সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নারীদেরকে ঈদগাহে নিয়ে আসা সুন্নাত

নারীদেরকে ঈদগাহে নিয়ে যাবার জন্যে রাসূল (স) নির্দেশ দিয়েছেন। যদি কোনো নারী অসুস্থ হয়, তবুও তাঁকে ঈদগাহে যেতে বলা হয়েছে। যদি কোনো নারীর পরার মতো ওড়না বা জামা না থাকে, তাহলে অন্য বান্ধবী থেকে একটা ওড়না নিয়ে হলেও ঈদের মাঠে নারীদেরকে উপস্থিত থাকার জন্যে রাসূল (স) আদেশ করেছেন।

নারীরা ঈদের মাঠে উপস্থিত হওয়া সম্পর্কে বুখারী ও মুসলিম গ্রন্থে কমপক্ষে ২০টি সহীহ হাদিস রয়েছে। অথচ, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সহীহ সুন্নাহকে অনেক মুসলিম অবহেলা করেন। এ সুন্নাহ নিয়ে আমাদের আলেমরাও তেমন কোনো কথা বলেন না।

রাসূল (স) বলেন -

حدثنا محمد، حدثنا عمر بن حفص، قال حدثنا أبي، عن عاصم، عن حفصة، عن أم عطية، قالت كنا نؤمر أن نخرج يوم العيد، حتى نخرج البكر من خدرها، حتى نخرج الحيض فيكن خلف الناس، فيكبرن بتكبيرهم، ويدعون بدعائهم يرجون بركة ذلك اليوم وطهرته‏.‏

উম্মু ‘আতিয়্যাহ (রা:) থেকে বর্ণিত,

"ঈদের দিন আমাদের বের হবার আদেশ দেয়া হত। এমন কি আমরা কুমারী মেয়েদেরকেও অন্দর মহল হতে বের করতাম এবং ঋতুবতী মেয়েদেরকেও। তারা পুরুষদের পিছনে থাকতো এবং তাদের তাকবীরের সাথে তাকবীর বলতো এবং তাদের দু’আর সাথে দু’আ করত- সে দিনের বরকত এবং পবিত্রতা তারা আশা করত।"

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৯৭১

حدثنا أبو معمر، قال حدثنا عبد الوارث، قال حدثنا أيوب، عن حفصة بنت سيرين، قالت كنا نمنع جوارينا أن يخرجن يوم العيد، فجاءت امرأة فنزلت قصر بني خلف فأتيتها فحدثت أن زوج أختها غزا مع النبي صلى الله عليه وسلم ثنتى عشرة غزوة فكانت أختها معه في ست غزوات‏.‏ فقالت فكنا نقوم على المرضى ونداوي الكلمى، فقالت يا رسول الله، على إحدانا بأس إذا لم يكن لها جلباب أن لا تخرج فقال ‏"‏ لتلبسها صاحبتها من جلبابها فليشهدن الخير ودعوة المؤمنين ‏"‏‏.‏ قالت حفصة فلما قدمت أم عطية أتيتها، فسألتها أسمعت في كذا وكذا قالت نعم، بأبي ـ وقلما ذكرت النبي صلى الله عليه وسلم إلا قالت بأبي ـ قال ‏"‏ ليخرج العواتق ذوات الخدور ـ أو قال العواتق وذوات الخدور شك أيوب ـ والحيض، ويعتزل الحيض المصلى، وليشهدن الخير ودعوة المؤمنين ‏"‏‏.‏ قالت فقلت لها آلحيض قالت نعم، أليس الحائض تشهد عرفات وتشهد كذا وتشهد كذا

হাফসা বিন্‌ত সীরীন (রহঃ) থেকে বর্ণিত,

তিনি বলেন, আমরা ‘ঈদের দিন আমাদের যুবতীদের বের হতে নিষেধ করতাম। একদা জনৈকা মহিলা এলেন এবং বনু খালাফের প্রাসাদে অবস্থান করলেন। আমি তাঁর নিকট গেলে তিনি বললেন, তাঁর ভগ্নীপতি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সাথে বারটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, এর মধ্যে ছয়টি যুদ্ধে স্বয়ং তাঁর বোনও স্বামীর সাথে অংশগ্রহণ করেছেন, (মহিলা বলেন) আমার বোন বলেছেন, আমরা রুগ্নদের সেবা করতাম, আহতদের শুশ্রূষা করতাম। একবার তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, হে আল্লাহর রসূল ! যদি আমাদের কারো ওড়না না থাকে, তখন কি সে বের হবে না? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: এ অবস্থায় তার বান্ধবী যেন তাকে নিজ ওড়না পরিধান করতে দেয় এবং এভাবে মহিলাগণ যেন কল্যাণকর কাজে ও মু‘মিনদের দু’আয় অংশগ্রহণ করেন। হাফসা (রহঃ) বলেন, যখন উম্মু আতিয়্যাহ (রা:) এলেন, তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম যে, আপনি কি এসব ব্যাপারে কিছু শুনেছেন? তিনি বললেন, হাঁ, হাফসা (রহঃ) বলেন, আমরা পিতা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর জন্য উৎসর্গিত হোক এবং তিনি যখনই আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নাম উল্লেখ করতেন, তখনই একথা বলতেন। তাঁবুতে অবস্থানকারিণী যুবতীরা এবং ঋতুবতী নারীরা যেন বের হন। তবে ঋতুবতী নারীরা যেন সালাতের স্থান হতে সরে থাকেন। তারা সকলেই যেন কল্যাণকর কাজে ও মু’মিনদের দু’আয় অংশগ্রহণ করেন। হাফসা (রহঃ) বলেন, আমি তাকে বললাম, ঋতুবতী নারীরাও? তিনি বললেন, হাঁ, ঋতুবতী নারী কি আরাফাত এবং অন্যান্য স্থানে উপস্থিত হয় না?
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৯৮০

উপরোক্ত হাদিস দুটি ইমাম বুখারী "ঈদ" অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়াও বুখারী শরীফে আরো অন্তত ১০টি হাদিস রয়েছে, যা দ্বারা প্রমাণিত হয়, রাসূল নারীদেরকে ঈদের মাঠে উপস্থিত হতে নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি পরার মতো কোনো কাপড় না থাকলেও, অন্যের থেকে ধার নিয়ে ঈদের মাঠে উপস্থিত হতে বলেছেন।

আসুন, নারীদেরকে ঈদের মাঠে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করে একটি হারানো সুন্নাতকে পুনর্জীবিত করুন।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...