সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বিজ্ঞান কি অনেক এগিয়ে গেছে?

কেউ কেউ বলেন – ‘বিজ্ঞান আজ অনেক এগিয়ে গিয়েছে’। আমার মনে হয়, এভাবে না বলে আমাদের বলা উচিত – ‘বিজ্ঞান আজো অনেক পিছনে পড়ে রয়েছে’।

কেন এ কথা বলেছি? একটা উদাহরণ দিচ্ছি।

কোর’আনের শুরুতেই বলা হয়েছে – যারা ‘অজানা’ বা ‘গায়েব’কে বিশ্বাস করে, তাঁরা সফল।

কিন্তু, সেকেলে উগ্র-মূর্খ বিজ্ঞানীরা বলতেন, ‘আরে বেটা, বিশ্বজগতে অজানা-অদৃশ্য বলে কিছুই নেই; সব-ই তো আমাদের জানা, সবই তো আমাদের দেখা। তোরা কি-সব অদৃশ্য বেহেস্ত-দোজখ-জিন-ফেরেশতার কথা বলছিস? এসব এখন রাখ, এখন বিজ্ঞানের যুগ। আমরা তোদের ঐ-সব অদৃশ্য জগত বিশ্বাস করি না’।

এরপর, ঐসব মূর্খ বিজ্ঞানীদের পাল্লায় পড়ে আমাদের বাঙালি কবি-সাহিত্যিকরাও তখন লিখতে শুরু করলেন –

“উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরু সব তোমাদের জানা
আমরা শুনেছি সেখানে রয়েছে জিন ,পরী, দেও, দানা।”
---সুফিয়া কামাল, আজিকার শিশু।

কিন্তু, কয়দিন আগে ঘটলো ভিন্ন ঘটনা – এসব মূর্খ-বিজ্ঞানীদের হুঁশ ফিরে আসতে শুরু করলো। তারা তাদের আশেপাশের ঘুমন্ত বিজ্ঞানীদের জাগাতে শুরু করলেন। এবং বললেন – ‘আরে... আরে... শুনছ...? তোমরা তো এ বিশ্ব জগত সম্পর্ক কিছুই জানো না’।

ঘুম থেকে উঠে তখন মূর্খ-বিজ্ঞানীরা বলতে শুরু করলেন – ‘আরে, হয়েছে কি? খুলে বল’।

তখন, নাসা (National Aeronautics and Space Administration) বিজ্ঞানীদের থেকে একটি আওয়াজ আসলো –

‘হে ঘুমন্ত-মূর্খ-বিজ্ঞানীদের দল! মনোযোগ দিয়ে শুন, এ বিশ্বজগত সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই জানি না। আমরা যা কিছু দেখি, যা কিছু জানি, যা কিছু অনুভব করতে পারি, যা কিছু আমাদের বিজ্ঞানাগারে পরীক্ষানিরীক্ষা করতে পারি, এবং যা কিছু আমাদের শক্তিশালী টেলিস্কোপের মাধ্যমে অনুমান করতে পারি, এগুলো সবকিছু মিলিয়ে বিশ্বজগতের ৫% -ও জানা যায় না। বিশ্বজগতের বাকি ৯৫% -এর বেশি কিছু আমাদের ‘অজানা-অদৃশ্য’ বা ‘গায়েব’।

আওয়াজ থামলো না। বিশ্বের সকল বিজ্ঞানীদেরকে উপদেশ দিয়ে নাসা বিজ্ঞানীরা বললেন –

“এগুলো সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না, কিন্তু এগুলোকে বিশ্বাস না করলে আমাদের বিজ্ঞান আর সামনে যেতে পারছে না, আমাদের সূত্র ও হিসাব মিলছে না। তাই তোমরা আজ থেকে এই ‘অদৃশ্য বস্তু’ ও ‘অজানা শক্তি’কে বিশ্বাস করতে হবে।’

উপরের কথাগুলো পড়ে আপনার হয়তো মনে হতে পারে – “ছেলেটা আবোলতাবোল কি-সব লিখছে, আমাদের সময় নষ্ট করছে।”

আসলে দেখুন, আমি কিন্তু নিজ থেকে একটা কথাও লিখছি না। কমেন্টে, NASA সহ বিভিন্ন ওয়েব সাইট ও ইউটিউবের লিঙ্ক দিচ্ছি। আপনারা নিজেরাই পড়তে পারেন এবং দেখে নিতে পারেন।

নাসা আমাদেরকে জানাচ্ছে –

“The standard model of cosmology indicates that the total mass–energy of the universe contains 4.9% ordinary matter, 26.8% dark matter and 68.3% dark energy. Thus, dark matter constitutes 84.5% of total mass, while dark energy plus dark matter constitute 95.1% of total mass–energy content.”

