সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আধুনিক রাষ্ট্রের নামের সাথে ইসলামী শব্দ যুক্ত করার সমস্যা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মুসলিমরা যখন ঔপনিবেশিক দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত হতে শুরু করলো, তখন ঔপনিবেশিকদের প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্যে মুসলিমরা সবকিছুর সাথে 'ইসলামী' শব্দটি যুক্ত করতে লাগলো। যেমন, ইসলামী রাষ্ট্র, ইসলামী অর্থনীতি, ইসলামী সাহিত্য, ইসলামী গান, ইসলামী দর্শন, ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী হাসপাতাল ইত্যাদি।

আধুনিক রাষ্ট্র মানুষের উপর অনেক খবরদারি করে এবং মানুষকে দাস করার চেষ্টা করে। সেই আধুনিক রাষ্ট্র কাঠামোর সামনে 'ইসলামী' শব্দটি লাগিয়ে দিয়ে, ইসলামের নামে আমরা অন্য মানুষের উপর খবরদারি করতে চাই। অথচ পৃথিবীতে সবাই সমান ও সবাই আল্লাহর দাস।


একইভাবে, আধুনিক ব্যাংক কোনো ভাবেই সুদমুক্ত হতে পারে না। কিন্তু, সেই ব্যাংকের আগে 'ইসলামী' শব্দটি লাগিয়ে দিয়ে আমরাও সুদকে ইসলামী বানিয়ে দিচ্ছি।

আধুনিক রাষ্ট্র যখন মানুষের ক্ষতি করে, তখন সে দোষটা খ্রিষ্টান ধর্মের ওপর যায় না। কিন্তু 'ইসলামী রাষ্ট্র' নামে দায়েশরা যখন মানুষের ক্ষতি করে, তখন সে দোষটা ইসলামের ওপর গিয়ে পড়ে। একইভাবে, আধুনিক ব্যাংক যখন মানুষের ওপর জুলুম করে, তখন সে দোষটা ব্যাংক প্রতিষ্ঠাতা ইহুদিদের ওপর যায় না। কিন্তু 'ইসলামী ব্যাংক' যখন মানুষের কোনো ক্ষতি করে, তখন সে দোষটা ইসলামের ওপর গিয়ে পড়ে।

একজন মানুষ যেমন প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিকভাবে একজন মুসলিম হয়ে জন্ম গ্রহণ করেন, তেমনি একটি রাষ্ট্র ও অর্থনীতি প্রাকৃতিকভাবেই ইসলামিক। মানুষ যেমন পরিবেশের কারণে ইহুদি, খ্রিষ্টান বা হিন্দু হয়ে যায়, তেমনি রাষ্ট্র, অর্থনীতি, সাহিত্য, দর্শন এসবও পরিবেশের কারণে তাদের স্বাভাবিক সত্তা হারিয়ে ফেলে। যে কোনো কিছুকে তার স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেই তা ইসলামিক হয়ে যায়। কোনো কিছুকে স্বাভাবিক করার জন্যে 'ইসলামী' নামটা যুক্ত করতে হয় না।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...