সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আধুনিক রাষ্ট্রের সাথে রাসূলের সমাজের পার্থক্য

আধুনিক সময়ে আমরা যেটাকে 'রাষ্ট্র' বলি, তা রাসূল (স)-এর সময়ে এবং তাঁর পরবর্তী চার খলিফার সময়ে ছিলো না। অর্থাৎ, আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা রাসূল (স) ও খিলাফতে রাশেদার সময়ে ছিলো না।

আধুনিক রাষ্ট্রের মৌলিক উপাদান হলো তিনটি। ১) আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনী, ২) আমলাতন্ত্র, ৩) জনগণের থেকে ভ্যাটের টাকায় গঠিত রাষ্ট্রীয় কোষাগার। এ তিনটি সমস্যাজনক উপাদান ছাড়া আধুনিক কোনো রাষ্ট্রের কথা কল্পনাও করা যায় না। অথচ, এ তিনটি উপাদান রাসূল (স) ও খিলাফতে রাশেদার সময়ে ছিলো না।

১) রাসূল (স) ও তাঁর পরবর্তী খিলাফতে রাশেদার সময়ে আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা জন্যে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। প্রথম চার খলিফার তিন জনই শহীদ হয়েছিলেন, কারণ তাঁদের কোনো বডিগার্ড ছিলো না। কিন্তু বর্তমানে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব ও বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী ব্যতীত কোনো রাষ্ট্র কল্পনাও করা যায় না। এসব নিরাপত্তা বাহিনীর বেতনের টাকা আসে কৃষক-মজুর সর্বস্তরের মানুষ থেকে, কিন্তু এসব বাহিনী নিরাপত্তা দেয় কেবল শাসক ও টাকা ওয়ালা বড়লোকদেরকে। এটা একটা রাষ্ট্রীয় জুলুম। কিন্তু এ জুলুম রাসূল (স) ও খিলাফতের সময়ে ছিলো না, আবার এ পদ্ধতি ছাড়া কোনো রাষ্ট্রও কল্পনা করা যায় না।

২) কেবল নির্বাচিত সরকারের দ্বারা আধুনিক রাষ্ট্র পরিচালিত হয় না। বরং আধুনিক রাষ্ট্রের অধিকাংশ আইন-কানুন প্রণয়ন ও বাস্তবায়িত হয় আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে। একজন সৎ-যোগ্য-ভালো মুসলিম অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের ক্ষমতা আসলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে তিনি তাঁর একক সিদ্ধান্তে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারবেন না। অর্থাৎ, সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সৎ না হলে, কেবল ক্ষমতায় এসে কেউ সৎভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারবেন না। জোর করে যদি আমলাদের উপর কেউ কোনো কিছু চাপিয়ে দিতে চায়, তখন আমলারা মিলে সরকারকেই উৎখাত করে দিবেন। কারণ, আমলারা স্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত, কিন্তু সরকার কেবল পাঁচ বছরের জন্যে নিয়োগপ্রাপ্ত।

রাসূল (স) ও খিলাফতে রাশেদার সময়ে যেহেতু আমলাতন্ত্র ছিলো না, তাই তাঁরা তাঁদের কথা সহজেই বাস্তবায়ন করতে পেরেছেন। কিন্তু আধুনিক রাষ্ট্র যেহেতু আমলাতন্ত্র নির্ভর, তাই একজন মানুষ যতই ভালো মুসলিম হোন না কেন, তিনি ইচ্ছে করলেই দেশকে ইসলামী নিয়মে পরিচালনা করতে পারবেন না। অর্থাৎ, ইসলামী রাষ্ট্রের নামে কেউ ক্ষমতায় আসলেও যতদিন পর্যন্ত দেশের অধিকাংশ সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারী ভালো মুসলিম হবে না, ততদিন পর্যন্ত ক্ষমতায় গিয়ে কেউ চাইলেই ইসলাম কায়েম করতে পারবেন না।

৩) রাসূল (স) ও খিলাফতে রাশেদার সময়ে মানুষ ইচ্ছাকৃত বাইতুল মালে দান করেছেন। কিন্তু এখন বাধ্যতামূলক ভাবে ধনী-গরিব সবাইকে ভ্যাট দিতে হয়। যেমন, বাজার থেকে এক কেজি চাল কেনার সময়ে ধনী গরিব সবাইকে ভ্যাট দিতে হয়। গরিব মানুষের এ টাকা গিয়ে সরকারী কোষাগারে জমা হয়। সে টাকা দিয়ে সরকার দেশের জন্যে যে বাজেট নির্ধারণ করেন, তাতে বড়লোকের ও বড় কর্মকর্তাদের সুযোগ সুবিধা বেশি থাকে। অর্থাৎ, রাষ্ট্র গরিবের টাকা নিয়ে বড় লোকের জন্যে সুযোগ সুবিধা প্রদান করে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র সরাসরি জুলুমের হাতিয়ার হয়ে যাচ্ছে। যদি আমরা আধুনিক রাষ্ট্রের এ জুলুমকে ইসলামী রাষ্ট্রের নামে চালিয়ে দেই, তাহলে ইসলামকেও জুলুমের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হবে।

যেহেতু বর্তমানে আধুনিক রাষ্ট্রে উপরোক্ত তিনটি কাঠামো পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নেই, এবং যেহেতু রাসূল (স)-এর সময়ে উপরোক্ত তিনটি রাষ্ট্রীয় কাঠামো ছিলো না, তাই আধুনিক রাষ্ট্র কখনোই ইসলামী রাষ্ট্র হতে পারবে না। আধুনিক রাষ্ট্র কাঠামোকে ঠিক রেখে যদি আমরা সেটাকে ইসলামী রাষ্ট্র নাম দিতে চাই, তাহলে রাষ্ট্র ইসলামের নামেই জনগণের উপর জুলুম করা হবে।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...