সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইসলাম এক হলে মাজহাব চারটা কেন?

ইসলাম এক হলে মাজহাব চারটা কেন?

এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজেই দিতে পারবেন যারা রিসার্চ বা গবেষণা নিয়ে কাজ করেন। কোনো কিছু গবেষণা করার অনেকগুলো পদ্ধতি থাকে, যেটাকে ‘রিসার্চ মেথডলজি’ বা ‘গবেষণা পদ্ধতি’ বলা হয়। কেউ কোনো কিছু গবেষণা করতে হলে অনেকগুলো গবেষণা পদ্ধতি থেকে একটি পদ্ধতি বাছাই করে নিতে হয়।

ধরুন, দুই বন্ধু আরিফ ও সাজিদ ২০০৯ সালে পিলখানায় সংঘটিত ‘বিডিয়ার বিদ্রোহ’ নিয়ে গবেষণা করতে চায়। দুই বন্ধুর-ই উদ্দেশ্য এক, কিন্তু গবেষণা পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

যেমন, আরিফ জানতে চায় – পিলখানায় কতজন সেনা হত্যা হলো? কতজন বিডিয়ার এই হত্যাকাণ্ডের সাথে যুক্ত ছিলো? যারা হত্যা করেছে, তাদের সাথে কাদের যোগাযোগ ছিলো? এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে মূল হোতা কারা ছিল? ইত্যাদি। এ বিষয়গুলো জানার জন্যে আরিফ অনেকগুলো গবেষণা পদ্ধতি থেকে পছন্দ করে একটি গবেষণা পদ্ধতি অবলম্বন করলো, যার নাম ‘কোয়ানটিটেটিভ রিসার্চ’ বা ‘পরিমাণগত সমীক্ষা’।

অন্যদিকে, সাজিদ জানতে চায় – কেন সেনাবাহিনীদের হত্যা করা হলো? সেনাবাহিনীর সাথে বিডিয়ারের দ্বন্দ্ব কি ছিলো? সরকার কেন সেনাবাহিনীদের বাঁচাতে ব্যর্থ হলো? সেনাবাহিনী হত্যায় বিদেশের কোনো চক্রান্ত ছিলো কিনা? বিডিয়ারের নাম পরিবর্তন করে 'বিজিবি' রাখা হলো কেন? ইত্যাদি। এ বিষয়গুলো জানার জন্যে সাজিদ যেই গবেষণা পদ্ধতি অবলম্বন করলো, তার নাম ‘কোয়ালিটেটিভ রিসার্চ’ বা ‘গুণগত সমীক্ষা’।

দেখুন, আরিফ ও সাজিদ দুই বন্ধুর উদ্দেশ্য একই, এবং তা হলো পিলখানা নিয়ে গবেষণা করা। কিন্তু, উভয়ের গবেষণা করার পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন। আরিফ ও সাজিদকে অবশ্যই কোনো না কোনো গবেষণা পদ্ধতি বেছে নিতে হবে, নতুবা তারা গবেষণা করতে পারবে না।

ঠিক একইভাবে যারা ইসলাম নিয়ে গবেষণা করতে চায়, তাদেরকে চারটি প্রসিদ্ধ গবেষণা পদ্ধতি বা মাজহাব থেকে একটি মাজহাব পছন্দ করে নিতে হয়, নতুবা কেউ ইসলাম নিয়ে গবেষণা করতে পারেন না।

আমরা যারা কেবল ফেইসবুকে স্ট্যাটাস লিখি, তারা কোনো রিসার্চ মেথডলজি অবলম্বন না করলেও চলে; কারণ আমাদের কথার এতো গুরুত্ব নেই। কিন্তু, যারা গবেষণা করতে চান, তাদেরকে অবশ্যই এক বা একাধিক গবেষণা পদ্ধতি অবলম্বন করে গবেষণা করতে হয়।

ঠিক একইভাবে, আমরা যারা খুব সাধারণ মুসলিম, তারা কোনো একটি মাজহাব সম্পর্কে খুব ভালো না জানলেও চলে। কিন্তু, যারা ইসলাম নিয়ে গবেষণা করতে চায়, এবং ইসলামের কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে চায়, তাদেরকে অবশ্যই এক বা একাধিক মাজহাব অনুসরণ করতে হয়। মাজহাব মানে গবেষণা পদ্ধতি, অন্য কিছু নয়।

সুতরাং, ইসলাম এক, কিন্তু মাজহাব অসংখ্য হতে পারে। এতে সমস্যার কিছু নেই।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...