সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আল্লাহ কিভাবে নবী-রাসূলের সাথে কথা বলেন?

আল্লাহ তায়ালা কিভাবে নবী রসূলদের সাথে কথা বলেন? তিনি কি মানুষের মতো কথা বলেন? মানুষের তৈরি অক্ষর ও শব্দের সাহায্যে কথা বলেন? তিনি কি মানুষের আবিষ্কৃত ভাষার মুখাপেক্ষী? আল্লাহর ভাষা কি আরবি?

আল্লাহ তায়ালা মানুষের মতো কথা বলেন না। মানুষ সাধারণত তিনটি স্টাইলে মনের ভাব প্রকাশ করে। ১) কণ্ঠের মাধ্যমে আওয়াজ করে। ২) অক্ষরের মাধ্যমে লিখে লিখে। এবং ৩) শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে, বা ইশারা-ইংগিতে।

উপরোক্ত তিনটি উপায়ে আল্লাহ তায়ালা কথা বলেন না। প্রথম কারণ, আল্লাহ অপরিবর্তনশীল, এবং তাঁর ভাষাও অপরিবর্তনশীল; কিন্তু মানুষের ভাষা সর্বদা পরিবর্তনশীল, এর শুরু ও শেষ আছে। যা কিছু পরিবর্তনশীল, তা আল্লাহর ভাষা হতে পারে না।


দ্বিতীয় কারণ, ভাষা মানুষের সৃষ্টি। অক্ষর, শব্দ, উচ্চারণ সব মানুষের তৈরি। মানুষের তৈরি ভাষা ও শব্দের প্রতি আল্লাহ তায়ালা মুখাপেক্ষী নন। তাই আল্লাহ তায়ালা মানুষের পদ্ধতিতে কথা বলেননা।

অর্থাৎ, নবী ও রাসূলদের সাথে আল্লাহ তায়ালা কোনো ভাষা, অক্ষর, শব্দ বা আওয়াজ ছাড়াই কথা বলেন। যেমন, কোর’আন আল্লাহর বাণী। কিন্তু, কোরআনের যে লিখিত রূপ আমরা দেখি, এবং যে তেলোয়াত আমরা শুনি, তা মানুষের সৃষ্টি।

ইমাম আবু হানিফা বলেন –

واالقرآن كَلَام الله تَعَالَى فِي الْمَصَاحِف مَكْتُوب وَفِي الْقُلُوب مَحْفُوظ وعَلى الألسن مقروء وعَلى النَّبِي عَلَيْهِ الصَّلَاة وَالسَّلَام منزل ولفظنا بِالْقُرْآنِ مَخْلُوق وكتابتنا لَهُ مخلوقة وقراءتنا لَهُ مخلوقة وَالْقُرْآن غير مَخْلُوق

“কোর’আন আল্লাহ তায়ালার বাণী, মুসহাফগুলোর মধ্যে লিপিবদ্ধ, হৃদয়গুলোর মাঝে সংরক্ষিত, জিহ্বাসমূহের দ্বারা পঠিত, এবং রাসূলুল্লাহ (স)-এর উপর অবতীর্ণ। কুর’আনের জন্যে উচ্চারিত শব্দগুলো সৃষ্ট, কুর’আনের জন্যে আমাদের লিখিত বইটি সৃষ্ট, আমাদের তেলোয়াত সৃষ্ট, কিন্তু কুর’আন সৃষ্ট নয়।” [ফিকহুল আকবর]

ইমাম গাজালী বলেন –

أنه سبحانه وتعالى متكلم بكلام وهو وصف قائم بذاته ليس بصوت ولا حرف بل لا يشبه كلامه كلام غيره كما لا يشبه وجوده وجود غيره والكلام بالحقيقة كلام النفس [إحياء علوم الدين 1/ 109]

“আল্লাহ তায়ালা কথা বলেন, এবং তাঁর কথা তাঁর সত্তার সাথে সম্পর্কযুক্ত। (অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালার কথা তাঁর মতোই অপরিবর্তনশীল)। আল্লাহর কথার কোনো আওয়াজ নেই, কোনো অক্ষরও নেই। আল্লাহর কথার সাথে অন্য কারো কথার মিল নেই; যেমনি তাঁর সত্তার সাথে অন্য কোনো সত্তার মিল নেই। আসলে মনের কথাই হলো আসল কথা।” [এহইয়াউ উলুমুদ্দিন, ১ম খণ্ড, ২২৫]

ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম গাজালীর উক্তি থেকে উপরোক্ত সকল প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। অর্থাৎ, আল্লাহ তায়ালা আরবি ভাষায় অথবা কোনো আওয়াজ বা লিখিত অক্ষরের মাধ্যমে নবী রাসূলদের সাথে কথা বলেননি। বরং নবী-রাসূলদের অন্তরে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বাণী ঢেলে দিয়েছেন। এবং নবী-রাসূলরা তাঁদের প্রচলিত ভাষা অনুযায়ী আল্লাহর বাণীকে শব্দ ও অক্ষরে প্রকাশ করেছেন।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আল্লামা জালাল উদ্দিন রূমির বাণী ও কবিতা