অর্থাৎ, বিশ্বজগতের যত বস্তু ও শক্তিকে আমরা জানতে পারি, তার পরিমাণ হলো আনুমানিক ৪.৯%। এর বাইরে, বিশ্বজগতের ৯৫.১% সম্পর্কে আমরা কোনো কিছুই জানতে পারছি না। আমাদের বিশ্বজগতের এই অজানা-অদৃশ্য বস্তুগুলোকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন – ‘ডার্ক ম্যাটার’ বা ‘গুপ্ত পদার্থ’। এবং এই অজানা শক্তিকে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন – ‘ডার্ক এনার্জি বা ‘অদৃশ্য শক্তি’।

তাহলে, ‘ডার্ক ম্যাটার’ এবং ‘ডার্ক এনার্জি’ কি?

এই প্রশ্নের উত্তরে, নাসার বিজ্ঞানীরা বড় করে লিখে দিয়েছেন –

‘More is unknown than is known. No one expected this, no one knew how to explain it. But something was causing it. It is a complete mystery. But it is an important mystery.

অর্থাৎ, আমাদের জানার চেয়েও অজানা অনেক বেশি। ‘ডার্ক ম্যাটার’ ও ‘ডার্ক এনার্জি’ কি? পৃথিবীতে কেউ এটা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে পারছে না। কিন্তু কিছু একটা হচ্ছে, আমরা কেউ এ সম্পর্কে কিছুই জানতে পারছি না। এটা সম্পূর্ণ একটা রহস্য। এবং এই রহস্য আমাদের বিশ্বজগতের জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

এখন তাহলে প্রশ্ন হলো, বিজ্ঞানীদেরকে কেন এই ‘অদৃশ্য বস্তু’ এবং ‘অজানা শক্তি’কে বিশ্বাস করতে হবে? বিশ্বাস না করলে কি হবে?

এ প্রশ্ন আমাদের দেশীয়-মূর্খ বিজ্ঞানীরা হয়তো করতেই পারেন। তাই দু’একটি কারণ উল্লেখ করছি।

১ – অদৃশ্য বস্তুগুলোকে বিশ্বাস করার কারণ।

এই যে আপনি এই লেখাটা পড়ছেন, এটা একটা তরঙ্গের মাধ্যমে গিয়ে আপনার কাছে পোঁছে। বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, এই তরঙ্গকে এক ধরণের অদৃশ্য বস্তু প্রভাবিত করছে। এই বস্তুগুলো একটি পরমাণুর চেয়েও ছোট। এত ছোট যে, কোনো পরীক্ষাগারেও দেখা সম্ভব না। এদের পরিমাণ হলো বিশ্বজগতের ২৭%।

অর্থাৎ, সগর-নদী, পাহাড়-পর্বত, গাছ-পালা, পৃথিবী, গ্রহ-তারা, নক্ষত্র সহ বিশ্বের যা কিছু আমরা দেখতে পারি বা অনুমান করতে পারি তার পরিমাণ বিশ্বজগতের মোট বস্তুর ৫% এর চেয়েও কম। কিন্তু আমাদের আশেপাশে বিশ্বজগতে অদৃশ্য বস্তুর পরিমাণ ২৭%, যা কোনোভাবেই দেখা সম্ভব হবে না। কারণ, এ বস্তুগুলোর এক্স-রে ধরা পড়ে না। তাই, বিজ্ঞানকে এগিয়ে যেতে হলে এগুলোকে বিশ্বাস করা ছাড়া উপায় নাই।

২ – অজানা শক্তিকে বিশ্বাস করার কারণ।

ঘটনার শুরু ১৬৮৭ সালে। আপনারা জানেন, নিউটন নামের এক ভদ্রলোক ছিলেন। বিজ্ঞানী। তো, হঠাৎ গাছ থেকে আপেল পড়া দেখে তিনি একটা সূত্র আবিষ্কার করে ফেললেন। যার নাম দিলেন – ‘মাধ্যাকর্ষণ শক্তি’। এ সূত্র দিয়ে তিনি বলতে চাইলেন যে, এ মহাবিশ্বে যা কিছু আছে, সবাই একে অপরকে আকর্ষণ করছে। বস্তুসমূহ একে অপরের যত কাছে আসে, আকর্ষণ তত বাড়ে; যত দূরে যায়, আকর্ষণ তত কমে।

নিউটন যখন এই সূত্র দিয়েছিলেন, তখন পৃথিবীতে বিশাল হইচই পড়ে গেল। সব বিজ্ঞানী ‘পাইলামরে... পাইলামরে...’ বলে চিৎকার শুরু করলেন। কিন্তু, গত ক’বছর আগে, ১৯৯৮ সালে বিজ্ঞানী আবার বলতে লাগলেন, “আরে... সব শেষ হয়ে গেল রে... নিউটন তো আমাদেরকে ভুয়া সূত্র দিলো রে...।”

