সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইতিহাসকে জ্ঞানের শাখা হিসাবে মর্যাদা দেন ইবনে খালদুন

ইতিহাসকে সর্বপ্রথম জ্ঞানের মর্যাদা দিয়েছেন ইবনে খালদুন। তাঁর আগে কেউ ইতিহাসকে জ্ঞান মনে করতেন না। গ্রীক দর্শনে মনে করা হতো, যা স্থান-কালের ঊর্ধ্বে সবসময় আলোচনা করার বিষয় হতে পারে না, তা জ্ঞান নয়। ইতিহাস যেহেতু একটি স্থান ও সময়ে আবদ্ধ, তাই গ্রীক দর্শনে ইতিহাসকে জ্ঞান মনে করা হতো না।

এরিস্টটল জ্ঞানের বিভিন্ন শ্রেণীবিন্যাস করেন; সেখানে তিনি ইতিহাসকে জ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসাবে মূল্যায়ন করেননি, বরং তিনি ইতিহাসকে কবিতা বা গল্পের অংশ হিসাবে স্থান দিয়েছেন। ইতিহাস যারা লিখেন, তারা প্রচুর মিথ্যাচার করেন; কিন্তু মিথ্যা দিয়ে তো আর জ্ঞান হয় না, তাই ইবনে খালদুনের আগে কেউ ইতিহাসকে জ্ঞান মনে করতেন না।

ইবনে খালদুন এসে বলেন, ইতিহাসকে আমরা এতোদিন যেভাবে দেখে আসছি, সেভাবে দেখলে হবে না। ইতিহাসের একটা জাহেরি দিক আছে, এবং এর একটি বাতেনি দিক আছে।

বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে যেসব ঘটনা ঘটে, তা বর্ণনা করা হলো ইতিহাসের জাহেরি বা প্রত্যক্ষ দিক। কিন্তু, বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ঘটনা কেন ঘটে, তা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করাটা হলো হলো ইতিহাসের বাতেনি বা পরোক্ষ দিক। ইতিহাসের জাহেরি দিকটা জ্ঞান না হলেও, ইতিহাসের বাতেনি দিক থেকে অনেক চিরস্থায়ী সূত্র পাওয়া যায়, যা জ্ঞানের অংশ। ইবনে খালদুন ইতিহাস চর্চার জন্যে অনেকগুলো সূত্র ও মেথডলজি আবিষ্কার করেছেন, যা অনুসরণ করলে ইতিহাসকে জ্ঞানের স্তরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।

ইতিহাসকে জ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসাবে প্রথম উপস্থাপন করেন ইবনে খালদুন, কিন্তু বাংলাদেশে ইবনে খালদুনের চর্চা হয় না। ফলে, এদেশের ইতিহাসটাও জ্ঞান আকারে হাজির হতে পারছে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নামে আমরা যা কিছু পড়ছি, সব এরিস্টটলের ভাষায় গল্প-কবিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

গণতন্ত্র সময়ের একটি চাহিদা

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি? ধরুন, ১৬১৭ সাল। উসমানী খেলাফতের অধীনে তখন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূমি। সেই এক-তৃতীয়াংশ ভূমির খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছেন সুলতান আহমদ। কেউ যদি তখন বলতো, আমরা সুলতান আহমদের পরিবর্তন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে তখন কিভাবে সে নির্বাচনটি হত? তখন তো আর ইন্টারনেট বা টেলিভিশন ছিল না, এমনকি প্লেনও ছিল না। নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচনী তফসিলটি বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রত্যেকের কাছে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করতে করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লেগে যেতো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল মানুষ যেহেতু খলীফা প্রার্থী হবার অধিকার রাখে, সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে তাঁদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে করতে সময় লাগতো আরো ২ বছর। নির্বাচন কমিশনার লক্ষ লক্ষ মনোনয়ন পত্র বাচাই করতে করতে লাগতো আরো ১ বছর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দিতে হতো কমপক্ষে আরো ১ বছর। কারণ প্রার্থীদেরকে বহুদূর থেকে এসে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতো। তারপর, প্রা...