সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সেহরিতে ডাকার সংস্কৃতি

ফেইসবুকে এক সেক্যুলার বন্ধু লিখেছেন -

"রোজা রাখার জন্যে কিন্তু আসলেই শেষ রাইতে মাইকে হাক ডাক দিয়া সবার ঘুম ভাঙানো জরুরি নয়। বাংলাদেশ ছাড়া দুনিয়ার আর কোন দেশের মুসলমানরা এমন বাজে কাজ করে কি? "

ভদ্রলোক থাকেন নেদারল্যান্ডসে। বাংলাদেশের মাইকে ডাকাডাকি শুনে নেদারল্যান্ডস থেকে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়, তাই তিনি এ নিয়ে খুব চিন্তিত।


যাই হোক, চিন্তা করার স্বাধীনতা সবার আছে, চিন্তা করুক। কিন্তু, উনি যে বাজে কথাটি বলেছেন, তা হলো, "বাংলাদেশ ছাড়া দুনিয়ার আর কোন দেশের মুসলমানরা এমন বাজে কাজ করে কি? "

ভদ্রলোকের মতো অনেকেই না জেনে এ প্রশ্নটি করেন। প্রায় সব মুসলিম দেশেই রাতে সেহরির জন্যে ডাকা হয়। যেমন আমি তুরস্কের কথা বলতে পারি।

রাতে সেহরির জন্যে ডাকাডাকি করাটা তুরস্কের অন্যতম একটি কালচার। মধ্যরাতে মানুষকে ঘুম থেকে জাগানোর জন্যে তুরস্কের প্রতিটি মহল্লায় কিছু স্বেচ্ছাসেবক ঢোল নিয়ে রাস্তায় নামে যায়। প্রত্যেক বিল্ডিং, বাসা ও ঘরের সামনে গিয়ে গিয়ে তাঁরা ঢোল বাজাতে থাকে, এবং মানুষকে ঘুম থেকে জাগতে বলে।

এখানে কয়েকটি ভিডিও দেখুন।

https://www.youtube.com/watch?v=nNEo9Ps7UNg
https://www.youtube.com/watch?v=4YusX2D5qYY&t=38s
https://www.youtube.com/watch?v=pTBI1Zr4AUM
https://www.youtube.com/watch?v=ZZAOQvNwifA&t=28s

যারা সেহরি খেতে ডাকে, তাঁদেরকে 'দাভুল-জু' বলা হয়। রমজান মাসের শেষের দিকে মহল্লা থেকে টাকা তুলে এসব 'দাভুল-জু'দের পারিশ্রমিক দেয়া হয়।

তুরস্কের মতো সেক্যুলার রাষ্ট্রেও মানুষকে ঘুম থেকে জাগানোর সংস্কৃতি নিয়ে কেউই প্রশ্ন তোলে না। বরং, সেহরির সময়ে মানুষকে ঘুম থেকে ডেকে দেয়ার এই সংস্কৃতিটি তুরস্কে এতোই প্রসিদ্ধ যে, বাচ্চাদের বইগুলোতে এটা নিয়ে একটা অধ্যায় থাকে। এবং এই সংস্কৃতি নিয়ে ছোটদের জন্যে প্রচুর কার্টুনও রয়েছে।

এখানে কয়েকটি কার্টুন এর লিংক দিচ্ছি, দেখুন -

https://www.youtube.com/watch?v=7PLD1fiUP-U
https://www.youtube.com/watch?v=VmqL7EE3LsE
https://www.youtube.com/watch?v=Ie-OlYKfjq0

যাই হোক, এবার আসল কথায় আসি। সেহরিতে মানুষকে ঘুম থেকে জাগানোটা যে একটি সংস্কৃতি, এটা মানুষের কাছে আমরা তুলে ধরতে পারিনি। আমাদের বই-পুস্তকে এ সংস্কৃতি নিয়ে কোনো গল্প নেই, কবিতা নেই; একাডেমিক কোনো লেখা নেই। ফলে, মুসলিম দেশগুলোতে সেহরিতে ডাকার মতো এতো অসাধারণ একটি সংস্কৃতিকে সেক্যুলারগণ নির্দ্বিধায় 'বাজে' বলতে পারেন।


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...