সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ধর্ম ও রাষ্ট্র, একের দায় অন্যের উপর দেয়া যায় না

ধর্মের মূল বিষয় হলো ঈমান। আর, ঈমান হচ্ছে মানুষের অন্তরের বিশ্বাসের নাম। অন্তর হলো মানুষের ভিতরের দুনিয়া। অন্তরের দুনিয়ায় মানুষ সর্বোচ্চ স্বাধীন থাকে। পৃথিবীর কোনো ধর্ম, বিশ্বাস বা মতাদর্শ জোর করে মানুষকে গ্রহণ করানো যায় না। এমনকি খুব অত্যাচারী শাসকও তা পারে না। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা বলেন -

لَٓا اِكْرَاهَ فِي الدّ۪ينِ قَدْ تَبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّۚ فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللّٰهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰىۗ لَا انْفِصَامَ لَهَاۜ وَاللّٰهُ سَم۪يعٌ عَل۪يمٌ


"ধর্ম গ্রহণে কোনো জোর-জবরদস্তি নেই। ভ্রান্ত পথ থেকে সত্য পথ পৃথক হয়ে গেছে। যে তাগুতকে অস্বীকার করবে, এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, সে এমন এক শক্ত হাতল ধরবে, যা কখনো ভাঙবে না। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, প্রজ্ঞাময়।" [সূরা ২/বাকারা - ২৫৬]

উপরোক্ত আয়াতের কারণে, কোনো মুসলিম অন্য কোনো অমুসলিমকে মুসলমান হতে বা মুসলমানের মত চলতে বাধ্য করতে পারবে না। বরং, প্রতিটি মানুষকে তাঁর বিশ্বাস নিয়ে চলার স্বাধীনতা দিতে হবে। এই আয়াটির কারণে, মুসলিমদের জন্যে একটি ধর্মীয় রাষ্ট্র বা একটি মতাদর্শিক রাষ্ট্র তৈরি করা সম্ভব না। ধর্মীয় বা মতাদর্শিক রাষ্ট্র মানে যে রাষ্ট্র নিজেদের বিশ্বাস সবার উপরে প্রয়োগ করতে চায়।

কেউ "ইসলামী রাষ্ট্রের" নামে যদি কোনো কিছু প্রতিষ্ঠা করে, তাহলে রাষ্ট্রের সকল অন্যায় ও জুলুম ইসলামের উপর এসে পড়বে। অর্থাৎ, "ইসলামী রাষ্ট্রের" কোনো শাসক বা কর্মকর্তা একজন মানুষ হিসাবে যদি কোনো অন্যায় বা জুলুম করে, তখন অন্য ধর্মের মানুষরা বলবেন, "ইসলামী রাষ্ট্র" আমাদের সাথে জুলুম করেছে। অথচ, এখানে "ইসলামী রাষ্ট্র" নয়, বরং কিছু মুসলিম হয়তো অন্য মুসলিম বা অমুসলিমের উপর জুলুম করেছিলো।

তাই, যদি কোনো রাষ্ট্রকে 'ইসলামী রাষ্ট্র' না বলে 'কল্যাণ রাষ্ট্র' বলা হয়, তাহলে রাষ্ট্রের কোনো শাসক বা কর্মকর্তার দোষ ইসলামের উপর বর্তাবে না, বরং শাসকের নিজের উপর বর্তাবে।

- আবদুল আজিজ বায়িনদির, ধর্ম ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক, পৃ - ১৩

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...