সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মানুষের অন্তরে মোহর মারা সম্পর্কে নাস্তিকদের অভিযোগ

নাস্তিকদের অভিযোগ - ১

নাস্তিকগণ বলেন, "সূরা বাকারার ৬ ও ৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছন, তিনি কাফেরদের অন্তরে ও কর্ণে মোহর মেরে দিয়েছেন। এ কারণে কাফেরগণ ঈমান আনতে পারেন না। আল্লাহ কাফিরদের অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন বলেই তো কাফেরগন আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে না। এখানে কাফেরদের দোষ কি?"

নাস্তিকদের এই প্রশ্নটির উত্তর পাওয়া যাবে কোর'আনের অন্য দুটি আয়াতে।


১।

আল্লাহ তায়ালা বলছেন -

وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِاٰيَاتِ رَبِّه۪ فَاَعْرَضَ عَنْهَا وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُۜ اِنَّا جَعَلْنَا عَلٰى قُلُوبِهِمْ اَكِنَّةً اَنْ يَفْقَهُوهُ وَف۪ٓي اٰذَانِهِمْ وَقْرًاۜ وَاِنْ تَدْعُهُمْ اِلَى الْهُدٰى فَلَنْ يَهْتَدُٓوا اِذًا اَبَدًا

"কোনো ব্যক্তিকে তার প্রতিপালকের আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়ার পরে সে যদি আয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, এবং তার (পাপ) কাজ সমূহ ভুলে যায়, তাহলে তার অপেক্ষায় অধিক জালিম আর কে আছে? আমি নিশ্চয় তাদের অন্তরে আবরণ দিয়ে দিয়েছে যেনো তারা কোর'আন বুঝতে না পারে, এবং তাদের কানে বধিরতা এঁটে দিয়েছি। তুমি তাদেরকে সৎপথে আহবান করলেও তারা কখনো সৎপথে আসবে না।" [সূরা ১৮/কাহাফ - ৫৭]

দেখুন, আল্লাহ তায়ালা প্রথমেই কারো অন্তরে মোহর মেরে দেন না, অথবা প্রথমেই কারো অন্তরে আবরণ দিয়ে দেন না। যখন মানুষ পাপ কাজ করতে থাকে, এবং তাকে কেউ পাপ কাজ থেকে বাধা দিলেও সে শুনে না, তখন তার পাপ কাজের কারণেই তার অন্তরে একটা আবরণ পড়ে যায়। এর ফলে পরবর্তীতে সে আর সত্য বুঝতে পারে না।

অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালা আগেই কারো অন্তরে মোহর মেরে দেন না, বরং মানুষ তাদের পাপ কাজের দ্বারা নিজেই নিজের অন্তরকে অকেজো করে ফেলে।

২।

আল্লাহ তায়ালা বলেন -

وَاِذَا قَرَأْتَ الْقُرْاٰنَ جَعَلْنَا بَيْنَكَ وَبَيْنَ الَّذ۪ينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْاٰخِرَةِ حِجَابًا مَسْتُورًاۙ

"তুমি যখন কোর'আন পাঠ করো, তখন যারা আখিরাত বিশ্বাস করে না, তাদের ও তোমার মাঝে একটা প্রচ্ছন্ন পর্দা থাকে।" [সূরা ১৭/বনী ইসরাঈল - ৪৫]

দেখুন, যারা আগে থেকেই আখিরাতে বিশ্বাস করেন না, তাদের সামনেই কেবল পর্দা দেয়া হয়। অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালা পর্দা দেয়ার কারণে মানুষ ইমান আনতে পারে না, এমন নয়। বরং মানুষ সত্য জেনে-বুঝেও কোনো না কোনো স্বার্থের কারণে যখন সত্য অস্বীকার করে, তখনি কেবল আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্তরে মোহর বা পর্দা দিয়ে দেন।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...