সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমাদের দেশের নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র নয়

পুরুষেরা বিয়ের সময় আবশ্যিকভাবে নারীদেরকে মোহর বা সম্পদ দিতে হয়।

ধরুন, একজন পুরুষ বিয়ে করার সময় তাঁর সঙ্গিনীকে পাঁচ লাখ টাকা দিলো।

এ টাকাটা ঐ নারীটি কি করবে?


অনেকে হয়তো ব্যাংকে জমা রেখে দিবে। কিন্তু মুসলিম নারী যেহেতু সুদ খায় না, সুতরাং মোহরের টাকাটা কোনো ব্যাংকে সে রাখবে না।

তাহলে কি টাকাটা পুরুষকে ফিরিয়ে দিবে?

না। কারণ, পুরুষকে টাকাটা ফিরিয়ে দিলে সেটা আর স্ত্রীর মোহর বা সম্পদ হিসাবে থাকে না। সেটা তখন পুরুষের নিজের সম্পদ হয়ে যায়।

তাহলে, সংসারের চাল-ডাল কিনার জন্যে খরচ করবে?

না। কারণ, সংসারের চার-ডাল কেনার দায়িত্ব কেবল পুরুষের।

তাহলে?

হ্যাঁ। নারী তাঁর সম্পদ দিয়ে যা ইচ্ছা তা করবে। ইচ্ছা করলে ব্যবসা করবে, অথবা, ইচ্ছা করলে সংসারের চাল-ডান কিনবে।

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারী ও পুরুষ উভয়ে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র। পুরুষ তাঁর সম্পদ দিয়ে যা কিছু করতে পারে, নারীও তাঁর সম্পদ দিয়ে ঠিক তাই করতে পারে।

আল্লাহ তায়ালা বলছেন –

إِنَّ ٱلْمُسْلِمِينَ وَٱلْمُسْلِمَـٰتِ وَٱلْمُؤْمِنِينَ وَٱلْمُؤْمِنَـٰتِ وَٱلْقَـٰنِتِينَ وَٱلْقَـٰنِتَـٰتِ وَٱلصَّـٰدِقِينَ وَٱلصَّـٰدِقَـٰتِ وَٱلصَّـٰبِرِينَ وَٱلصَّـٰبِرَ‌ٰتِ وَٱلْخَـٰشِعِينَ وَٱلْخَـٰشِعَـٰتِ وَٱلْمُتَصَدِّقِينَ وَٱلْمُتَصَدِّقَـٰتِ وَٱلصَّـٰٓئِمِينَ وَٱلصَّـٰٓئِمَـٰتِ وَٱلْحَـٰفِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَٱلْحَـٰفِظَـٰتِ وَٱلذَّ‌ٰكِرِينَ ٱللَّهَ كَثِيرًۭا وَٱلذَّ‌ٰكِرَ‌ٰتِ أَعَدَّ ٱللَّهُ لَهُم مَّغْفِرَةًۭ وَأَجْرًا عَظِيمًۭا

“নিশ্চয় মুসলমান পুরুষ ও মুসলমান নারী, ইমানদার পুরুষ ও ইমানদার নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, সদকা প্রদানকারী পুরুষ ও সদকা প্রদানকারী নারী, রোজা পালনকারী পুরুষ ও রোজা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ ও যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী নারী, আল্লাহর অধিক যিকরকারী পুরুষ ও যিকরকারী নারী, তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার”। [সূরা ৩৩/আহজাব – ৩৫]

এ আয়াতে আমরা দেখতে পাই, আল্লাহর ইবাদাত করার ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ উভয় যেভাবে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও নারী ও পুরুষ উভয়ে একইভাবে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীরা যদি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র না হয়ে কেবল পুরুষদের উপর নির্ভরশীল হতেন, তাহলে আল্লাহ তায়ালা এ আয়াতে “সদকা প্রদানকারী পুরুষ ও সদকা প্রদানকারী নারী” বলে নারী ও পুরুষকে পৃথকভাবে আখ্যায়িত করতেন না।

আমাদের দেশের নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন ও স্বতন্ত্র নয়। ফলে অনেকেই সদকা করতে পারেন না।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

গণতন্ত্র সময়ের একটি চাহিদা

আজ থেকে ৪০০ বছর আগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোনো নির্বাচনের কথা কি আমরা কল্পনা করতে পারি? ধরুন, ১৬১৭ সাল। উসমানী খেলাফতের অধীনে তখন বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূমি। সেই এক-তৃতীয়াংশ ভূমির খেলাফতের দায়িত্ব পালন করছেন সুলতান আহমদ। কেউ যদি তখন বলতো, আমরা সুলতান আহমদের পরিবর্তন চাই এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তাহলে তখন কিভাবে সে নির্বাচনটি হত? তখন তো আর ইন্টারনেট বা টেলিভিশন ছিল না, এমনকি প্লেনও ছিল না। নির্বাচন কমিশনারের নির্বাচনী তফসিলটি বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রত্যেকের কাছে ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করতে করতে কমপক্ষে ৩ বছর সময় লেগে যেতো। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সকল মানুষ যেহেতু খলীফা প্রার্থী হবার অধিকার রাখে, সুতরাং নির্বাচন কমিশনারের কাছে তাঁদের মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে করতে সময় লাগতো আরো ২ বছর। নির্বাচন কমিশনার লক্ষ লক্ষ মনোনয়ন পত্র বাচাই করতে করতে লাগতো আরো ১ বছর। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের এবং আপিল নিষ্পত্তি করতে সময় লাগতো কমপক্ষে আরো ৫ বছর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করার সময় দিতে হতো কমপক্ষে আরো ১ বছর। কারণ প্রার্থীদেরকে বহুদূর থেকে এসে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে হতো। তারপর, প্রা...