ঘটনাটা এবার বিস্তারিত বলছি।

১৯৯০ সালে বিজ্ঞানীরা জানলেন যে, আমাদের বিশ্বজগত দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। তো, নিউটন ও আইনস্টাইনের সূত্র মতে, কোনো এক নক্ষত্র থেকে অন্য একটি নক্ষত্র দূরে সরে গেলে তাদের মাঝে আকর্ষণ কমে যাওয়ার কথা। এবং এভাবে আস্তে আস্তে উভয়ের আকর্ষণ শেষ হয়ে গিয়ে গতি কমে যাওয়ার কথা।

কিন্তু সম্প্রতি নাসা বিজ্ঞানীরা দেখলেন যে, দুটি নক্ষত্র যত দূরে যাচ্ছে, তত তাদের গতি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সুতরাং, নিউটনের ৩০০ বছরের সেই পুরানো সূত্র এখন ভুল প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে।

সুতরাং, বিজ্ঞানীদেরকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হলো যে, আসলে অভিকর্ষ শক্তির বাইরে অনেক অজানা-অদৃশ্য শক্তি আছে। বিশ্বজগতের মোট শক্তির ৬৮% হলো এই অজানা-অদৃশ্য শক্তি। এই অদৃশ্য শক্তিকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। বিজ্ঞানকে সামনে নিয়ে যেতে হলে আমাদেরকে এই অদৃশ্য শক্তিকে বিশ্বাস করতেই হবে।

কথা হলো, এই অদৃশ্য শক্তি ও অদৃশ্য বস্তুগুলোকে বিজ্ঞানীরা তত্ত্ব দিয়ে প্রমাণ করতে হয়তো আরো একশত বছর চলে যেতে পারে। এবং হয়তো কখনোই এগুলোকে জানা সম্ভব হবে না।

কিন্তু,

আমরা তো অনেক আগ থেকেই জানি, আমাদেরকে অজানা ও অদৃশ্যে বিশ্বাস করতে হবে। আমরা তো জানি, আমারা যদি অজানা ও অদৃশ্যে বিশ্বাস না করি, তাহলে আমাদের জীবনের অনেক সূত্র-ই মিলবে না। এ কথা বিজ্ঞান আজ বুঝলেও আমরা কিন্তু তো অনেক আগ থেকেই তা জানতাম।

কোর’আনের শুরুতেই বলা হয়েছে – ‘যারা ‘অজানা’ বা ‘গায়েব’কে বিশ্বাস করে, তাঁরা সফল’।

ٱلَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِٱلْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ ٱلصَّلَوٰةَ وَمِمَّا رَزَقْنَـٰهُمْ يُنفِقُونَ وَٱلَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَآ أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَبِٱلْءَاخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ أُو۟لَـٰٓئِكَ عَلَىٰ هُدًۭى مِّن رَّبِّهِمْ ۖ وَأُو۟لَـٰٓئِكَ هُمُ ٱلْمُفْلِحُونَ

“যারা অজানা-অদৃশ্য বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে, সালাত কায়েম করে, আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে, এবং তোমার ও তোমার পূর্বে যে-সব কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিশ্বাস করে, আখিরাতে নিশ্চিত বিশ্বাস করে, তারা নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত, এবং তারাই যথার্থ সফল।” [সূরা ২/বাকারা – ৩ থেকে ৫]

সুতরাং,

‘বিজ্ঞান অনেক এগিয়ে গিয়েছে’ –এ কথা না বলে আমাদের বলা উচিত – ‘বিজ্ঞান অনেক অনেক পিছনে পড়ে রয়েছে।’

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

What is The Ruling Regarding a Women Going to Hajj Without a Mahram?

Answered by Dr. Yusuf al-Qaradawi | Translated by Sister Marwa The original rule stipulated in shari’a that a woman is not to travel alone.  Rather, she has to be accompanied by her husband or any other mahram of hers.  This rule is supported by narrations of Bukhari and others that Ibn-Abbas (ra) said, that the Prophet (pbuh) said, “A woman should not travel except with a mahram, and no man should visit her except in the presence of a mahram.” Abu-Hurairah related the following on behalf of the Prophet (pbuh), “It is not permissible for a woman who believes in Allah and the Last Day to travel for one day and night except with a mahram.” Abu-Sa’id reported that the Prophet (pbuh) said, “A woman should not travel for two days except she is accompanied by her husband or a mahram.”