সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সোহবতের গুরুত্ব

জ্ঞান অর্জনের জন্যে আমরা এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করি। ইন্টারনেট থেকে শায়েখদের বই পড়ি এবং লেকচার শুনি। কিন্তু ইন্টারনেটে যে জিনিসটির অভাব তার নাম সোহবত।

সোহবত মানে কারো সামনে গিয়ে তার কথা শুনে কিছু শেখা নয়, সোহবত মানে কারো আচরণ দেখে কিছু শেখা। অর্থাৎ, যে কথা বলা যায় না, বা লিখা যায় না, কিন্তু ব্যক্তির আচরণে প্রকাশ পায়, এমন কিছু শেখাকে সোহবত বলে।

শিশুরা বাবা-মায়ের কথা শুনে না, বরং বাবা-মাকে দেখে শিখে। এই যে বাবা-মাকে দেখে দেখে শিশুরা শিখে, এটাকেই সোহবত বলে।


একজন শিক্ষক যখন ছাত্রদের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলেন, তখন সেটাকে সোহবত বলা যায় না। সোহবত হলো সেটাই, যেখানে শব্দ ও অক্ষরে সাহায্য ছাড়াই শেখা যায়।

কোনো ব্যক্তির লেখা পড়ে বা কথা শুনে কিছু শেখা এক জিনিস, আর কোনো ব্যক্তির সোহবতে থেকে কিছু শেখা অন্য জিনিস। এ জন্যেই, যারা রাসূল (স)-এর কোনো কথা শুনেন বা রাসূলের কথা কোনো বইয়ে পড়েন, তাদেরকে সাহাবী বলা হয় না। সাহাবী কেবল তাদেরকেই বলা হয়, যারা রাসূল (স)-এর সোহবত পেয়েছিলেন।

সোহবতের গুরুত্ব অত্যধিক হলেও ইন্টারনেটে তা পাওয়া যায় না। এর ফলে অনেক মিথ্যা জ্ঞান আমরা শিখে ফেলি। যেমন, একজন শায়েখ তাঁর বক্তব্যে মিথ্যা বলতে পারেন, কিংবা তাঁর লেখায় মিথ্যা লিখতে পারেন, এটা সহজ। কিন্তু তাঁর দৈনন্দিন আচরণে মিথ্যা অভিনয় করে যাওয়াটা খুবই কঠিন। একজন মানুষের ওয়াজ শুনে তাকে ফেরেশতা মনে হলেও তার সাথে সোহবত দিতে গেলে দেখবেন সে শয়তানের বড় ভাই। সুতরাং সোহবত ছাড়া কোনো জ্ঞান-ই পূর্ণাঙ্গ হয় না।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...