সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ব্রেইন, হার্ট ও মাইন্ড : টেলিভিশন

ব্রেইন, হার্ট ও মাইন্ড –এ তিনটির সম্পর্ক বোঝার জন্যে একটি টেলিভিশনকে কল্পনা করা যাক। টেলিভিশনের মনিটর বা পর্দা হলো আমাদের ব্রেইন, টেলিভিশনের অ্যান্টেনা হলো আমাদের হার্ট এবং স্যাটেলাইট সিগন্যাল হলো আমাদের মাইন্ড।
_________

একটি টেলিভিশনের কথা বললে আমরা কেবল বক্সের মত একটি যন্ত্রকে বুঝি না। আমরা জানি, টেলিভিশনের তরঙ্গ আসা-যাওয়ার জন্যে পৃথিবীর উপরে একটি স্যাটেলাইট বসাতে হয়। স্যাটেলাইট থেকে তরঙ্গ আসলেই কেবল পৃথিবীর সকল টেলিভিশন তাদের দৃশ্য ও শব্দ ধারণ করতে পারে। তাই, প্রতিটি টেলিভিশনের-ই একটি বাহ্যিক ও একটি অদৃশ্য অংশ থাকে।


তেমনি,

আমাদের প্রত্যেক মানুষের-ই দুটি অংশ থাকে। হার্ট ও মস্তিষ্ক হলো আমাদের শরীরের বাহ্যিক দুটি অংশ, এবং আমাদের আত্মা বা মাইন্ড হলো অদৃশ্য একটি অংশ। মাইন্ড আমাদের শরীরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং সারা বিশ্বে বিচরণ করে। হার্টের মাধ্যমে আমরা যখন আমাদের মাইন্ডের কোনো একটি অংশের প্রতি মনোযোগী হই, তখন আমাদের মস্তিষ্কে তা ফুটে উঠে।
_________

টেলিভিশনের অ্যান্টেনা নড়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে টেলিভিশনের পর্দা ঝিরঝির করতে থাকে। দৃশ্য ভালো আসে না। তাই, ভালো একটি অ্যান্টেনাকে ভালোভাবে বসাতে পারলেই কেবল টেলিভিশনের শব্দ ও দৃশ্য আমরা ভালোভাবে দেখতে পাই।

তেমনি,

আমাদের হার্ট হলো ব্রেইনের একটি অ্যান্টেনা, যা নষ্ট হয়ে গেলে বা নড়ে গেলে, আমাদের ব্রেইন ভালোভাবে চিন্তা করতে পারে না। হার্টকে ভালো রাখতে পারলে আমাদের চিন্তার স্বচ্ছতা ও সৌন্দর্য ফুটে উঠে।
_________

একটি টেলিভিশন মনিটর যতই দামী বা যতই সুন্দর হোক না কেন, স্যাটেলাইট থেকে আসা সিগন্যালগুলো ধারণ করার ক্ষমতা না থাকলে সেটি একটি খেলনার বক্সে পরিণত হয়।

তেমনি,

আমাদের চতুর্দিকে চিন্তা করার অনেক উপাদান থাকে। কিন্তু আমাদের হার্ট যদি চিন্তার সেই তরঙ্গগুলোকে ধারণ করাতে না পারে, এবং আমাদের মস্তিষ্ক যদি ঐ তরঙ্গগুলোকে ডি-কোড করতে না পারে, তাহলে আমাদের শরীরটাও একটি খেলনার যন্ত্রে বা নিম্নমানের পশুতে পরিণত হয়।
_________

মনিটরের আশেপাশে সবগুলো টিভি চ্যানেলের সিগন্যাল-ই উপস্থিত থাকে। ধরুন, ‘৭১ টিভি’ আমাদের ভালো লাগলো না, সাথে সাথেই চ্যানেলটি পরিবর্তন করে আমরা অন্য চ্যানেলে চলে যেতে পারি।

তেমনি,

আমাদের মাইন্ডে সব ধরণের চিন্তা-ই উপস্থিত থাকে, কিন্তু আমাদের মস্তিষ্ক সব ধরনের চিন্তাকে একই সাথে ধারণ করতে পারে না। আমরা আমাদের মস্তিষ্ককে যে ধরণের চিন্তা ধারণ করতে বলি, মস্তিষ্ক তাই ধারণ করে এবং ডি-কোড করতে থাকে।
_________

আমাদের মস্তিষ্কগুলো আজকাল নেটওয়ার্ক বিহীন টেলিভিশনের বক্সের মত অকার্যকর হয়ে গেছে। ফলে আমাদের চতুর্দিকে ছড়িয়ে থাকা স্বর্গীয় সিগন্যালগুলোকে আমরা আর ডি-কোড করতে বা বুঝতে পারছি না।


 

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

গণতন্ত্র সময়ের একটি চাহিদা

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি? ধরুন, ১৬১৭ সাল। উসমানী খেলাফতের অধীনে তখন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূমি। সেই এক-তৃতীয়াংশ ভূমির খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছেন সুলতান আহমদ। কেউ যদি তখন বলতো, আমরা সুলতান আহমদের পরিবর্তন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে তখন কিভাবে সে নির্বাচনটি হত? তখন তো আর ইন্টারনেট বা টেলিভিশন ছিল না, এমনকি প্লেনও ছিল না। নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচনী তফসিলটি বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রত্যেকের কাছে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করতে করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লেগে যেতো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল মানুষ যেহেতু খলীফা প্রার্থী হবার অধিকার রাখে, সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে তাঁদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে করতে সময় লাগতো আরো ২ বছর। নির্বাচন কমিশনার লক্ষ লক্ষ মনোনয়ন পত্র বাচাই করতে করতে লাগতো আরো ১ বছর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দিতে হতো কমপক্ষে আরো ১ বছর। কারণ প্রার্থীদেরকে বহুদূর থেকে এসে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতো। তারপর, প্রা...