সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নিউটনের মত হতে চাইলে...

আপনার বয়স যদি ১৯ –এর কম হয়, তাহলে আপনার সম্ভাবনা আছে; আপনি নিউটনের মত জ্ঞানী হতে পারবেন।

না, মজা করছি না। সত্যি বলছি।

নিউটনের বয়স যখন ১৯ ছিল, তখন তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন – জীবনে আর কখনো কোনো পাপকাজ করবেন না। কেবল ‘ইনশাল্লাহ’ বলেই তিনি থেমে যাননি। তাঁর জ্ঞান হবার পর থেকে ১৯ বছরের আগ পর্যন্ত তাঁর দ্বারা যতগুলো অন্যায় ও পাপকাজ হয়েছে, তিনি সবগুলোর একটা তালিকা তৈরি করলেন। এরপর, ঐ তালিকাটি ধরে তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন যে, জীবনে আর কখনো এই পাপ কাজগুলো তিনি দ্বিতীয়বার করবেন না।


এ কারণেই, গান-বাজনা, পার্টি করা, আড্ডা মারা এসব তিনি পছন্দ করতেন না। খারাপ বন্ধুদের সাথে কোথাও ঘুরতে যেতেন না, এবং সবসময় খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকতেন।

নিউটন মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন, জ্ঞান ও কল্যাণের পথে পাপকাজ বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

যেমন, কোর’আনেও আছে –

وَيْلٌ لِّكُلِّ أَفَّاكٍ أَثِيمٍ
“প্রত্যেক মিথ্যাবাদী পাপাচারী ব্যক্তির জন্যে দুর্ভোগ রয়েছে”। [সূরা ৪৫/জাছিয়া - ৭]
-
-
ইমাম শাফেয়ী একবার তাঁর উস্তাদকে বললেন –
আমার জ্ঞান খুবই কম, কিছু পড়লে মুখস্থ রাখতে পারি না। এখন আমি কি করতে পারি?

তাঁর উস্তাদ তাঁকে বললেন –
জ্ঞান হচ্ছে আলো। আর, আলোকিত মানুষ হবার নাম জ্ঞানী। আল্লাহ তায়ালা কোনো পাপীকে তাঁর আলোর দিয়ে আলোকিত করেন না।

شَكَوْتُ إلَى وَكِيعٍ سُوءَ حِفْظِي, فَأرْشَدَنِي إلَى تَرْكِ المعَاصي.
وَأخْبَرَنِي بأَنَّ العِلْمَ نُورٌ, ونورُ الله لا يهدى لعاصي

উস্তাদের এই কথাটা ইমাম শাফেয়ী দৃঢ়ভাবে পালন করলেন। তারপর তো তিনি হয়ে গেলেন জগত বিখ্যাত জ্ঞানী।
-
আমার বয়স যখন ১৯ ছিল, তখন বন্ধুদের বলতে শুনেছি –
“আরে... এ বয়সে দু’একটা পাপ করলে এমন কি আর ক্ষতি! এনজয় করার বয়স তো এটাই!”

কিছু বড় মানুষকেও বলতে শুনেছি –
“আরে... ছোটরা তো ভুল করেই, এ আর এমন কি!”

কিন্তু, দেখুন, ইমাম শাফেয়ী ও নিউটন ১৯ বছর বয়সেই সংকল্প করেছিলেন, তাঁরা জীবনে আর কখনো পাপ করবেন না। তাঁরা তাদের বন্ধুদের কাছে 'এনজয় গুরু' হতে চাননি, তাঁরা চেয়েছিলেন বড় জ্ঞানী ও ধার্মিক হতে।
-
-
দুঃখ আমার!
বয়স ১৯-এ পা দিয়ে চলে গেছে। তবুও, আল্লাহ কাছে প্রার্থনা করি, যেন মিথ্যা, অহংকার ও সকল পাপকাজ থেকে মুক্ত হয়ে নিউটনের চেয়ে বেশি জ্ঞানী ও ধার্মিক হতে পারি।

কিন্তু, যারা এখনো ছোট, বিশেষকরে, তাদের বলছি-

তোমরা চাইলে ইমাম শাফেয়ী ও নিউটনের চেয়ে অনেক বড় জ্ঞানী ও ধার্মিক হতে পারবে। তোমাদের মাঝে অনেক সম্ভাবনা আছে। কিন্তু, এই সম্ভাবনাকে পাপ কাজের দ্বারা নষ্ট করো না, প্লিজ...।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...

হাতমোজা সমাচার

আমার আপু ইনবক্সে আমাকে একটা লেখা পাঠিয়েছেন। হাতমোজা নিয়ে অন্য একজনের লেখা । লেখার নিচে মন্তব্যগুলো পড়ে আমার মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছে। ১। মুসলিমদের মহাসম্মেলনে অর্থাৎ হজ্জের সময়ে লাখো লাখো পুরুষের সামনে নারীরা হাতমোজা ও নিকাব পরেন না কেন? ২। নারীরা হাতমোজা ও নিকাব পরে যদি একেবারে ১০০% ঢেকে ফেলেন, তাহলে সূরা নূরের ৩০ নং আয়াতে পুরুষদেরকে দৃষ্টি নত করতে বলা হয়েছে কেন? ৩। সূরা নূরের ৩১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “নারীদের যা প্রকাশ্য থাকার তা ব্যতীত” তাদের বক্ষদেশ আভরণ করার জন্যে। কিন্তু হাতমোজা দিয়ে ১০০% ঢেকে ফেললে নারীদের আর প্রকাশ্য থাকে কি? ৪। রাসূল (স) সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বলেছেন, “সহজ কর, কঠিন করো না”। কোনো নারী যদি হাতমোজা না পরতে চান, তাহলে তার জন্যে কঠিন কঠিন নিময় করার জন্যে কি রাসূল (স) বলেছেন? ৫। ঈমান ও তাকওয়া কি মানুষের হৃদয়ে থাকে না হাতে-পায়ে থাকে?