সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ফিকহের প্রয়োজন কেন?

আমার এক বন্ধু আমাকে প্রশ্ন করেছেন, “আমাদের কাছে কোর’আন ও হাদিস থাকার পরেও আবার কেন ফিকাহের প্রয়োজন?

এর উত্তরটা খুব সহজ।

ধরুন, আপনি কোর’আনের সূরা মায়েদা পড়া শুরু করলেন। দুই আয়াত পড়ার পরেই দেখলেন যে, আল্লাহ বলছেন –

حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ
অর্থাৎ, “তোমাদের জন্যে মৃত প্রাণী হারাম করা হয়েছে।”

এটা দেখার পর পরেই আপনি কোর’আন শরীফটা বন্ধ করে উঠে গিয়ে বউকে বললেন, “এই সুন্দরী, আমি বাজার থেকে বড় বড় যে ইলিশ মাছগুলো এনেছি, সবগুলো মাছ ফ্রিজে না রেখে ডাস্টবিনে ফেলে দাও।”

বউ আপনাকে বললো: “কি হলো? পাগল হয়ে গেলে নাকি? এতো টাকার মাছ এনে এখন আবার বলছো ডাস্টবিনে ফেলে দিতে?”

আপনি তখন বউয়ের কাছে কোর’আন শরীফটা এনে খুলে দেখালেন যে, সূরা মায়েদার ৩ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “মৃত প্রাণী হারাম”। এরপর বউকে যুক্তি দিয়ে বুঝালেন যে, মাছ যেহেতু একটা প্রাণী, এবং ইলিশ মাছ যেহেতু সূর্যের আলোতে সাথে সাথে মারা যায়, সুতরাং ইলিশ মাছ খাওয়া হারাম।

কোর’আন থেকে খুব সুন্দর একটি যুক্তি দিয়ে আপনি প্রমাণ করেছেন যে, ইলিশ মাছ খাওয়া হারাম।

কিছুদিন পর আপনি গেলেন পাশের বাসার ঘরোয়া দাওয়াতে। তারা আপনাকে খুব আপ্যায়ন করার উদ্দেশ্যে শুরুতেই আপনার প্লেটে তুলে দিলেন ইলিশ মাছ। আপনি দেখেই চোখ বড় বড় করে বলে উঠলেন – “হারাম, হারাম। ইলিশ মাছ খাওয়া হারাম।”

আপনার কথা শুনে প্রতিবেশী খুব বিব্রত হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কেন হারাম?”

আপনি আপনার বউকে যে যুক্তি দিয়েছেন, ভদ্রলোককেও একই যুক্তি দিলেন। কোর’আনে আল্লাহ বলেছেন, “মৃত প্রাণী খাওয়া হারাম”।

ভরা মজলিশে এমন কথা শুনে ভদ্রলোক কিছুটা অপমানিত হয়ে গেল। এরপর তিনি ইন্টারনেটে বহু খোঁজাখুঁজির পর একটা হাদিস বের করলেন। যেখানে রাসূল (স) বলেছেন –

هُوَ اَلطُّهُورُ مَاؤُهُ، اَلْحِلُّ مَيْتَتُهُ
অর্থাৎ, “সাগরের পানি হালাল, সাগরের মৃত প্রাণীও হালাল”।

এবার তো লাগলো নতুন ঝামেলা।

কোর’আনে বলা হয়েছে মৃত প্রাণী হারাম। তার মানে সকল মৃত প্রাণী-ই হারাম। আবার, হাদিসে বলা হচ্ছে, সাগরের মৃত প্রাণী হালাল।

এখন কোর’আন মানবেন না হাদিস মানবেন?

আপনি নিজের কথা উপরে রাখার জন্যে বললেন যে, “আমি কোর’আন মানি, হাদিস মানি না। কারণ, হাদিসের চেয়ে কোর’আনের মূল্য বেশি।”

ভদ্রলোক তার কথা উপরে রাখার জন্যে বললেন যে, “হাদিস হলো কোর’আনে ব্যাখ্যা। সুতরাং ইলিশ মাছ হারাম নয়। আপনি খেলে খান, না খেলে চলে যান।”

এই যে ঝগড়া শুরু হলো, তার মীমাংসা কে করবে? এ কাজটিই ফিকাহের কাজ। ফিকাহ কোর’আন ও হাদিসের মাঝে সমন্বয় সৃষ্টি করার জন্যে এমন কিছু নিয়ম আবিষ্কার করে, যার ফলে কোর’আন ও হাদিসের মাঝে আর কোনো বিরোধ থাকে না।

এ গল্পটা বলার পর আমার বন্ধু বুঝলেন যে, কোর’আন ও হাদিস সঠিকভাবে বুঝার জন্যে ফিকাহের প্রয়োজন রয়েছে।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

গণতন্ত্র সময়ের একটি চাহিদা

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি? ধরুন, ১৬১৭ সাল। উসমানী খেলাফতের অধীনে তখন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূমি। সেই এক-তৃতীয়াংশ ভূমির খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছেন সুলতান আহমদ। কেউ যদি তখন বলতো, আমরা সুলতান আহমদের পরিবর্তন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে তখন কিভাবে সে নির্বাচনটি হত? তখন তো আর ইন্টারনেট বা টেলিভিশন ছিল না, এমনকি প্লেনও ছিল না। নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচনী তফসিলটি বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রত্যেকের কাছে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করতে করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লেগে যেতো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল মানুষ যেহেতু খলীফা প্রার্থী হবার অধিকার রাখে, সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে তাঁদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে করতে সময় লাগতো আরো ২ বছর। নির্বাচন কমিশনার লক্ষ লক্ষ মনোনয়ন পত্র বাচাই করতে করতে লাগতো আরো ১ বছর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দিতে হতো কমপক্ষে আরো ১ বছর। কারণ প্রার্থীদেরকে বহুদূর থেকে এসে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতো। তারপর, প্রা...