সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আল্লাহর চেয়ে কি শয়তানের শক্তি বেশি?

পৃথিবীতে ভাল কাজের চেয়ে খারাপ কাজ বেশি হয়। তাহলে কি আল্লাহ তায়ালার চেয়ে শয়তানের শক্তি বেশি?

পৃথিবীতে ভালো-খারাপ সব কাজ আল্লাহর জ্ঞাতসারে ও অনুমতিতে হয়, কিন্তু খারপ কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা থাকে না। অর্থাৎ, খারাপ কাজে আল্লাহর অনুমতি থাকলেও তাঁর সন্তুষ্টি থাকে না।

অনুমতি এবং সন্তুষ্টি – এ দুটির মাঝে পার্থক্য রয়েছে। কেউ কোনো কাজের অনুমতি দিলেও সেখানে তার সন্তুষ্টি নাও থাকতে পারে।


ধরুণ, আপনার ছোট বাচ্চা আপনার সামনে মোবাইল দিয়ে গান শুনছে, কিন্তু সন্তানের গান শুনাটা আপনার পছন্দ না। এখন আপনি ইচ্ছে করলে আপনার ছোট বাচ্চা থেকে মোবাইলটা নিয়ে নিতে পারেন, এতে বাচ্চাটা আর গান শুনতে পারবে না। অথবা, আপনি চাইলে বাচ্চার হাত থেকে মোবাইল না নিয়ে তাকে সুযোগ দিতে পারেন, যদিও আপনি বাচ্চার গান শুনার কারণে তার উপর সুন্তুষ্ট না। অর্থাৎ, কোনো কাজের সুযোগ দেয়া মানেই সে কাজের উপর সন্তুষ্ট থাকা নয়। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ভালো-খারাপ সব কাজ করার শক্তি ও সুযোগ দেন, কিন্তু আমাদের খারাপ কাজে তিনি সন্তুষ্ট থাকেন না।

এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে শয়তানের কাজটা কি?

শয়তান মানুষকে খারাপ কাজের পরামর্শ দিতে পারে, কিন্তু খারাপ কাজটি সম্পন্ন করার শক্তি ও সুযোগ আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকেই আসে। ইমাম আবু হানিফা বলেন –

وَلَا يجوز ان نقُول إِن الشَّيْطَان يسلب الْإِيمَان من العَبْد الْمُؤمن قهرا وجبرا وَلَكِن نقُول العَبْد يدع الْإِيمَان فَحِينَئِذٍ يسلبه مِنْهُ الشَّيْطَان [الفقه الأكبر ص: 65]
“এ কথা বলা উচিত নয় যে, শয়তান জোর করে বল পূর্বক মুমিন বান্দার ঈমান ছিনিয়ে নেয়। বরং আমরা এটা বলতে পারি যে, মানুষ তার ঈমান ত্যাগ করলে শয়তান তা নিয়ে যায়।” [ফিকহুল আকবর]

আসলে শয়তান কাউকে দিয়ে খারাপ কোনো কাজ করাতে পারে না। শয়তান মানুষকে কেবল পরামর্শ দেয়। মানুষ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পরামর্শের বিপরীতে শয়তানের পরামর্শ গ্রহণ করে, এবং খারাপ কাজের সিদ্ধান্ত মানুষ নিজেই গ্রহন করে। [সূত্র - সুরা ইব্রাহীম - ২২]

যখন কেউ খারাপ কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে সেই খারাপ কাজ করার সুযোগ করে দেন। সুতরাং, পৃথিবীতে খারাপ কাজ বেশি হওয়া মানে শয়তান বেশি শক্তিশালী হওয়া নয়।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...