সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

'সভ্যতার সংঘাত' বলে কিছু আছে?

মুসলিম বিশ্বের উপর পশ্চিমা বিশ্বের যে আক্রমণ, তার পিছনে একটি তত্ত্ব রয়েছে। তত্ত্বটির নাম - সভ্যতার সংঘাত বা ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশনস। এই তত্ত্বটি দিয়েছিলেন স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন। তাঁর ধারণা মতে, ইসলামী সভ্যতা ও পশ্চিমা সভ্যতার মাঝে একটি দ্বন্দ্ব রয়েছে। সুতরাং পশ্চিমা সভ্যতাকে বাঁচাতে হলে ইসলামী সভ্যতাকে যেভাবেই হোক আক্রমণ করা উচিত।

হান্টিংটন আসলে সভ্যতার ধারনাটাই বোঝেননি। তিনি যদি সভ্যতা কি জিনিস তা বুঝতেন, তাহলে "সভ্যতার দ্বন্দ্ব" নামে কখনো বই লিখতেন না।

আমরা জানি,


সভ্য মানুষ মাত্রই ভালো মানুষ। দুই জন সভ্য মানুষ কখনো ঝগড়া করতে পারে না। তেমনি দুটি সভ্যতা কখনো একে অপরের সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হতে পারে না।

যদি কখনো দুটি মানুষের মাঝে দ্বন্দ্ব দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে, হয় দু'জনেই অসভ্য, অথবা, একজন সভ্য, অন্যজন অসভ্য। তেমনি, দুটি জাতী যখন সভ্য হয়, তখন কেউ কারো সাথে দ্বন্দ্ব করার প্রশ্নই আসে না। কিন্তু, দুটি জাতীর মধ্যে যে কোনো একটি জাতী যদি অসভ্য হয়, তাহলেই কেবল সে অন্য জাতীর সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়।

এ সহজ বিষয়টি হান্টিংটন বুঝতে পারেননি। তাই তিনি "সভ্যতার দ্বন্দ্ব" নামের এই তত্ত্বটি আবিষ্কার করেছেন। অথচ, হান্টিংটন যদি কোর'আন পড়তেন, তাহলে তাঁর মাথায় এই ভুল ধারণা কখনোই আসতো না।

কোর'আনে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন জাতী ও গোষ্ঠীর মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করেছেন, যাতে একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারে, দ্বন্দ্ব করার জন্যে নয়।

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَىٰ وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۚ إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ

"হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে সর্বাধিক মুত্তাকী। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ এবং সবকিছুর খবর রাখেন।" [সূরা ৪৯/হুজরাত - ১৩]

এ আয়াতটি কেবলমাত্র মুসলিম জাতীকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়নি, বলা হয়েছে সমস্ত মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করে। আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন জাতীতে জাতীতে যে পার্থক্য করেছেন, তা পরস্পর দ্বন্দ্ব করার জন্যে নয়, বরং পরস্পরের সাথে পরিচিত হবার জন্যে। এবং পরস্পর পরস্পর থেকে জ্ঞান আহরণ করার জন্যে।

পশ্চিমাদের সাথে মুসলিমদের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কারণ, আমরা সভ্য। কিন্তু যারা অসভ্য তারাই কেবল দ্বন্দ্বের তত্ত্ব আবিষ্কার করেন।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...