সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

"প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ" বইটির পক্ষে বিপক্ষে

"প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ টাইপের বই কি সবার পড়া উচিৎ?" শিরোনামে ইজহারুল ইসলাম ভাইয়া একটা লিখা লিখেছেন। এখানে তিনি এ ধরণের বই সাধারণ মানুষকে না পড়তে বলেছেন।

আমার যতটুকু ধারণা, আরিফ আজাদ ভাই কোনো আলেম বা স্কলারের জন্যে এসব বই লিখেন না। তিনি এসব বই লিখেন জাফর ইকবাল ও হুমায়ূন আহমেদের পাঠকদের জন্যে। এ কারণেই, ফেব্রুয়ারির বইমেলায় এক সময় জাফর ইকবাল ও হুমায়ূন আহমেদের বইগুলো হতো বেস্ট সেলার, আর এখন আরিফ আজাদ ভাইয়ের বইগুলো হচ্ছে বেস্ট সেলার।

ইমাম গাজালি বলতেন, ফিকাহ হলো ফরজে কিফায়া। এটা সবার পড়ার দরকার নেই। এর মানে এই নয় যে, ফিকাহ পড়া খারাপ। আরিফ ভাইয়ের "প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ" আলেম ও স্কলারদের পড়ার দরকার নাই, এর মানে এই নয় যে, "প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ" বইটা অপ্রয়োজনীয়।

"প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ"-এর মতো বইগুলো যদি বাজারে না থাকতো, তাহলে জাফর ইকবাল ও হুমায়ূন আহমেদের প্রেমের বইগুলো-ই বেস্ট সেলার হতো। এখন আপনার সিদ্ধান্ত, আপনি কাকে বই মেলায় বেস্ট সেলার হিসাবে দেখতে চান?

এবার ইজহারুল ইসলাম ভাইয়ের লেখাটার ভিতরে প্রবেশ করি। তিনি লিখেছেন -

//১। হযরত মাওলানা আব্দুল মালিক সাহেব দা:বা: এর একটি আলোচনা থেকে শিক্ষাটা আমি নিয়েছি। এবং ব্যক্তিগতভাবে আমল করার চেষ্টাও করছি। হুজুরের বক্তব্যের সারাংশ ছিল, সাধারণ মানুষের সামনে ইসলাম বিরোধী যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করে খণ্ডন করার প্রচেষ্টা মূলত: কারও হাত-পা ভেঙে জোড়া লাগানোর মত। এক্ষেত্রে সমূহ সম্ভাবনা আছে যে, তার হাত-পা ভাঙবে ঠিকই, কিন্তু জোড়া লাগবে না। সাধারণ মানুষের সামনে ইসলাম বিরোধী অভিযোগ উপস্থাপন করলে কয়েকটি সম্ভাবনা রয়েছে।
ক। লোকটি অভিযোগটি সম্পর্কে আগে জানত না; নতুনভাবে জানল।
খ। অভিযোগটি তার অন্তরে গেঁথে গেল, কিন্তু উত্তরটি সে হ্রদয়ঙ্গম করতে পারল না। অথবা উত্তরদাতার অযোগ্যতার কারণে সঠিক উত্তরটি তুলে ধরতে পারল না।
গ। অভিযোগ ও উত্তর দু'টিই সে হ্রদয়ঙ্গম করেছে এবং এসব বিষয়ে সে অন্যের সাথে বিতর্ক শুরু করেছে। সাধারণ মানুষ হওয়ার কারণে সে বিতর্কে হেরে গেল অথবা বিষয়টি ভুলভাবে উপস্থাপন করল।
উপরের সবগুলি বিষয় সাধারণ মানুষের জন্য ক্ষতিকর। অনেক সময় তার ইমান চলে যাওয়ার আশংকা থাকে।//

আমার কথা -

একই যুক্তি মাদ্রাসার ফিকাহের বইগুলোর ক্ষেত্রেও দেয়া যায়। ফিকাহের বইগুলোতে প্রথমে দেখানো হয়, কোর'আনের এক আয়াতের সাথে অন্য আয়াতের বৈপরীত্য আছে, কোর'আনের সাথে হাদিসের ভিন্নতা আছে, ইত্যাদি। এসব দেখানোর পরে বলা হয়, আসলে কিন্তু কোর'আন ও হাদিসের মাঝে কোনো বৈপরীত্য নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের বইগুলোতেও একই কাজ করা হয়। প্রথমে চিন্তার বৈপরীত্য দেখানো হয়, এরপর সমাধান দেয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স এবং ডক্টরেট যারা করেন, তাদেরকেও একই কাজ করতে হয়। তারা তাদের থিসিসে প্রথমে সমস্যাগুলো উত্থাপন করেন, পরে তার সমাধান করেন।

অর্থাৎ, মাদ্রাসা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পদ্ধতি-ই হলো, কোনো একটি বিষয়ে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করে তা খণ্ডন করার চেষ্টা করা। সুতরাং ইজহার ভাই যে যুক্তি দিয়েছেন, সেটা খণ্ডানোটাই জ্ঞানের কাজ। এভাবেই জ্ঞান এগিয়ে চলে।

