সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আত্মবিস্মৃত মুসলিম বাঙালী

ধরুন, কেউ এসে আমার মাথার পিছনে আঘাত করায় আমি স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেললাম। হাসপাতালে আমার হুঁশ আসার পর আমি জিজ্ঞাস করলাম: “আমি কে?”

কেউ একজন আমাকে বললেন: “তোমার নাম পিন্টু, তুমি জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পড়ে ছিলে।”

এরপর, আমি বললাম: “আমি এখন কোথায় যাব?”


কেউ একজন বললেন: “আমার সাথে চল। আমাদের বাসায় তুমি কাজের ছেলে হিসাবে কাজ করবে।”

স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলায়, আমি জোবায়েরের নাম হয়ে গেলো পিন্টু। আর আমার কাজ হয়ে গেলো অন্যের দাসত্ব করা।

ঠিক একইভাবে,

ইংরেজরা আমাদের এই বাংলায় এসে আমাদের মুসলিম বাঙালিদের মাথায় আঘাত করায় আমারা আমাদের স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছি।

তাই, বাঙালিদের কাউকে যদি আপনি জিজ্ঞেস করেন যে, “আচ্ছা ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত গত হাজার বছরের ১০ জন বাঙালি মুসলিম বুদ্ধিজীবীর অথবা রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম বলো তো...।”

আমরা তা বলতে পারব না।

আমাদের বাঙালি মুসলিমদের হাজার বছরের ঐতিহ্য হারিয়ে আমরা যখন ফেলেছি, তখন অন্যরা এসে আমাদেরকে বলেন যে: “অমুক হলো তোমারদের জাতীর পিতা, তমুক হলো তোমাদের জাতীর বন্ধু, সমুক হলো তোমাদের হাজার বছরের বাঙালি বুদ্ধিজীবী”।

এভাবেই আমরা বাঙালি মুসলিমরা আমাদের রাজনৈতিক পরিচয় ভুলে গিয়েছি। ফলে, কেউ এসে এখন আমাদেরকে অ্যামেরিকার দাস বানায়, অথবা কেউ এসে আমাদের রাশিয়া বা চিনের দাস বানায়, কিংবা কেউ এসে আমাদেরকে ভারতীয় দাস বানায়।

আমরা যেহেতু আমাদের বাঙালি মুসলিম পূর্বপুরুষদের পরিচয় ভুলে গেছি, তাই যে কেউ এখন খুব সহজে আমাদেরকে তাদের দাস বানিয়ে ফেলতে পারে।

তাহলে এ থেকে মুক্তির উপায় কি?

আগামী দিনের বাংলাদেশে কেউ যদি দাসত্ব মুক্তির রাজনীতি করতে চায়, তাহলে তাঁদেরকে হাজার বছরের মুসলিম বাঙালিদেরকে আবার স্মরণ করতে হবে। তাঁদের রাজনৈতিক কৌশলগুলো নিজেরা আয়ত্ত করে নিতে হবে। তিতুমীর বা হাজি শরিয়ত উল্লাহদের মতো রাজনৈতিক পরিচয়কে শক্তভাবে ধারণ করা ছাড়া এ দেশে দাসত্বের রাজনীতি থেকে মুক্তি নেই।

ইসলামী রাজনীতি যারা করতে চান, অথবা যারা দাসত্ব মুক্তির রাজনীতি করতে চান, কিংবা যারা জুলুমের বিরুদ্ধে লড়তে চান, তাঁরা সুদূর তিউনিসিয়া বা তুরস্কের দিকে চেয়ে না থেকে আমাদের হাজার বছরের বাঙালি মুসলিমদের চিন্তাকে পুনর্জীবিত করা উচিত।


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...