সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নারী ও পুরুষের আচরণের ভিন্নতা

নারী ও পুরুষ উভয়ের আচরণের পার্থক্য বোঝার জন্যে উভয়ের ব্রেইন কাঠামো বুঝতে হয়। সাধারণত নারীদের ব্রেইনের ওজন ১২০০ গ্রাম, এবং পুরুষদের ব্রেইনের ওজন ১৩৭০ গ্রাম।

অনেকে কৌতুক করে বলেন, পুরুষদের ব্রেইনের চেয়ে নারীদের ব্রেইন অনেক বেশি আপডেট। তাই পুরুষদের চেয়ে নারীদের ব্রেইন ছোট, কিন্তু কাজ করে বেশি।

মানুষের ব্রেইন নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তাঁরা বলেন, পুরুষের ব্রেইনে অনেকগুলো পার্টিশন আছে, কিন্তু নারীদের ব্রেইনে এত পার্টিশন নেই। ফলে পুরুষদের ব্রেইনের চেয়ে নারীদের ব্রেইন কিছুটা ছোট হওয়াই স্বাভাবিক।

ধরুন, আপনার কাছে কাপড় রাখার একটি বক্স আছে। বক্সের পার্টিশন যত বেশি হবে, কাপড় তত কম রাখা যাবে। কিন্তু বক্সে যদি কোনো পার্টিশন না থাকে, তাহলে অনেক বেশি কাপড় রাখা যাবে। নারীদের ব্রেইনে পার্টিশন যেহেতু খুবই কম, ফলে নারীদের জন্যে ছোট একটা ব্রেইন হলেও চলে। কিন্তু পুরুষদের ব্রেইনে প্রচুর পার্টিশন থাকায় তাদের জন্যে কিছুটা বড় ব্রেইনের প্রয়োজন হয়।

সহজে বললে, ছোট ছোট অসংখ্য কক্ষে বিশিষ্ট একটি ঘরের নমুনা হলো পুরুষদের ব্রেইন। আর, অনেক বড় এক কক্ষ বিশিষ্ট একটি ঘরের নমুনা হলো নারীদের ব্রেইন।

মানুষের ব্রেইনের দুটি অংশ থাকে। ডানপাশ ও বামপাশ। পুরুষদের শুধুমাত্র বামপাশের ব্রেইনটি সচল থাকে। কিন্তু নারীদের ডান ও বাম উভয় পাশের ব্রেইন-ই একইসাথে সচল থাকে। পুরুষদের ব্রেইন সামনে ও পিছনে লম্বালম্বিভাবে কাজ করে। কিন্তু নারীদের ব্রেইন ডানে ও বামে আড়াআড়িভাবে কাজ করে।

চিত্রটি দেখুন

brain--621x414

নারী ও পুরুষের ব্রেইনের কাঠামোগত পার্থক্য থাকার কারণে তাদের আচরণেও অনেক পার্থক্য থাকে। যেমন,

নারীদের ব্রেইন যেহেতু বড় একটি হল রুমের মত, ফলে তারা সবকিছুকে একসাথে দেখতে পারে। অন্যদিকে, পুরুষদের ব্রেইন যেহেতু ছোট ছোট অনেকগুলো কক্ষবিশিষ্ট, ফলে তারা এক কক্ষে প্রবেশ করলে অন্য কক্ষের খবর রাখতে পারে না। এ কারণে, নারীরা অনেকগুলো কাজ একসাথে করতে পারে, কিন্তু পুরুষেরা যে কোনো একটি কাজ ভালোভাবে করতে পারে।

নারীরা যেহেতু সামগ্রিকভাবে ও একসাথে সবকিছু চিন্তা করতে পারে, তাই পুরুষদের আগেই নারীদের চিন্তার পরিপক্বতা লাভ করে। কিন্তু পুরুষেরা যেহেতু কোনো একটি বিষয়কে ভালোভাবে চিন্তা করে, তাই যে কোনো একটি বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে পারে ।

