সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রেনে গেনোন - মসলিম দার্শনিক ও গণিতবিদ





বিংশ শতাব্দীর অন্যতম একজন মুসলিম গণিতবিদ, দার্শনিক ও সূফী হলেন রেনে গেনোন (René Guénon)। কেউ যদি আধুনিক বিজ্ঞান ও বস্তুবাদী নাস্তিক বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদ করতে চায়, তাহলে রেনে গেনোন তাঁকে একটি ভালো পথ দেখিয়ে দিবে।

রেনে গেনোন ১৮৮৬ সালে ফ্রান্সের একটি খ্রিস্টান পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। সত্য অনুসন্ধানের ইচ্ছায় জীবনে বিভিন্ন ধর্ম গ্রহণ করার পর সর্বশেষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এবং ১৯৫১ সালে একজন মুসলিম হিসাবে মিশরে মৃত্যু বরণ করেন।

মুসলিম হবার পর তাঁর নাম হয়েছিলো শেখ আবদুল ওহিদ ইয়াহিয়া। তাঁর লিখা বই পড়ে ইউরোপের প্রচুর মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন। যে বইটি লিখে তিনি বিখ্যাত হয়েছিলেন, তা হলো – “The Crisis of the Modern World” বা, “আধুনিক বিশ্বের বিপদসমূহ।”

বইটির সারমর্ম
_________

জ্ঞানী মানুষেরা পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত হয়ে আসছিলো। কিন্তু আধুনিক যুগে এসে জ্ঞানীদেরকে আর সম্মান করা হয় না। এখন জ্ঞান অর্জনের চেয়ে কাজ করাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। ফলে আমাদের সমাজে একজন স্কুল শিক্ষকের চেয়ে একজন ব্যাংক কর্মচারীকে বেশি মর্যাদা ও গুরুত্ব দেয়া হয়।

আধুনিকতার কারণে মানুষ জ্ঞান অর্জনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। মানুষ তার নিজের সম্পর্কে জানতে যেমন আগ্রহী না, তেমনি তার সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কেও জানতে আগ্রহী না। ফলে মানুষ নিজের কাছে নিজেই গুরুত্ব হারিয়ে ফেলছে এবং নিজের কাছে নিজেই অপরিচিত হয়ে গেছে।

জ্ঞানের অভাবে মানুষ তার আত্মপরিচয় ভুলে গেছে। মানুষ যে স্রষ্টার প্রতিনিধি, এই পরিচয়টি মানুষ এখন জানে না। আধুনিক বিশ্ব মানুষকে স্রষ্টার প্রতিনিধি থেকে নিচে নামিয়ে যন্ত্রের দাস করে ফেলেছে। মানুষ যখন থেকে যন্ত্রের দাস হতে শুরু করলো, তখন থেকে সে আল্লাহকে ভুলে যেতে লাগলো। এ কারণে, পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি নাস্তিক এই আধুনিক যুগেই দেখা যাচ্ছে।

অতীতে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ কোনো না ধর্ম পালন করতো। কিন্তু আধুনিক মানুষেরা নিজেকে নাস্তিক হিসাবে পরিচয় দিতেই গর্ব বোধ করে। এর কারণ হলো, আধুনিক যুগে মানুষ সত্যিকারের জ্ঞান অর্জনের প্রতি অনাগ্রহী, মানুষ কেবল যন্ত্রের প্রতি-ই বেশি আগ্রহী। মূর্খতার কারণে মানুষ আল্লাহকে ভুলে গিয়ে যন্ত্রের দাসত্ব মেনে নিয়েছে।
_______
রেনে গেনোন যখন উপরের কথাগুলো বলছিলেন, তখন বস্তুবাদী বুদ্ধিজীবীরা চেঁচামেচি শুরু করলো। তাঁরা বললো, এই যে রেনে গেনোন! তুমি কি বলতে চাও, আমরা সবাই মূর্খ?

রেনে গেনোন তখন তাদেরকে বললেন – শুনো…, জ্ঞান দুই প্রকার। মানুষ নিজের সম্পর্কে জানা হলো এক ধরণের জ্ঞান। আর যন্ত্র সম্পর্কে জানা হলো অন্য ধরণের জ্ঞান। তোমরা বস্তুবাদী আধুনিক বুদ্ধিজীবীরা সবাই নিজের পরিচয় জানো না, অথচ বিভিন্ন যন্ত্রের যাবতীয় জ্ঞান নিয়ে পড়ে আছো। তোমাদেরকে আমি কিভাবে জ্ঞানী বলি?

তোমার তো এরিস্টটলকে নিজেদের গুরু মনে কর। অথচ এরিস্টটল তোমাদের মত মূর্খ ছিলেন না। এরিস্টটলের Physics বইটি লিখেছিলেন বস্তুর হাকিকত নিয়ে। একই সাথে Metaphysics বইটি লিখেছেন তাঁর নিজের অস্তিত্বের হাকিকত নিয়ে। এরিস্টটল তোমাদের মতো বস্তুবাদীও ছিলেন না।

রেনে গেনোন আরো বলেন –

The profane sciences of which the modern world is so proud are really and truly only the degenerate ‘residues’ of the ancient traditional sciences.

“আধুনিক বিশ্ব যে বস্তুবাদী বিজ্ঞান নিয়ে এতো গর্ব করে, তা আসলে অতীত বিজ্ঞানের ফেলে দেয়া উচ্ছিষ্ট ছাড়া আর কিছুই নয়।”
_______
আধুনিক বিজ্ঞান ও বস্তুবাদী দর্শনের বিরুদ্ধে রেনে গেনোন যে জিহাদ শুরু করেছেন, তা এখনো চলমান। বর্তমান সময়ের অন্যতম মুসলিম দার্শনিক সাইয়িদ হোসাইন নসর সহ অনেকেই বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদে তাঁকে অনুসরণ করছেন। নাস্তিকতার বিরুদ্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক ও দার্শনিক জিহাদে অংশ নিতে চাইলে রেনে গেনোন আমাদেরকেও অনেক সাহায্য করতে পারবে।






 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

What is The Ruling Regarding a Women Going to Hajj Without a Mahram?

Answered by Dr. Yusuf al-Qaradawi | Translated by Sister Marwa The original rule stipulated in shari’a that a woman is not to travel alone.  Rather, she has to be accompanied by her husband or any other mahram of hers.  This rule is supported by narrations of Bukhari and others that Ibn-Abbas (ra) said, that the Prophet (pbuh) said, “A woman should not travel except with a mahram, and no man should visit her except in the presence of a mahram.” Abu-Hurairah related the following on behalf of the Prophet (pbuh), “It is not permissible for a woman who believes in Allah and the Last Day to travel for one day and night except with a mahram.” Abu-Sa’id reported that the Prophet (pbuh) said, “A woman should not travel for two days except she is accompanied by her husband or a mahram.”