সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমরা কেন কোর'আন পড়ি না?

শত ইচ্ছে থাকলেও আমরা নিয়মিত কোর'আন পড়তে পারি না। কিন্তু, অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ফেইসবুকে না এসে আমরা থাকতে পারি না। এর কারণ কি?

১) ফেইসবুক আমাদের হাতের কাছেই থাকে, কিন্তু কোর’আন আমাদের হাতের কাছে থাকে না।

২) মোবাইল দিয়ে কোর’আন পড়ার সময়ে ফেইসবুকে কোনো ম্যাসেজ বা নোটিফিকেশন আসলে কোর’আন রেখে আমরা ফেইসবুকে চলে যাই।

৩) অজু ছাড়া যখন তখন ফেইসবুক ধরা যায় এবং পড়া যায়, কিন্তু কোর’আন অজু ছাড়া ধরা যায় না।

৪) কোর’আন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে পড়তে হয়, এবং খতম করতে হয়; কিন্তু ফেইসবুক খতম করার কোনো পদ্ধতি নেই।

৫) ফেইসবুক পড়লে আমরা বুঝি, এবং এতে আমাদের মনে নতুন নতুন অনেক চিন্তা আসে। কিন্তু কোর’আন পড়লে আমরা বুঝি না, এবং আমাদের মনে নতুন কোনো চিন্তাও আসে না।

এ ছাড়া আরো অনেক কারণেই আমরা কোর’আনের চেয়ে ফেইসবুককে বেশি ভালোবাসি, এবং ফেইসবুকে বেশি সময় দেই।

এখন প্রশ্ন হলো, এসব সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় কি?

[১]
আমাদের সকলের হাতে হাতে একটা ব্যক্তিগত মোবাইল থাকলেও, আমাদের প্রত্যেকের কাছে একটি করে ব্যক্তিগত কোর’আন নেই।

হয়তো কারো বাসায় মানুষ সাতজন, কিন্তু অর্থসহ কোর’আন আছে মাত্র একটি। এতে অনেক সমস্যা হয়। যখন-তখন কোর’আন পড়া যায় না। কোর’আন থাকে এক রুমে, আমরা থাকি অন্য রুমে। ফলে ইচ্ছে থাকলেও হাতের কাছে কোর’আন না থাকার কারণে, এবং অলসতার কারণে কোর’আন পড়া হয় না।

[২]
অনেকের বাসায় কোর’আন আছে, কিন্তু অফিসে বা কর্মক্ষেত্রে কোর’আন নেই। আবার, অনেকের হয়তো বাসায় বা অফিসে কোথাও অর্থসহ কোর’আনের কোনো হার্ডকপি নেই, ফলে যখন-তখন ফেইসবুক ব্যবহার করা গেলেও যখন-তখন কোর’আন পড়া হয় না।

[৩]
অজু ছাড়া কি কোর'আন ধরা যাবে কিনা? - এ প্রশ্নটি অনেকেই করেন। উত্তর হলো, দুই ধরণের কোর'আন আছে। একটি হলো অর্থসহ কোর'আন এবং অন্যটি হলো অর্থ ছাড়া কোর'আন। সকল আলেমের মতে, অর্থসহ কোর'আন অজু ছাড়া ধরা যাবে। কিন্তু কেবল আরবি কোর'আন অজু ছাড়া ধরা যাবে না বলে কেউ কেউ মত দিয়েছেন। যদিও নাসির উদ্দিন আলবানী সহ অনেক আলেম বলেছেন, আরবি কোর'আনও অজু ছাড়া ধরা যাবে।

আমরা যেহেতু অর্থসহ কোর'আন পড়ার কথা বলছি, সুতরাং তা অজু ছাড়া ধরা যাবে।

[৪]
কোর’আন খতম করার ব্যাপারে আমাদের একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে। আমরা মনে করি, যত তাড়াতাড়ি কোর’আন খতম করা যায়, ততই ভালো। কিন্তু সাহাবীগণ এক সাথে দশ আয়াতের বেশি পড়তেন না। উমার (রা) দশ বছর সময় দিয়ে কেবল সূরা বাকারা খতম করতে পেরেছিলেন। রাসূল (স) ও সাহাবীগণের কেউ কেউ একটিমাত্র আয়াত পড়েই সারারাত কাটিয়ে দিতেন।

কোর’আন পড়তে বসলে অনেকক্ষণ সময় লাগবে এটা ভেবে আমরা কোর’আন পড়তে চাই না। অথচ, প্রতিদিন যে কোনো সময়ে অন্তত একটি আয়াত অর্থ সহ পড়লেও কোর’আনের হক আদায় করা যায়।

ফেইসবুক খতম করতে হয় না, তাই এক মিনিটের কথা চিন্তা করে আমরা ফেইসবুকে প্রবেশ করি। কিন্তু কোর’আন খতম করার একটা অপ্রয়োজনীয় চাপ আমাদের মাথায় থাকে, তাই কোনোদিন এক মিনিটের জন্যেও কোর’আনটা খুলে দেখার ইচ্ছে আমাদের হয় না।

[৫]
ফেইসবুকে একটা স্ট্যাটাস লিখতে সময় লাগে ১৫ মিনিট, আর সেই স্ট্যাটাস পড়তে সময় লাগে ২ মিনিট। কিন্তু কোর’আন নাযিল হতে সময় লেগেছে ২৩ বছর। সুতরাং, সমস্ত কোর'আন রমজানের ১ মাসেই পড়ে বুঝে ফেলা অসম্ভব। তাই, আমরা আমাদের সারাজীবনে প্রতিদিন কোর’আনের এক আয়াত হলেও অর্থ সহ পড়ার প্রতিজ্ঞা করা প্রয়োজন।

[৬]
অনেকেই সারাদিন অনেক ব্যস্ততার কারণে কোর’আন পড়তে পারেন না। তারা খাটের পাশে একটা অর্থসহ কোর’আন রাখতে পারেন। ঘুমানোর সময়ে বালিশে মাথা রাখার আগে অন্তত একটা আয়াত অর্থ সহ পড়ে তারপর ঘুমাতে পারেন।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে নিয়মিত অর্থসহ কোর’আন পড়ার তৌফিক দান করুন।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

গণতন্ত্র সময়ের একটি চাহিদা

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি? ধরুন, ১৬১৭ সাল। উসমানী খেলাফতের অধীনে তখন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূমি। সেই এক-তৃতীয়াংশ ভূমির খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছেন সুলতান আহমদ। কেউ যদি তখন বলতো, আমরা সুলতান আহমদের পরিবর্তন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে তখন কিভাবে সে নির্বাচনটি হত? তখন তো আর ইন্টারনেট বা টেলিভিশন ছিল না, এমনকি প্লেনও ছিল না। নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচনী তফসিলটি বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রত্যেকের কাছে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করতে করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লেগে যেতো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল মানুষ যেহেতু খলীফা প্রার্থী হবার অধিকার রাখে, সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে তাঁদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে করতে সময় লাগতো আরো ২ বছর। নির্বাচন কমিশনার লক্ষ লক্ষ মনোনয়ন পত্র বাচাই করতে করতে লাগতো আরো ১ বছর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দিতে হতো কমপক্ষে আরো ১ বছর। কারণ প্রার্থীদেরকে বহুদূর থেকে এসে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতো। তারপর, প্রা...