সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জ্ঞানের নতুন শাখা উদ্ভাবনের কারণে হাসান আল বসরীর নামে অভিযোগ

ইসলামের প্রথম চিন্তাবিদদের একজন হাসান আল বসরী। তিনি একজন বিখ্যাত তাবেয়ী ছিলেন। প্রথম যখন তিনি বিভিন্ন বিষয়ে নতুন নতুন চিন্তা উপস্থাপন করতে শুরু করেন, তখন কিছু লোক তাঁর বিরুদ্ধে লেগে গেলেন। লোকেরা তৎকালীন খলিফা আবদুল মালেক মারওয়ানের কাছে অভিযোগ করে বলেন, “হাসান আল বসরী কি সব শুরু করেছে, সে এমন কথা বলছে, যা আমরা কোনো সাহাবীর কাছ থেকে শুনিনি। আপনি হাসান আল বসরিকে ডেকে জিজ্ঞেস করুন, সে কি করছে এসব।”

হাসান আল বসরির জ্ঞানকে খুব ভালোবাসতেন খলিফা আবদুল মালেক মারওয়ান। তাই তিনি হাসান আল বসরিকে নিজের বাসভবনে না ডেকে একটি চিঠি লিখলেন।

“আবদুল মালেক বিন মারওয়ান এর পক্ষ থেকে হাসান বসরিকে চিঠি –

সালামুন আলাইকুম। আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি, যিনি ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য নেই।

আমিরুল মুমিনিনের কাছে সংবাদ এসেছে, মানুষের ভাগ্য সম্পর্কে আপনি এমন কিছু কথা বলছেন, যা অতীতের কোনো আলেমের কাছ থেকে কেউ কখনো শুনেনি। আমিরুল মুমিন যত সাহাবীকে জীবিত পেয়েছেন, কোনো সাহাবী থেকেও এমন কোনো কথা শুনেননি, যা আপনি এখন নতুন করে বলছেন। যদিও আপনার ধার্মিকতা ও জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ, এসব বিষয় আমি জানি। তবুও আপনার নতুন নতুন কথাগুলো আমিরুল মুমিনিন পছন্দ করেনি। আপনার চিন্তাগুলো আমাকে লিখে পাঠান। কিসের ভিত্তিতে আপনি এমন কথা বলছেন? এসব কথা রাসূল (স)-এর কোনো সাহাবী থেকে কি আপনি শুনেছেন? নাকি নিজের চিন্তা-ভাবনা থেকে বলছেন? নাকি কোর’আনের কোনো আয়াত থেকে এসব চিন্তা বের করেছেন?

আপনাকে এ বিষয়ে জানানোর আগে আমরা এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা করেছি। কিন্তু, কেউ আপনার চিন্তাগুলো অন্য কারো কাছে আগে শুনেনি। আপনি আমাদের জন্যে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করে লিখে পাঠান। মাআসসালাম।”

খলিফার এই চিঠির জবাবে হাসান আল বসরি তাঁর চিন্তাগুলো তুলে ধরেন। কিন্তু, উপরোক্ত চিঠিটির আলোকে আমরা কয়েকটি অনুসিদ্ধান্তে আসতে পারি।

১) সাহাবী অথবা তাবীঈদের যুগে কেউ নতুন কোনো চিন্তা করলে সাধারণ মানুষ তা সহজেই গ্রহণ করতো না। কারণ, স্কলারগন যা অনেক আগে বুঝতে পারেন, সাধারণ মানুষ তা অনেক পরে বুঝতে পারেন।

২) কেউ নতুন কোনো কথা বললেই সাথে সাথে তাঁকে বেদায়াতপন্থী বা কাফের ফতোয়া না দিয়ে, সে কেনো এমন কথাগুলো বলছে, তা বুঝার চেষ্টা করা উচিত। যেমন, খলিফা আবদুল মালেক বিন মারওয়ান তাঁর সময়ের স্কলার হাসান আল বসরি থেকে সম্মানের সাথে জানতে চেয়েছিলেন।

৩) কেউ নতুন কিছু বললেই তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মানুষের একটি স্বভাবগত অভ্যাস। ফলে, যারা নতুন কথা বলবেন, তাঁরা যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে।

৪) সাহাবীদের থেকে কোনো কথা না শুনলেই সে বিষয়টি বিদায়াত হয়ে যায় না।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...