সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আহলে হাদিসগণ সবসময় কি সহিহ হদিস মানেন?

আহলে হাদিসগণ সবসময় কি সহিহ হদিস মানেন?

উত্তর হলো - না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আহলে হাদিসের ইমামগন সরাসরি রাসূল (স) থেকে সহিহ হাদিস পাবার পরেও সেটি আমল করেন না।

যেমন,

ফজরের সালাত একটু দেরি করে পড়ার ব্যাপারে রাসূল (স)-এর একটি সহিহ হাদিস রয়েছে। রাসূল (স) বলেন -

أسْفِرُوا بِالفَجْرِ، فَإِنَّ ذَلِكَ أعْظَمُ لِلْأَجْرِ

[الرسالة للشافعي 1/ 282] [سنن الترمذي ت شاكر 1/ 289]

“তোমরা ফজরের নামাজ একটু আলো হলে পড়বে। কেননা তাতে অনেক সাওয়াব রয়েছে।” [তিরমিজি - ১৫৪]

এ হাদিসটি সহিহ হবার পরেও এই হাদিসের উপর আহলে হাদিসগণ আমল করেন না। তারা ফজরের সময় হবার সাথে সাথেই ফজরের নামাজ পড়ার কথা বলেন।

উপরের সহিহ হাদিসটি কেন আহলে হাদিসগণ আমল করেন না, তার কিছু কারণ হাজির করেছেন ইমাম শাফেয়ী ও আহলে হাদিসের অন্য আলেমগণ।

ইমাম শাফেয়ীর মতে, একটু আলোতে ফজরের নামাজ পড়ার কথা সহিহ হাদিসে থাকলেও সাহাবী ও তাবিঈনগন অন্ধকারে ফজরের নামাজ পড়ার প্রমাণ রয়েছে। এর দলীল হিসাবে ইমাম শাফেয়ী আয়েশা (রা)-এর একটি হাদিস উল্লেখ করেন।

আয়েশা (রা) বলেন –

كُنَّ النِّسَاءُ مِنَ المُؤْمِنَاتِ يُصَلِّينَ مَعَ النَّبِيِّ الصُّبْحَ، ثُمَّ يَنْصَرِفْنَ وَهُنَّ مُتَلَفِّعاتٌ بِمُرُوطِهِنَّ ، مَا يَعْرِفُهُنَّ أحَدٌ مِنَ الغَلَسِ
[الرسالة للشافعي 1/ 283]

“নারীরা রাসূল (স)-এর সাথে ফজরের নামাজ পড়তো। এরপর তারা চাদর দিয়ে নিজেদের ডেকে বাড়ি ফিরতো। অন্ধকারের কারণে কেউ কাউকে চিনতো না।” [নাসায়ী - ৫৪৬]

উপরোক্ত দুটি হাদিসের মধ্যে একটি হলো সরাসরি রাসূল (স)-এর আদেশ, অন্যটি হলো আয়েশা (রা)-এর বর্ণনা। স্বভাবতই রাসূলের আদেশটি বেশি মান্য হবার কথা। কিন্তু, এ ক্ষেত্রে আহলে হাদিসের আলেমগণ রাসূলের হাদিসটিকে ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে গ্রহণ না করে, সাহাবীদের আমলকে প্রাধান্য দিয়েছেন। [রিসালাহ, ৭৮২ প্যারাগ্রাফ]

আহলে হাদিসের ইমামগণ এ ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফার মেথডলজি অনুসরণ করেছেন। ইমাম আবু হানিফার মেথডলজি হলো, কোনো হাদিস সহিহ হলেও সেটি সাহাবীরা কিভাবে আমল করেছেন, তা দেখা।

যাই হোক, আহলে হাদিসগণ সব সময় সহিহ হাদিসের উপর আমল করেন, এ কথাটা সম্পূর্ণ সঠিক নয়।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

গণতন্ত্র সময়ের একটি চাহিদা

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি? ধরুন, ১৬১৭ সাল। উসমানী খেলাফতের অধীনে তখন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূমি। সেই এক-তৃতীয়াংশ ভূমির খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছেন সুলতান আহমদ। কেউ যদি তখন বলতো, আমরা সুলতান আহমদের পরিবর্তন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে তখন কিভাবে সে নির্বাচনটি হত? তখন তো আর ইন্টারনেট বা টেলিভিশন ছিল না, এমনকি প্লেনও ছিল না। নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচনী তফসিলটি বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রত্যেকের কাছে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করতে করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লেগে যেতো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল মানুষ যেহেতু খলীফা প্রার্থী হবার অধিকার রাখে, সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে তাঁদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে করতে সময় লাগতো আরো ২ বছর। নির্বাচন কমিশনার লক্ষ লক্ষ মনোনয়ন পত্র বাচাই করতে করতে লাগতো আরো ১ বছর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দিতে হতো কমপক্ষে আরো ১ বছর। কারণ প্রার্থীদেরকে বহুদূর থেকে এসে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতো। তারপর, প্রা...