ইউরোপ ও অ্যামেরিকা সহ সারাবিশ্বের অমুসলিমরা যে মানুষটির লেখা সবচেয়ে বেশি পড়েন, তিনি মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি। তাঁর ৫ টি বই ও একটি উপদেশ বাণী রয়েছে। ১। মসনবী, (৬ খণ্ড, ২৬০০০ কবিতার লাইন) ২। দিওয়ানে কবির, (৪০০০০ কবিতার লাইন) ৩। ফিহি মা ফিহি, (বিভিন্ন সভা ও মসলিসে দেয়া বক্তব্য) ৪। মাজালিশ-ই শব, (সাতটি বড় বক্তৃতা) ৫। মাকতুবাত, (১৪৭ টি চিঠি) আর একটি উপদেশ রয়েছে। উপদেশটি হলো – "অল্প খাও, স্বল্প ঘুমাও, কম কথা বল। গুনাহ থেকে দূরে থাক, সবসময় কাজ কর। সুখের অনুসন্ধানী মানুষদের থেকে দূরে থাক, এসব মানুষ তোমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাবে। সৎ, ভালো ও সুভাষী মানুষের সাথে থাক। ভালো মানুষ তারা, যাদের দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। আর, ভালো কথা হলো তাই, যা সংক্ষিপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। সকল প্রশংসা এক মাত্র আল্লাহর।" [১৭ ডিসেম্বর রূমির 'শবে আরুস'। শবে আরুস অর্থ দ্বিতীয় জন্মের রাত বা মৃত্যুর রাত]

মাথায় রুমাল দেয়া কি মাদানী হুজুর হবার লক্ষণ? নাকি ইহুদি হবার লক্ষণ?

এক তথাকথিত সালাফী মাদানী হুজুর নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে ভ্রান্ত মনে করেন। অথচ, নিজেই ইহুদিদের মতো মাথায় রুমাল দিয়ে ওয়াজ করেন। মাথায় রুমাল দেয়ার বিরুদ্ধে যেসব সহীহ হাদিস আছে, তা কি তিনি দেখননি? দলীল – ১ يَتْبَعُ الدَّجَّالَ مِنْ يَهُودِ أَصْبَهَانَ، سَبْعُونَ أَلْفًا عَلَيْهِمُ الطَّيَالِسَةُ দাজ্জালের বাহিনীতে ৭০ হাজার ইহুদী থাকবে, যাদের মাথায় চাদর বা রুমাল থাকবে। সহীহ মুসলিম, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ২৯৪৪ দলীল – ২ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَعِيدٍ الخُزَاعِيُّ، حَدَّثَنَا زِيَادُ بْنُ الرَّبِيعِ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ، قَالَ: نَظَرَ أَنَسٌ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَرَأَى طَيَالِسَةً، فَقَالَ: «كَأَنَّهُمُ السَّاعَةَ يَهُودُ خَيْبَرَ» আনাস ইবনু মালিক (রা) জুমার দিনে মসজিদের মধ্যে সমবেত মানুষের দিকে তাকালেন। তিনি অনেকের মাথায় রুমাল দেখতে পান। তখন তিনি বলেন, এরা এখনো ঠিক খাইবারের ইহুদীদের মত। সহীহ বুখারী, মাকতাবায়ে শামেলা, হাদিস নং – ৪২০৮ দলীল – ৩ قال رسول الله – صلى الله عليه وسلم – : ” قال لقمان لابنه وهو يعظه : يا بني إياك والتقنع ، فإنها مخوفة بالليل مذلة بالنهار রাসূল (স) ...

আহলে কোর'আনের কিছু প্রশ্ন ও তার জবাব - ২

মোহাম্মদ Junaid ভাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর। ১) ইমামদেরকে standard মানতে হবে কেন? - ইমামদেরকে আমরা প্লেটো বা এরিস্টটলের মতো জ্ঞানী, স্কলার ও আলেম মনে করি, standard নয়। ২) ওনাদের status কী? - পৃথিবীর হাজার হাজার স্কলারের মাঝে ইমামরাও অন্তর্ভুক্ত। ৩) ওনাদের কি সুসংবদ্ধ চিন্তা ছিল? - জ্বী, উনাদের কাজ-ই ছিলো চিন্তাকে ফ্রেম দেওয়া। ৪) ওনাদের রচনাসমগ্ৰ কি সুলভ? - দুর্ভাগ্য আমাদের। বাংলা ভাষায় উনাদের বই পুস্তক অনুবাদ হয়নি। কিন্তু, উনাদের প্রচুর বই আছে, যা আমরা জানি না। ৫) প্রামাণিকতা প্রশ্নাতীত? - জী। ৬) বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা তো প্রবহমান নদীর মতো। পুরা যুগের কারো পায়রবিতে আটকে থাকতে হবে কেন? - নদী যেমন তার উৎসের সাথে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না, তেমনি আমরাও আমাদের অতীতের সকল জ্ঞানের উৎসের সাথে বাঁধ নির্মাণ করতে চায় না। বরং আমাদের জ্ঞানের উৎসে যাবার রাস্তা খোলা রাখতে চাই। ৭) জ্ঞানের পরিমাপক কী? - একজন মানুষ তার সময়ের কতগুলো সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন, সেটাই তার জ্ঞানের পরিমাপক। ৮) ওনারা কি কিয়ামত দিবসে আমাদের কাজের দায়দায়িত্ব গ্ৰহণ করবেন? - অবশ্যই না। তবে, পৃথিবীকে জানা...