এর একটি উদাহরণ হলো, নারীরা যখন রান্না করে, তখন তারা একসাথে মোবাইলেও কথা বলতে পারে আবার রান্নাও চলতে থাকে। কিন্তু পুরুষেরা যখন রান্না করে, তখন তারা মোবাইলে কথা বলতে গেলে রান্নায় মনোযোগ দিতে পারে না।

ফলে, বিশ্বের সেরা রাঁধুনিদের অধিকাংশই পুরুষ। কেননা, পুরুষেরা যখন রান্না করে, তখন তারা কেবল রান্না নিয়েই ব্যস্ত থাকে, অন্য কোনো কিছুর খবর রাখে না। কিন্তু নারীদের ব্রেইন কাঠামোর কারণেই নারীদেরকে একসাথে অনেকগুলো কাজ করতে হয়।

নারীদের ব্রেইন কিছুটা জটিল অংকের মত কাজ করে, তারা সবকিছুকে একসাথে সমাধান করার চেষ্টা করে। কিন্তু পুরুষদের ব্রেইন অনেকটা সরল অংকের মত কাজ করে, সবকিছুকে ছোট ছোট ব্র্যাকেটের ভিতরে রেখে চিন্তা করে; প্রথম ব্র্যাকের কাজ শেষ হলে দ্বিতীয় ব্র্যাকেটের কাজ শুরু করে।

এ কারণে, নারী ও পুরুষের মাঝে কোনো বিষয়ে দ্বন্দ্ব হলে, পুরুষেরা কেবল নির্দিষ্ট একটি ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, কিন্তু নারীরা আগে ও পরে ঘটে যাওয়া সবগুলো ঘটনাকে সামনে নিয়ে আসে।

নারীদের কেউ কেউ পুরুষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, “আমি সবগুলো কাজ একসাথে করতে পারি, কিন্তু তুমি পুরুষ কেন সবগুলো কাজ একসাথে করতে পারে না?” আবার, পুরুষদের কেউ কেউ নারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, “আমি যা করি তা ভালোভাবে করার চেষ্টা করি, কিন্তু তুমি নারী কেন কোনো কাজই ভালোভাবে করতে পারে না?”

আসলে এভাবে নারী ও পুরুষ কাউকে অভিযোগ দিয়ে কোনো লাভ নেই। ইসলাম একজনকে অপরজনের সহযোগী হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। পুরুষ যে কোনো একটি কাজ খুবই দক্ষতার সাথে এবং ভালোভাবে করবে, অন্যদিকে নারী সবগুলো কাজকে সামগ্রিকভাবে দেখবে, এটাই নারী ও পুরুষের ব্রেইন সিস্টেম।

আল্লাহ তায়ালা নারী ও পুরুষ একের উপর অন্যকে মর্যাদা দিয়েছেন। কিছু কাজ নারীরা ভালো পারে, আবার কিছু কাজ পুরুষেরা ভালো পারে। তাই, নারীদের ক্ষেত্রে একটি কাজ ভালোভাবে করার আশা করা যেমন অনুচিত, তেমনি পুরুষদের ক্ষেত্রে একসাথে অনেক কাজ করার আশা করাও অনুচিত।

নারী ও পুরুষ উভয়ের ব্রেইন কাঠামো ভিন্ন ভিন্ন হওয়ার কারণে তাদের উভয়ের কর্মপদ্ধতিও ভিন্ন ভিন্ন। নারীরা যখন পুরুষদেরকে নিজেদের মত চিন্তা করেন, তখন যেমন সমস্যা সৃষ্টি হয়, আবার পুরুষেরা যখন নারীদেরকে নিজেদের মত চিন্তা করেন তখনও সমস্যা সৃষ্টি হয়। উভয়ে উভয়ের বৈশিষ্ট্য বোঝা উচিত।

সূত্র - ১

সূত্র - ২

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...