সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইসলাম কি ভালোবাসার বিরুদ্ধে?

ইসলাম ভালোবাসার বিরুদ্ধে নয়, বরং ভালোবাসার নামে যারা প্রতারণা করে, ইসলাম তাদের বিরুদ্ধে। ইসলাম মানুষকে ভালোবাসার জন্যে আদেশ করে। যেমন রাসূল (স) বলেছেন -

لا تدخلون الجنة حتى تؤمنوا ، ولا تؤمنوا حتى تحابوا أولا أدلكم على شيء إذا فعلتموه تحاببتم : أفشوا السلام بينكم

“একজন মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না ঈমান আনয়ন করবে। একজন মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না একে অপরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি জিনিস বলব, যা পালন করলে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসার সৃষ্টি হবে? তা হলো – তোমাদের মধ্যে সালামের বিস্তার ঘটাও।” [সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৯৩]


তাহলে ইসলাম কিসের বিরুদ্ধে? ইসলাম ভালোবাসার নামে প্রতারণার বিরুদ্ধে। একটি উদাহরণ দিচ্ছি।

ধরুন, সুমন সাহেব একটি জমি কিনতে গেলেন। জমির মালিক সুমন সাহেবকে বললেন, “আমি আপনার কাছে জমি বিক্রি করবো, কিন্তু সে কথা কাউকে জানাতে পারবেন না।” জমির মালিকের কথা শুনে সুমন সাহেব রাজি হয়ে গেলেন, এবং নগদ টাকা দিয়ে জমিটি কিনে নিলেন।

দু’দিন পর সুমন সাহেব যখন জমির মালিক থেকে জমির দলিল নিতে আসলেন, তখন জমির মালিক বললেন, “আমি তো তোমার কাছে কোনো জমি বিক্রি করিনি, তুমি কোত্থেকে এলে?”

যখন সুমন সাহেব জমির মালিককে যে টাকা দিয়েছিলেন, তখন তার কোনো সাক্ষী বা ডকুমেন্ট ছিলো না। ফলে সুমন সাহেবের সাথে জমির মালিক খুব সহজেই প্রতারণা করার সুযোগ পেলো।

ইসলাম এই ধরনের সকল প্রতারণার বিরুদ্ধে।

একজন আপনাকে এসে বললো, “আমি তোমাকে ভালোবাসি, অথবা, আমি তোমাকে বিয়ে করবো, কিন্তু আপাতত কেউ তা জানতে পারবে না”। এ কথাটি মেনে নিলেন। ফলে, আপনি অন্যকে প্রতারণা করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিলেন। ভালোবাসার নামে এ ধরণের প্রতারণার বিরুদ্ধে ইসলাম।

যদি কাউকে আপনার ভালো লাগে, তাহলে উভয়ের পরিবারকে জানিয়ে এখনি বিয়ে করে ফেলুন, অথবা, এখন বিয়ে করতে না পারলে দুই পরিবারের সম্মতিতে আজকেই লিখিত চুক্তি করে ফেলুন।

কাউকে কোনো কিছু না জানিয়ে এবং কোনো ধরণের লিখিত চুক্তি ছাড়া যে কোনো ধরণের সম্পর্ক মানেই প্রতারণা। ইসলাম এ ধরণের প্রতারণার বিরুদ্ধে, কিন্তু ভালোবাসার বিরুদ্ধে নয়।


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

গণতন্ত্র সময়ের একটি চাহিদা

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি? ধরুন, ১৬১৭ সাল। উসমানী খেলাফতের অধীনে তখন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূমি। সেই এক-তৃতীয়াংশ ভূমির খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছেন সুলতান আহমদ। কেউ যদি তখন বলতো, আমরা সুলতান আহমদের পরিবর্তন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে তখন কিভাবে সে নির্বাচনটি হত? তখন তো আর ইন্টারনেট বা টেলিভিশন ছিল না, এমনকি প্লেনও ছিল না। নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচনী তফসিলটি বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রত্যেকের কাছে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করতে করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লেগে যেতো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল মানুষ যেহেতু খলীফা প্রার্থী হবার অধিকার রাখে, সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে তাঁদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে করতে সময় লাগতো আরো ২ বছর। নির্বাচন কমিশনার লক্ষ লক্ষ মনোনয়ন পত্র বাচাই করতে করতে লাগতো আরো ১ বছর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দিতে হতো কমপক্ষে আরো ১ বছর। কারণ প্রার্থীদেরকে বহুদূর থেকে এসে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতো। তারপর, প্রা...