতে-পায়ে থাকে?