সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পড়, তোমার মনের কিতাব!

লোকে বলে, মানুষের মন বুঝা সবচেয়ে কঠিন। আসলেই কঠিন।

অন্যের মন বুঝা তো দূরে থাক, নিজের মন বুঝাই কষ্টকর। যে নিজের মনকে নিজে বুঝতে পারে, পৃথিবীতে সেই সবচেয়ে সুখী।

নিজের মন নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসার নাম-ই শান্তি। এর অপর নাম সালাম, বা ইসলাম।


যে নিজের মনকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারে, কিংবা, যে নিজের মনকে নিজেই বন্ধী করতে পারে, অথবা, যে নিজের কাছে নিজের মনকে সমর্পণ করতে পারে, সে জান্নাতি সুখ অনুভব করে।

নিজের মনকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসার সর্বোত্তম ও সহজ দিকনির্দেশনা প্রদান করে যে গ্রন্থটি, তার নাম আল কোর’আন।

আল কোর’আনের প্রথম শব্দ পড়। অর্থাৎ, রবের নামে তোমার মনকে পড়।

সুখ, দুঃখ, বা রাগের সময় মনকে শান্ত বা নিয়ন্ত্রণ রাখার সবচেয়ে কার্যকারী কৌশল শেখায় আল কোর’আন।

শান্ত মন-ই কেবল জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে। অশান্ত মনের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণা।

নিজেই নিজের মনকে জানা, বোঝা ও নিয়ন্ত্রণ করা পৃথিবীতে অনেক কষ্টকর হলেও আখিরাতে বিনাকষ্টে সবাই নিজের মনকে নিজেই দেখতে পাবে।

কারণ, মৃত্যুর পরে সবার চোখের সীমাবদ্ধতা দূর হয়ে যায়। তাই সবাই তাদের নিজেদেরকে খুব ভালোভাবে দেখতে পারে।

পৃথিবীর অশান্ত মনগুলো আখিরাতে নিজেদের বিশ্রী মনগুলো দেখে খুবই লজ্জিত হবে। কিন্তু, শান্ত মনেরা অফুরন্ত সুখ অনুভব করবে।

তখন তিনি বলবেন –

ٱقْرَأْ كِتَـٰبَكَ كَفَىٰ بِنَفْسِكَ ٱلْيَوْمَ عَلَيْكَ حَسِيبًۭا

“তুমি নিজেই পাঠ কর তোমার কিতাব। আজ তোমার হিসাব গ্রহণের জন্যে তুমি নিজেই যথেষ্ট”। [সূরা ১৭/বনী ইসরাঈল – ১৪]

রবের নামে, পৃথিবীতে থাকাকালীন সময়ে, আমাদের মনের কিতাব পড়ে, যদি এই অশান্ত মনকে শান্ত করতে পারি, তাহলে সেদিন অশান্ত মনের প্রকৃত বিশ্রী চেহারা দেখে আর আমাদেরকে খুব লজ্জা পেতে হবে না।

পড়, তোমার মনের কিতাব!

সূত্র: আল কোর’আন – [৯৫:১], [৫০:২২], [৯০:২৭], [১৭:১৪]

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

সুফীদের জাহের ও বাতেনের সম্পর্ক

সুফিজমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ হলো জাহের ও বাতেন। জাহের মানে প্রকাশ্য, আর বাতেন মানে গোপন। সুফিদের মতে, প্রতিটি জিনিসের একটি অংশ থাকে প্রকাশ্য, এবং একটি অংশ থাকে অপ্রকাশ্য বা গোপন। যেমন, একটি গাছে প্রকাশ্য অংশ হলো গাছের কাণ্ড, পাতা, ফুল ও ফল; আর গাছের অপ্রকাশ্য অংশ হলো শিকড়। সূফীদের কাজ বাতেন বা গাছের শিকড় নিয়ে কাজ করা, আর ফকিরদের কাজ গাছের পাতা-ফুল-ফল ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। গাছের মতো মানুষের প্রতিটি কাজেরও দুটি অংশ রয়েছে। জাহের ও বাতেন। যেমন, কেউ নামাজ পড়ার সময় রুকু-সিজদা করাটা হলো জাহেরি কাজ; আর নামাজে খুশু-খুজু বা মনোযোগ ধরে রাখাটা হলো বাতেনি কাজ। নামাজে রুকু সেজদা ঠিক হয়েছে কি হয়নি, তা শিক্ষা দেন ফকিহগণ; আর নামাজে কিভাবে মনোযোগ ধরে রাখা যায়, তা শিক্ষা দেন সুফিগণ। নামাজে কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই একজন মুফতি বলে দিবেন যে, নামাজ ঠিক হয়েছে। কিন্তু, একজন সুফি সূরা মাউনের ৪ ও ৫ নং আয়াত অনুযায়ী বলবেন যে, কেবল রুকু-সেজদা ঠিক মতো হলেই নামাজ হয়ে যায় না, নামাজে আল্লাহর প্রতি মনোযোগও থাকতে হবে। একইভাবে, ধরুন, আপনাকে আপনার প্রিয়া রাগ করে বললেন যে, "আমি আর তোমার কথা শুনতে চাই না...

হাতমোজা সমাচার

আমার আপু ইনবক্সে আমাকে একটা লেখা পাঠিয়েছেন। হাতমোজা নিয়ে অন্য একজনের লেখা । লেখার নিচে মন্তব্যগুলো পড়ে আমার মনে কিছু প্রশ্ন জেগেছে। ১। মুসলিমদের মহাসম্মেলনে অর্থাৎ হজ্জের সময়ে লাখো লাখো পুরুষের সামনে নারীরা হাতমোজা ও নিকাব পরেন না কেন? ২। নারীরা হাতমোজা ও নিকাব পরে যদি একেবারে ১০০% ঢেকে ফেলেন, তাহলে সূরা নূরের ৩০ নং আয়াতে পুরুষদেরকে দৃষ্টি নত করতে বলা হয়েছে কেন? ৩। সূরা নূরের ৩১ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “নারীদের যা প্রকাশ্য থাকার তা ব্যতীত” তাদের বক্ষদেশ আভরণ করার জন্যে। কিন্তু হাতমোজা দিয়ে ১০০% ঢেকে ফেললে নারীদের আর প্রকাশ্য থাকে কি? ৪। রাসূল (স) সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বলেছেন, “সহজ কর, কঠিন করো না”। কোনো নারী যদি হাতমোজা না পরতে চান, তাহলে তার জন্যে কঠিন কঠিন নিময় করার জন্যে কি রাসূল (স) বলেছেন? ৫। ঈমান ও তাকওয়া কি মানুষের হৃদয়ে থাকে না হাতে-পায়ে থাকে?