সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ফেরেশতা, জিন ও মানুষের সম্পর্ক

প্রতিটি মানুষের মাঝে দুটি সত্ত্বা থাকে। একটি জিন সত্ত্বা, এবং অন্যটি ফেরেশতা সত্ত্বা।

জিন সত্ত্বা মানুষকে সবসময় খারাপ কাজের আদেশ দেয়, আর ফেরেশতা সত্ত্বা মানুষকে সবসময় ভালো কাজের আদেশ দেয়।

মানুষের কাজ হলো, ফেরেশতা সত্ত্বার দ্বারা জিন সত্ত্বাকে প্রতিহত করা।


মানুষের ভিতরের ফেরেশতা সত্ত্বা যদি কখনো তার জিন সত্ত্বাকে হারাতে পারে, তাহলে মানুষ মুসলিম হতে পারে। কিন্তু জিন সত্ত্বা যদি ফেরেশতা সত্ত্বাকে হারিয়ে দেয়, তাহলে মানুষ শয়তান হয়ে যায়।

এ কারণে, ইসলামে ফেরেশতাকে বিশ্বাস করতে বলা হয়েছে, কিন্তু জিন ও শয়তানকে বিশ্বাস করতে বলা হয়নি।

রেফারেন্স:

কোর’আনে বলা হয়েছে –

وَالَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَن يَكُنِ الشَّيْطَانُ لَهُ قَرِينًا فَسَاءَ قَرِينًا

“যারা লোক দেখানোর জন্যে তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, এবং আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করে না, শয়তান তাদের সঙ্গী হয়ে যায়। আর সঙ্গী হিসাবে সে খুবই মন্দ।”। [সূরা ৪/নিসা – ৩৮]

হাদিসে বলা হয়েছে –

عن ابن مسعود رضي الله عنه : قال رسول الله - صلى الله عليه وسلم - : " ما منكم من أحد إلا وقد وكل به قرينه من الجن ، وقرينه من الملائكة : . قالوا : وإياك يا رسول الله ؟ قال : وإياي ، ولكن الله أعانني عليه فأسلم ، فلا يأمرني إلا بخير ".
[ رواه مسلم 2814 وأحمد 1/385 ]

“ইবনে মাসুদ (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (স) বলেন – “তোমাদের মাঝে এমন কেউ নেই, যার একজন জিন সঙ্গী এবং একজন ফেরেশতা সঙ্গী নেই। সাহাবীগণ বললেন – “আপনার সাথেও হে রাসূলুল্লাহ?” রাসূল (স) বললেন – আমার সাথেও আছে। তবে আল্লাহ তায়ালা আমাকে সাহায্য করেছেন, তাই সে ইসলাম গ্রহণ করেছে। সে আমাকে কেবল ভালো কাজের আদেশ দেয়”। [মুসলিম ও আহমদ]

উপরোক্ত আয়াত ও হাদিস থেকে কিছু অনুসিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।

১। ফেরেশতা, জিন ও মানুষ সবাইকে আল্লাহর ইবাদত করার জন্যে সৃষ্টি করা হয়েছে। [সূত্র ৫১:৫৬]

২। মানুষের অন্তরে ফেরেশতারা ভালো আদেশ এবং জিনেরা খারাপ আদেশ প্রদান করে।

৩। ফেরেশতা ও মুসলিমরা মানুষের মিত্রপক্ষ।

৪। জিন ও শয়তানেরা মানুষের শত্রুপক্ষ। [সূত্র ৬: ১১২]

৫। ইবলিস জিন হবার কারণে সে মানুষের শত্রুপক্ষে যোগ দিয়েছিল। [সূত্র ১৮: ৫০ ]

৬। মুসলিম ও শয়তান দুটি উপাধি।

৭। জিনেরাও মুসলিম হতে পারে। [সূত্র ৭২: ১৪ ]

৮। এবং মানুষেরাও শয়তান হতে পারে। [সূত্র ৬: ১১২; ১১৪: ৬]

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...