এরপর ইজহার ভাইয়া লিখেছেন -

//২। ব্লগিং, ফেসবুকে লেখালেখি বা ইউটিউবের কল্যাণে আমরা অনেক মেধাবী মুখ দেখছি। সবারই উপকার হচ্ছে। তবে একটা বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। সবাই কিন্তু সব বিষয়ে এক্সপার্ট না। কোন বিষয়ে ভাল করা আর সে বিষয়ে এক্সপার্ট হওয়া কিন্তু এক নয়। আমরা অনেক ক্ষেত্রে দু'টিকে একাকার করে ফেলি। জেনারেল থেকে আসা যেসব ভাইয়েরা দ্বীনি বা দাওয়াতি বিষয়ে কাজ করছেন, তারা কিন্তু দ্বীনি বিষয়ে এক্সপার্ট না। তাদের ভুল করার সম্ভাবনা খুবই বেশি। আর বাস্তবেও তারা অনেক মোটা মোটা বিষয়ে ভুল করে থাকেন ব্যসিক না জানার কারণে। এজন্য নন-এক্সপার্টদের কাছ থেকে দ্বীনি বিষয়ে ইলম নেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা কাম্য।।//

আমার কথা -

ভুল সবাই করে। মানুষ নামের অর্থই ভুলে যাওয়া। মানুষ ভুল থেকেই শিখে। একমাত্র কোর'আন ছাড়া কোনো কিছুই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। সুতরাং ভুল হবার ভয়ে কেউ কোনো বই লিখতে পারবে না? পৃথিবীতে এমন কোনো আলেম বা স্কলার কি আছেন, যার কোনো ভুল নেই?

তারপর তিনি লিখেছেন -

//৩। বেশ কয়েক বছর আগে আমার চোখের সামনে একটা মারাত্মক ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ দিন আমি চিন্তিত ছিলাম। দীর্ঘ সময় নিয়মিত নামাজ রোজা করা একটা ছেলে হঠাৎ নাস্তিক হয়ে যায়। তার নাস্তিকতার কারণ নিয়ে অনেক চিন্তা-ভাবনা করেছি। নীচের বিষয়গুলো যৌক্তিক মনে হয়েছে।
ক। অল্প বয়সে কোরআন, হাদীস, সাইন্স, লজিক সহ নানা বিষয় নিয়ে মাথা ঘামান। অথচ সে মেচিউরড ছিল না। কোন বিষয়ে তার পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান ছিল না। এক্সপার্টিজ তো অনেক পরের বিষয়।
খ। নিজে এক্সপার্ট না হয়ে দাওয়াত শুরু করা। অন্যকে রিফিউট করার চেষ্টা করা।
গ। কোন সময় এক্সপার্টদের স্মরণাপন্ন না হওয়া।
ডাক্তার জাকির নায়েকের লেকচার শুনে অথবা সাজিদ সিরিজের বই পড়ে কেউ যদি এধরণের পরিস্থিতির স্বীকার হোন, তাহলে অবশ্যই তার এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসা উচিত।//

আমার কথা -

আল্লাহ যদি কারো হেদায়েত না চান, তাহলে সে রাসূল (স)-এর চাচা হয়ে রাসূলের সাথে সবসময় থাকলেও হেদায়েত প্রাপ্ত হবেন না। আবদুল্লাহ আল মাসুদ কওমী মাদ্রাসায় পড়েও নাস্তিক হয়ে গিয়েছে। সুতরাং, এক্সপার্টদের স্মরণাপন্ন হলেই কেউ নাস্তিক হবে না, ব্যাপারটা এমন না।

ইজহার ভাইয়া আরো লিখেছেন -

//৪। কোরআন হাদীসের পাশাপাশি এসব বিষয়ের লেখক বা বক্তাদের প্রচুর লজিক ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু দু:খের বিষয় হল, অনেকেই এ বিষয়ে পড়া-শোনা করেন না। তারা তর্কশাস্ত্র, ফিলোসফি, ইলমুল কালাম ইত্যাদির জ্ঞান অর্জন না করে যুক্তি উপস্থাপন করেন। একারণে তাদের অনেক যুক্তি বাস্তবে যুক্তির মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হয় না। এগুলো যে কেউ ইজিলি রিফিউট করতে পারবে। অনেক সময় যুক্তিগুলো হাস্যকর হয়ে যায়। এজন্য প্রত্যেকটা বিষয়ের এক্সপার্টিজ প্রয়োজন।
সর্বশেষ বিষয় হল, ইসলামের সকল বিষয় বিজ্ঞান বা যুক্তির ছাচে ফেলানোর পদ্ধতিটাই গলদ। এই প্রচেষ্টার কোন ভবিষ্যৎ নেই। ইসলাম অবশ্যই বিজ্ঞান ও যুক্তির ঊর্ধ্বে। এই বাস্তবতা থেকে সরে গিয়ে শুধু যুক্তির মাধ্যমে ইসলাম প্রচার কিংবা বিজ্ঞান অনুগামী দাওয়াত আহলে সুন্নতের মানহাজ নয়।//

