সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ক্ষমতার আগ্রহ কি দোষের কিছু?

ক্ষমতা বা রাজত্ব পাওয়ার আগ্রহ কিংবা নেতা হবার ইচ্ছা কি দোষের কিছু?

দেখি, কোর’আন কি বলে।

নবী-রাসূলগণ আমাদের আদর্শ। তাঁরা যা যা করেছেন, সবকিছুই আমাদের করণীয়।
______



সুলাইমান (আ) দোয়া করতেন –

قَالَ رَبِّ ٱغْفِرْ لِى وَهَبْ لِى مُلْكًۭا لَّا يَنۢبَغِى لِأَحَدٍۢ مِّنۢ بَعْدِىٓ ۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلْوَهَّابُ

"হে আমার প্রতিপালক, আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে এমন এক রাজ্য দান করুন, যার অধিকারী আমার পরে আর কেউ না হয়। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা।" [সূরা ৩৮/সাদ - ৩৫]

সুলাইমান যে দোয়াটি করেছেন, সে দোয়াটি হুবহু কোর’আনে নিয়ে আসার কারণ হলো, আমরা যাতে এমন দোয়া করি।

কোর’আনে যতগুলো দোয়া রয়েছে, তন্মধ্যে রাষ্ট্র বা রাজ্য ক্ষমতা লাভ করার দোয়াটি অন্যতম।

ইব্রাহীম (আ) সন্তান লাভের জন্যে করেছিলেন, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ইসমাইল ও ইসহাক (আ)-এর মত দুই জন নবী সন্তান দান করেছিলেন। আমরাও ইব্রাহীম (আ) মত আল্লাহর কাছে সন্তান লাভের জন্যে দোয়া করি, যদিও আমাদের সন্তানরা নবীর মর্যাদা প্রাপ্ত হবে না।

একইভাবে, সুলাইমান (আ) –এর মত রাষ্ট্র বা রাজ্য ক্ষমতা লাভ করার দোয়া আমরা করতে পারি, যদিও সুলাইমান (আ) –এর মত রাজ্য হয়তো আমরা পাব না।
______

ইব্রাহীম (আ) –কে আল্লাহ তায়ালা যখন বললেন, আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা বানাবো। তখন, ইব্রাহীম (আ) আল্লাহর কাছে দাবী করে বসলেন যে, আমার বংশধর থেকেও নেতা বানাবেন।

وَإِذِ ابْتَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا قَالَ وَمِن ذُرِّيَّتِي قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ

“যখন ইব্রাহীমকে তাঁর প্রতিপালক কয়েকটি কথার মাধ্যমে পরীক্ষা করলেন, এবং ইব্রাহীম তা পূর্ণ করলেন, তখন তাঁর প্রতিপালক বললেন, আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করব। ইব্রাহীম বললেন, আমার বংশধর থেকেও...। তিনি বললেন আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের পর্যন্ত পৌঁছাবে না। [সূরা ২/বাকারা – ১২৪]

মূলত, ইব্রাহীম (আ) –এর দোয়ার কারণেই সুলাইমান (আ) এত বড় রাজ্যের অধিকারী হয়েছিলেন।
______

ইউসুফ (আ) –এর মত একজন সৎ চরিত্রের নবীও তৎকালীন অমুসলিম সরকার প্রধানকে বললেন, আপনি আমাকে এই রাষ্ট্রের খাদ্যমন্ত্রী হিসাবে নিযুক্ত করুন।

قَالَ ٱجْعَلْنِى عَلَىٰ خَزَآئِنِ ٱلْأَرْضِ ۖ إِنِّى حَفِيظٌ عَلِيمٌۭ

“ইউসুফ বলল, আমাকে দেশের ধন-ভাণ্ডারে নিযুক্ত করুন। আমি বিশ্বস্ত রক্ষক ও অধিক জ্ঞানবান।”

অর্থাৎ, যোগ্যতা এবং জ্ঞান থাকলে যে কেউ ক্ষমতা ও রাজত্বের আকাঙ্ক্ষা করতেই পারে।
______

নেতা হবার ইচ্ছা কেবল নবী-রাসূলদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, এটি মুমিন বান্দাদেরও একটি বৈশিষ্ট্য। সূরা ফুরকানে মুমিন বান্দাদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন –

وَٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَ‌ٰجِنَا وَذُرِّيَّـٰتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍۢ وَٱجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

"যারা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদেরকে এমন জীবনসঙ্গী এবং সন্তান দান করুন, যারা হবে আমাদের চোখের মণি। এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে নেতা করুন"। [সূরা ২৫/ফুরকান - ৭৪]
______

সুতরাং, আমারা বলতে পারি,

যোগ্যতা ও জ্ঞান থাকলে যে কেউ ক্ষমতা ও রাজত্বের আকাঙ্ক্ষা করতেই পারে, এবং যে কেউ নেতা হবার ইচ্ছা পোষণ করতেই পারে। এটি নবী-রাসূল ও মুমিন বান্দাদের বৈশিষ্ট্য। এবং এটি আল্লাহর ইবাদাত।


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...