সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমাদের পৃথিবীটা যেন একটি ফুটবল

ফুটবল খেলা আমার পছন্দ না হলেও এটা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। কেন এ খেলা এত জনপ্রিয়, তা বুঝি না; তবে ফুটবল খেলা দ্বারা পৃথিবীকে আমি ভালোভাবে বুঝতে পারি।

যেমন,

ফুটবলকে আমি আমাদের পৃথিবীর মত মনে করি এবং খেলার ৯০ মিনিট সময়কে আমাদের দুনিয়াবি সময় মনে করি।


১.
ফুটবল খেলা হয় দুটি পক্ষ মিলে। একটি মিত্রপক্ষ এবং অন্যটি শত্রুপক্ষ। খেলার মাঠে একে অপরের শত্রু হলেও কেউ কাউকে আঘাত করতে পারে না। কেউ যদি কাউকে আঘাত করে, তাহলে রেফারি তাকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন।

তেমনি,

পৃথিবীতে আমাদের অনেক শক্রপক্ষ আছে। কিন্তু কেউ কাউকে কোনো রকম আঘাত না করেই শত্রু পক্ষের সাথে প্রতিযোগিতা করে যেতে হয়। কখনো কাউকে আঘাত করলে আল্লাহর নির্ধারিত লাল কার্ড দ্বারা আমাদের সম্মান ও স্থানচ্যুত করে দেয়া হয়।

২.
ফুটবল খেলা খেলতে হয় দলগতভাবে। কিন্তু এককভাবে প্রত্যেকেই ভালো খেলার চেষ্টা করতে হয়। কেউ ভালো খেলার পরেও কোনো কারণে নিজের দল যদি হেরে যায়, তাতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, হেরে যাওয়া দলের খেলোয়াড়কেও অনেক সময় সেরা খেলোয়াড় হিসাবে পুরস্কৃত করা হয়।

তেমনি,

পৃথিবীতে মানুষকে দলবদ্ধভাবে চলতে হয়, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেককে-ই ভালো করার চেষ্টা করতে হয়। দলগতভাবে কেউ হেরে গেলেও ব্যক্তিগতভাবে জয়ী হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

৩.
খেলার মাঠে সব খেলোয়াড়-ই ফুটবলটিকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসতে চায়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়ে যাবার পর কেউ আর ঐ ফুটবলটাকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসার জন্যে মাঠে দৌড়াতে থাকে না।

তেমনি,

মানুষ যতদিন বেঁচে থাকে, পৃথিবীকে পাওয়ার জন্যে সর্বদা চেষ্টা করতে থাকে। কিন্তু মৃত্যুর পর পৃথিবীটা ফুটবলের মতই অকার্যকর হয়ে যায়।

৪.
খেলার মাঠে ফুটবলটি কেউ নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারলে দ্রুত তা নিজ পক্ষের অন্য কাউকে দিয়ে দিতে হয়। নতুবা শত্রু পক্ষের আক্রমণের স্বীকার হতে হয়।

তেমনি,

পৃথিবীতে কেউ কোনো কিছু অর্জন করলে তা এক বছরের মধ্যে অন্য অভাবীদেরকে দিয়ে দিতে হয়। নতুবা শত্রুপক্ষ সে সম্পদ নিয়ে যাবার জন্যে নানা আক্রমণ করতে থাকে।

৫.
খেলার মাঠে নিয়ম হলো, ফুটবলকে কেবল পা দিয়েই নিজের আয়ত্তে আনা যাবে। কেউ ফুটবলকে হাত দিয়ে ধরে ফেললে তা অনেক বড় অন্যায় হয়ে যায়।

তেমনি,

পৃথিবীকে অর্জন করতে হয় পরিশ্রম করার মাধ্যমে। বিনা পরিশ্রমে কিংবা অসৎ উপায়ে অথবা সুদ-ঘুষ ও কালো টাকার মাধ্যমে পৃথিবীকে অর্জন করতে চাইলে তা মহা অন্যায় হয়ে যায়।

৬.
খেলার মাঠে সব খেলোয়াড়-ই ফুটবলটিকে পেতে চায়, কিন্তু পুরস্কার হিসাবে কেউই ঐ ফুটবলটিকে পেতে চায় না। বরং নগদ অর্থ ও স্বর্ণ পদক অর্জন করতে চায়।

তেমনি,

সত্যিকারের মানুষেরা পৃথিবীটাকে পাওয়ার জন্যে প্রতিযোগিতা করে না, বরং পৃথিবী পরবর্তীতে জান্নাতি পুরস্কার পাবার জন্যেই তারা এ পৃথিবীতে প্রতিযোগিতা করে।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...