সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পশ্চিমা রাজনীতি ও পশ্চিমা শিক্ষা কি একই?

পশ্চিমা রাজনীতি ও পশ্চিমা শিক্ষা, এ দুটির মাঝে পার্থক্য জানা প্রয়োজন। অনেকেই পশ্চিমা রাজনীতিকে খুব ভালোবাসেন, কিন্তু পশ্চিমা শিক্ষাকে সারাক্ষণ গালাগালি করতে থাকেন। অথচ, বিষয়টি উল্টো হবার প্রয়োজন ছিল।

যারা পশ্চিমা শিক্ষাকে দিনরাত গালাগালি করেন, তাঁরা আসলে পশ্চিমাদের শিখানো শব্দ দিয়েই পশ্চিমাদের গালাগালি করেন। আমরা নিজেদের ভাষায় পশ্চিমাদের বিরোধিতা করতে পারি না; এডওয়ার্ড সাঈদ বা নোয়াম চমস্কিদের থেকে আমাদেরকে শিক্ষা নিতে হয়।

পশ্চিমা রাজনীতি মুসলিমদের অনেক ক্ষতি করেছে, সুতরাং, পশ্চিমা রাজনীতির বিরোধিতা করা উচিত। কিন্তু পশ্চিমা জ্ঞান ও ভাষার বিরোধিতা করা মুশকিল। কেননা, পৃথিবীর সকল জ্ঞান ও ভাষা-ই আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে।


পৃথিবীর যে প্রান্তে যে জ্ঞান-ই থাকুক না কেনো, তা মুসলিমদের হারানো সম্পদ। জ্ঞান কখনো পশ্চিমা বা পূর্বের হতে পারে না। জ্ঞান হলো ভিন্ন সভ্যতা বা অপরকে জানার একটি উপকরণ বা উপায়।

ইবনে সিনা, ইবনে খালদুন, আল বিরুনী সহ মুসলিম বিশ্বের যেসব বুদ্ধিজীবীকে নিয়ে আমরা আজ গর্ব করি, তাঁদেরকে আমরা পশ্চিমা শিক্ষা ও ভাষার কারণেই চিনতে পেরেছি। সেলজুক বা উসমানী খেলাফতের সময়কার হাজার হাজার বিজ্ঞানী ও দার্শনিকের নাম-গন্ধও আমরা জানি না। কারণ, রাজনৈতিক শত্রুতার কারণে পশ্চিমারা তাঁদের অনেকেই গ্রহণ করেননি। পশ্চিমারা যাদেরকে গ্রহণ করেননি, এমন একজন দার্শনিক বা বিজ্ঞানীর নামও আমরা আজ জানি না।

আমাদের দেশের প্রথম আলো’রা পশ্চিমা রাজনীতির দালালী করেন, কিন্তু পশ্চিমা জ্ঞানের প্রতিনিধিত্ব করার যোগ্যতা তাঁদের নেই। প্রথম আলো'দের সাথে আমাদের বিরোধিতার জায়গা এটাই।

এখানে একটি জিনিস ভালোভাবে লক্ষ্য করা প্রয়োজন। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, আর শয়তান পশ্চিমাদেরকে সৃষ্টি করেছে, বিষয়টি এমন নয়। আমাদের সবাইকে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন। পূর্ব যেমন আমাদের, পশ্চিমও আমাদের।

আল্লাহ তায়ালা বলেন –

وَلِلَّهِ ٱلْمَشْرِقُ وَٱلْمَغْرِبُ ۚ فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا۟ فَثَمَّ وَجْهُ ٱللَّهِ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ وَ‌ٰسِعٌ عَلِيمٌۭ

পূর্ব ও পশ্চিম আল্লারই। অতএব, তোমরা যেদিকেই মুখ ফেরাও না কেনো, সেদিকেই আল্লাহ বিরাজমান। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ। [সূরা ২/বাকারা – ১১৫]
______

পৃথিবীর সকল জ্ঞানের মালিক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। সুতরাং, সকল জাতি ও গোষ্ঠী থেকে ভালো ও উপকারী জ্ঞানটা আমাদের অর্জন করা প্রয়োজন।


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...