সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কোনো মুমিনকে কাফির বলা যায়?

তবলীগের দুটি গ্রুপ একে অপরের চিন্তাকে গ্রহণ করতে পারছেন না বলে একে অন্যকে ভ্রান্ত বলছেন। এর মধ্যে কয়েকজনকে দেখলাম, অন্যকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দিচ্ছেন। অথচ, আলী (রা)-এর মত একজন সাহাবী ও খলিফার বিরুদ্ধের যারা যুদ্ধ করেছেন, তাঁদেরকেও আলী (রা) মুমিন হিসাবে গ্রহণ করেছেন।

এ প্রসঙ্গে ইমাম আবু হানিফা (রা) বলেন –

وقد بلغَني عن علي بنِ طالبٍ رضي اللهُ تعالى عنهُ حينَ كتبَ القضيَّةَ أنهُ يُسمِّي الطائفتَيْنِ مؤمنينَ جميعاً


“আমি আলী (রা) থেকে একটি সিদ্ধান্তে পৌছেছি। আলী (রা) যখন ‘কাদীয়্যাহ’ বইটি লিখেন, তখন যুদ্ধরত দুই গ্রুপকেই তিনি মুমিন হিসাবে নামকরণ করেছিলেন।” [সূত্র: রিসালাতু আবি হানিফা ইলাল বাতি]

রাসূল (স)-এর প্রিয় সাহাবীদেরকে হত্যা করার মতো জঘন্য অন্যায় যারা করেছেন, তাদেরকেও আলী (রা) ইসলাম থেকে খারিজ করে দেননি, বরং মুমিন হিসাবে তাঁদের পরিচয় দান করেছেন।

এ কারণে, ইমাম আবু হানিফা স্পট ভাষায় তাঁর মূলনীতি বলে দেন যে –

وأعلم أني أقولُ: أهلُ القبلةِ مؤمنونَ، لستُ أُخْرِجُهُم من الإيمانِ بتضييعِ شىءٍ من الفرائضِ

“জেনে রাখো, নিশ্চয় আমার কথা হলো, যারাই আহলে মক্কা (তথা মক্কাকে কিবলা স্বীকার করে) তাঁরাই মুমিন। কোনো ফরজ কাজকে কেউ যদি বাদ দেয়, আমি তাঁকে ইসলাম থেকে বের করে দিতে পারি না”। [সূত্র: রিসালাতু আবি হানিফা ইলাল বাতি]

হজরত আলী (রা), ইমাম আবু হানিফা, অথবা, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত মতে, কেউ যতো বড় অন্যায়-ই করুক না কেনো, কখনোই তাকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়ার পক্ষে তাঁরা ছিলেন না। অথচ, আমরা আজ সামান্য মতপার্থক্যের কারণে অন্যকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দিচ্ছি।

আপনি তাবলীগী, দেওবন্দী, সালাফী, বা সূফী যাই হোন না কেনো, অন্যকে ভ্রান্ত বা খারিজ করে দেয়ার কোনো অধিকার আল্লাহ তায়ালা আপনাকে দেয়নি। অন্যের কথা সহ্য করা এবং অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করাই সাহাবী ও সালফে সালেহীনদের নীতি ছিলো।


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...