সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সুখী হবার জন্যে "ইবনুল ওয়াক্ত"

একজন মানুষ নিজেকে সর্ব অবস্থায় সুখী ও শান্ত রাখার কৌশল হলো নিজেকে 'ইবনুল ওয়াক্ত' মনে করা। 'ইবনুল ওয়াক্ত' সুফিদের একটি পরিভাষা, তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস হলো, নিজেকে 'ইবনুল ওয়াক্ত' মনে করা। 'ইবনুল ওয়াক্ত' মানে সময়ের সন্তান।

ইবনুল ওয়াক্ত মানে হলো, ঠিক এই মুহূর্তটি নিয়ে চিন্তা করা। ঠিক এই মুহূর্তে আমি যেখানে বসে, শুয়ে, বা দাঁড়িয়ে আছি, সেটাই আমার জায়গা। এবং ঠিক এই মুহূর্তটি হলো সর্ব উৎকৃষ্ট সময়, এটা মনে করাই হলো ইবনুল ওয়াক্তের কাজ।

অনেকেই অতীতের দুঃখ ও ব্যর্থতাকে ভুলতে পারেন না, আবার অনেকে সারাক্ষণ নিজের পূর্বপুরুষের গৌরব করেন। অতীতের জন্যে নিজেকে ব্যথিত বা উচ্ছ্বাসিত মনে না করাই ইবনুল ওয়াক্তের কাজ।

অনেকে ভবিষ্যতের আশায় বর্তমান সময়কে গুরুত্ব দেন না। আজকের কাজ আগামীদিন করবেন ভাবেন। কিন্তু, ঠিক এই মুহূর্তের কাজ এখনি করার নাম ইবনুল ওয়াক্ত।

মূলত যারা আল্লাহর উপরে সর্ব অবস্থায় ভরসা করতে পারেন, তাদেরকেই সূফীদের ভাষায় 'ইবনুল ওয়াক্ত' বলা হয়।

সূফীদের এই ধারণাটি সহীহ বুখারীর একটি হাদিস থেকে জন্ম লাভ করেছে।

ইবনে ওমর (রা) বলেন -

إِذَا أَمْسَيْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ الصَّبَاحَ، وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ المَسَاءَ
صحيح البخاري 8/ 89

"তুমি যদি সন্ধ্যায় উপনীত হও, তাহলে সকালের জন্যে অপেক্ষা করো না। আর তুমি যদি সকালে উপনীত হও, তাহলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না।" [বুখারি - ৬৪১৬]

ভবিষ্যতের দিকে চেয়ে না থেকে এখনি জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান কাজটি করে ফেলেন যারা, তাদেরকেই ইবনুল ওয়াক্ত বলা হয়। এবং এটাই নিজেকে সফল ও সুখী করার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

গণতন্ত্র সময়ের একটি চাহিদা

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি? ধরুন, ১৬১৭ সাল। উসমানী খেলাফতের অধীনে তখন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূমি। সেই এক-তৃতীয়াংশ ভূমির খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছেন সুলতান আহমদ। কেউ যদি তখন বলতো, আমরা সুলতান আহমদের পরিবর্তন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে তখন কিভাবে সে নির্বাচনটি হত? তখন তো আর ইন্টারনেট বা টেলিভিশন ছিল না, এমনকি প্লেনও ছিল না। নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচনী তফসিলটি বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রত্যেকের কাছে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করতে করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লেগে যেতো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল মানুষ যেহেতু খলীফা প্রার্থী হবার অধিকার রাখে, সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে তাঁদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে করতে সময় লাগতো আরো ২ বছর। নির্বাচন কমিশনার লক্ষ লক্ষ মনোনয়ন পত্র বাচাই করতে করতে লাগতো আরো ১ বছর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দিতে হতো কমপক্ষে আরো ১ বছর। কারণ প্রার্থীদেরকে বহুদূর থেকে এসে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতো। তারপর, প্রা...