আমার কথা -

ইমাম আবু হানীফা ইমাম বুখারীর কাছে হাস্যকর ছিলেন। তাই বলে ইমাম আবু হানীফার গুরুত্ব কম নয়। বাঙ্গালিদের চিন্তার যে অবস্থা, সেখানে প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ টাইপের বইগুলোই সবচেয়ে কাজের।

ইজহার ভাইয়া শেষে এসে বলেন -

//আহলে সুন্নত মানকুল (কোরআন-হাদীস) ও মা'কুলের (যুক্তি) সমন্বয়ের কথা বলেন। গাইরে মা'কুলকে (যুক্তির উর্ধ্নে) কোরআন-সুন্নাহর অনুগামী বানাতে বলেন। কিছু বিষয় আছে, এগুলো মানুষের চিন্তাশক্তি ও যুক্তির উর্ধ্নে। এসব বিষয়ে শুধু ইমান আনতে হবে। এগুলো যুক্তিগ্রাহ্য হওয়া জরুরি নয়। এগুলোকে যুক্তির অনুগামী বানাবার চেষ্টা করাটাও ভুল।
ইসলামের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের জবাব দেয়া অবশ্যই দ্বীনের অনেক বড় খিদমত। তবে এসব বিষয়ে শরীয়তের জ্ঞান অনেক জরুরি। শুধুমাত্র শরয়ী সম্পাদনা যথেষ্ট নয়। জেনারেল থেকে আসা ভাইদেরকে আমি আশংকামুক্ত মনে করি না। আর সাধারণ মানুষকে তাদের বই পড়ার উৎসাহ দেই না। কিছু মোটা মোটা ভুল চোখে পড়েছে। এখানে সেগুলো আলোচনা করাটা অপ্রয়োজনীয়।//

আমার কথা -

যুক্তির ঊর্ধ্বে অনেক বিষয় আছে, যেগুলো সম্ভবত আরিফ ভাইয়াও অস্বীকার করেন না। কিন্তু, উত্তম পন্থায় যুক্তি-তর্ক করার জন্যে কোর'আনেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ইজহার ভাইয়ার সর্বশেষ কথা হলো -

//এই টাইপের বইগুলো ওষুধের মত। শুধুমাত্র রোগীরা খাবে। আবার সব রোগী এক ওষুধ খাবে না। ভাল মানুষের খাওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। উপরের লেখা থেকে কোন ইসলাম-বিদ্বেষীর খুশি হওয়ার কিছু নেই।//

আমার কথা -

আসলে আরিফ ভাই যেসব রুগীর জন্যে লিখেন, তাদের সংখ্যা বাংলাদেশে কম নয়। আমরা অনেকেই চিন্তার ক্ষেত্রে রুগী হয়ে আছি।

ইজহার ভাইয়ের শেষ লাইন দিয়ে আমিও শেষ করছি - //কিছু বিষয় ছাড়া আমার এই লেখার সাথে দ্বিমত করার যথেষ্ট সুযোগ আছে।//

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

ওমরের ওয়াজে নারীর বাধা

মানুষের সামনে ওয়াজ করছেন ওমর (রা)। তিনি তখন অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা। বিশাল ক্ষমতাবান। কিন্তু, তাঁর বিরোধিতা করে এক বৃদ্ধ দুর্বল নারী দাঁড়িয়ে গেলেন। দুর্বল নারীটি ওমর (রা)-কে বললেন, "হে ওমর, আল্লাহকে ভয় করুন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসার ২০ নং আয়াতে নারীদের জন্যে দেনমোহর সীমিত করে দেননি, সেখানে আপনি দিচ্ছেন কেন?" ওমর (রা) বললেন, "নারীটি ঠিক বলেছে, ওমর ভুল করেছে।" [ইবনে হযর আল-আসকালানি,ফাতুল-বারী, ৯:১৬৭] ভাগ্য ভালো ঐ দুর্বল নারী সাহাবীটির। তিনি অর্ধেক পৃথিবীর খলিফা ওমর (রা)-কে বাধা দিয়েছিলেন। যদি ঐ নারীটি এমন কোনো হুজুরকে বাধা দিতেন, যার সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ আছে, তাহলে অবস্থাটা কি হতো দেখুন...

What is The Ruling Regarding a Women Going to Hajj Without a Mahram?

Answered by Dr. Yusuf al-Qaradawi | Translated by Sister Marwa The original rule stipulated in shari’a that a woman is not to travel alone.  Rather, she has to be accompanied by her husband or any other mahram of hers.  This rule is supported by narrations of Bukhari and others that Ibn-Abbas (ra) said, that the Prophet (pbuh) said, “A woman should not travel except with a mahram, and no man should visit her except in the presence of a mahram.” Abu-Hurairah related the following on behalf of the Prophet (pbuh), “It is not permissible for a woman who believes in Allah and the Last Day to travel for one day and night except with a mahram.” Abu-Sa’id reported that the Prophet (pbuh) said, “A woman should not travel for two days except she is accompanied by her husband or a mahram.”