সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও আমার উত্তর

আহলে কোর'আনের একজন ভাই একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন। প্রথমে ঐ স্ট্যাটাসটা হুবহু তুলে দিচ্ছি, এর পর এই বিষয়ে আমার কয়েকটা কথা যুক্ত করছি।
____________
শেয়ার করা স্ট্যাটাস:
____________

//রাসুলের কথা, কাজ, মৌন সম্মতি সহ তার জিবনের সবকিছু যদি হাদিস হয়, তাহলে তার বেশিরভাগ গুলো মানেন না কেন?
মিথ্যাবাদি কে?
☞ রাসুল তার হাদিস মানতেন না ৷ কিন্তু আপনারা কেন মানেন ৷
☞ রাসুল চারটা বিয়ে করেছেন যখন যখন যে বয়সের মেয়েকে আপনারা কেন সেই সমযের সেই বয়সের মেয়ে বিয়ে করেন না?
☞ রাসুল মদিনার রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন, সুতরাং আপনাকেও হতে হবে ৷
☞ রাসুল হিজরত করেছিলেন, আপনি করেন না কেন?
☞ রাসুল মিরাজ করেছেন, আপনিও করুন ৷ অনুসরন তো এটাই তাইনা?
☞ রাসুল মেষ চরাতেন, আপনি কি করছেন? সুন্নাত মানেন না কেন? ফাজলামি??
☞ রাসুল গুহায় দিন যাপন করতেন, আপনি কই করেন? এটা কি সুন্নাত নয়?
☞ রাসুল রুটি খেতেন, আপনি রকমারি খাবার খেয়ে রাসুলের সুন্নাত অবমাননা করেন কেন? ফাজলামি পাইছেন?
☞ রাসুল হুদায়বিয়ার সন্ধি করেছেন, এটাও কি সুন্নাত ৷ তাহলে পালন করুন? হুদায়বিয়ার সন্ধি করুন?
☞ রাসুল নাকি গরিব ছিলেন? আপনি কেন টাকাওয়ালা? সুন্নাত কি অবমাননা হয়না? টাকা সম্পদ ছুরে ফেলুন ৷
⚄ এরকম আরো হাজার হাদিস আপনারা মানেন না ৷ তাহলে অনুসরন কই করলেন? হাদিস কই মানলেন? তার মানে কি আপনারা নিজেই কাফের?
ফাজলামি কারা করে?
আর কত মিথ্যার আশ্রয় নিবেন? আর কত রাসুলের নামে আল্লাহর শিরক উপত্থাপন করবেন?
মুল কথা হলো, কুরআনের বাইরে কোন হাদিস মানা যাবেনা ৷।\\
________
আমার কথা:
________

//কুরআনের বাইরে কোন হাদিস মানা যাবেনা// – এ কথা তারাই বলেন, যারা হাদিস ও সুন্নাহর মাঝে পার্থক্য করতে পারেন না।

ইসলামের দ্বিতীয় উৎস হলো সুন্নাহ, সহীহ হাদিস নয়। কেউ যখন সুন্নাহ শব্দের স্থানে হাদিস এবং হাদিস শব্দটির স্থানে সুন্নাহ শব্দটি ব্যবহার করেন, তখন বেশ কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়।

অনেকে বলেন, সুন্নাহ মানেই সহীহ হাদিস, আর, সহীহ হাদিস মানেই সুন্নাহ। দু’টি বিষয় একই।

আসলে কিন্তু তা না। সুন্নাহ ও সহীহ হাদিসের মাঝে অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে। প্রতিটি সুন্নাহ-ই হাদিস, কিন্তু প্রতিটি হাদিস সুন্নাহ নয়।

মোহাম্মদ (স) একজন মানুষ হিসাবে এবং একজন রাসূল হিসাবে অনেক কিছুই বলেছেন বা করেছেন। তিনি যা যা বলেছেন, অথবা, তিনি যা যা করেছেন, সব কিছুই হাদিস হিসাবে গণ্য হয়, কিন্তু সব কিছু আমাদের জন্যে সুন্নাহ নয়।

যেমন, রাসূল (স) চারটির অধিক বিয়ে করেছেন, এটা সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হলেও, এটা পালন করা আমাদের জন্যে সুন্নাহ নয়।

একইভাবে, মোহাম্মদ (স) একজন মানুষ হিসাবে কিছু কাজ করেছেন এবং কিছু আদেশ দিয়েছেন, যা সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হলেও তা আমাদের জন্যে সুন্নাত বা পালনীয় নয়।

রাসূল (স) নিজেই বলেছেন,

إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ ، إِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَيْءٍ مِنْ دِينِكُمْ ، فَخُذُوا بِهِ ، وَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَيْءٍ مِنْ رَأْيٍ ، فَإِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ

“আমি একজন মানুষ। যখন আমি ধর্ম সম্পর্কে কিছু আদেশ করব, তখন তা গ্রহণ করবে। কিন্তু আমি যদি আমার নিজের মতামত থেকে কিছু আদেশ করি, তাহলে তো একজন মানুষ-ই।” [সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৩৬২]

সুতরাং, কোনো কিছু সহীহ হাদিসের কিতাবে থাকলেই, তা আমাদের জন্যে সুন্নাহ বা পালনীয় হিসাবে নির্ধারিত হয় না। বরং, সহীহ হাদিসমূহকে কোর’আন আলোকে এবং সমসাময়িক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত করতে হয়।

যেমন, ইমাম মালিক (র) অনেক হাদিসকেই সহীহ মনে করতেন, কিন্তু তা সুন্নাত হিসাবে পালন করতেন না। কোনো কিছু সহীহ হাদিসের গ্রন্থে থাকলেই তা আমাদের জন্যে সুন্নাত বা পালনীয় হয়ে যায় না।

সুন্নাহ এবং হাদিসের পার্থক্য না জানার কারণেই উপরের প্রশ্নগুলো করা হয়েছে।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

গণতন্ত্র সময়ের একটি চাহিদা

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি? ধরুন, ১৬১৭ সাল। উসমানী খেলাফতের অধীনে তখন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূমি। সেই এক-তৃতীয়াংশ ভূমির খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছেন সুলতান আহমদ। কেউ যদি তখন বলতো, আমরা সুলতান আহমদের পরিবর্তন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে তখন কিভাবে সে নির্বাচনটি হত? তখন তো আর ইন্টারনেট বা টেলিভিশন ছিল না, এমনকি প্লেনও ছিল না। নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচনী তফসিলটি বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রত্যেকের কাছে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করতে করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লেগে যেতো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল মানুষ যেহেতু খলীফা প্রার্থী হবার অধিকার রাখে, সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে তাঁদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে করতে সময় লাগতো আরো ২ বছর। নির্বাচন কমিশনার লক্ষ লক্ষ মনোনয়ন পত্র বাচাই করতে করতে লাগতো আরো ১ বছর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দিতে হতো কমপক্ষে আরো ১ বছর। কারণ প্রার্থীদেরকে বহুদূর থেকে এসে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতো। তারপর, প্রা...